করোনাকাল
প্রকাশিত : ১৬:২৮, ৩ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৬:৫৯, ৩ এপ্রিল ২০২০
মাসুদ করিম- সংগৃহীত
এক
নিউজ ২৪ চ্যানেলে ‘নিউজরুম সংলাপ’ নামের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে আরেকজন অতিথি ছিলেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল ভাই। আলোচনা করোনা ভাইরাস নিয়ে অবশ্যই। আমার বক্তব্য হলো, পৃথিবীতে যুদ্ধ হলে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি আছে। ভূমিকম্প হলে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি আছে। ঘূর্ণিঝড়, সুনামি মোকাবেলার প্রস্তুতি আছে। কিন্তু ভাইরাসের আক্রমন মোকাবেলার প্রস্তুতি নেই কেন? পৃথিবীতে ভাইরাসের আক্রমন এটাই প্রথম নয়। যুগে যুগে মহামারী এসেছে। কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। সে অভিজ্ঞতার পরও বিশ্ব নেতারা ঘৃণার আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে। মানবজাতিকে সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে করোনাভাইরাসের কাছে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ।
দুই
প্রতিষেধক ও ওষুধ আবিস্কার না হওয়ায় চীন অতীত আভিজ্ঞতার আলোকে আক্রান্ত অঞ্চল ও ব্যাক্তিকে আলাদা করে সফল হয়েছে। ফলে হুবাই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে অতি কাছে বেইজিং কিংবা সাংহাই পর্যন্ত ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারেনি। বর্তমানে চীন সীমান্ত বন্ধ রাখলেও কারখানা চালু করেছে। অভ্যন্তরীন পর্যটকদের জন্য মহাপ্রাচীর খুলে দিয়েছে।
তিন
দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করছে। পথে পথে চেকপোষ্ট বসিয়ে কফসহ নমুনা টেস্ট টিউবে নিয়ে ল্যাবে পাঠাচ্ছে। কভিড ১৯ নেগেটিভ হলে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে। পজিটিভ হলে ফোন করে রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিচ্ছে। দেশটিতে ৯৬টি ল্যাবরেটরি রাতদিন কাজ করছে। চারটি কোম্পানি কিট উৎপাদন করছে। এভাবে তারা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে।
চার
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ল্যাব ও কিট সংকটে আছে। তাই লকডাউন এদেশে মানুষকে সুরক্ষার বিকল্প পথ। পরীক্ষার সামর্থও বাড়াতে হবে।
পাঁচ
আমেরিকা ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে। ওইসব দেশে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। এসব দেখে বাংলাদেশে অনেকে ভয়ে কাঁপছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ করোনাভাইরাসকে পরাজিত করতে পারবে। ঘূর্ণিঝড়সহ অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বাংলাদেশের জনগণ পরাজিত করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে গেরিলা কৌশলে হারিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ম্যালেরিয়াসহ নানা জীবাণুর মধ্যেও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সফল হয়েছে। যেখানে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অনেক দেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সৈন্যরা সফল হয়েছে।
ছয়
করোনার পরের বিশ্বে অর্থনৈতিক পুর্নগঠন ও বেকারত্বরোধ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বের অনেক ধনী ও শক্তিশালী দেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে, ছোট ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা দিয়ে এবং রফতানি বাজার দখল করে ভালভাবে টিকে ছিল। এবারও বাংলাদেশ পারবে। ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সরকার থেকে সময় মতো উপযুক্ত কর্মপন্থা জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। (লেখকের ব্যক্তিগত ফেইসবুক প্রফাইল থেকে নেওয়া)
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
এমএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।