করোনা থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন ৮ ‘প’
প্রকাশিত : ১৯:১৫, ৭ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৯:২৬, ৭ এপ্রিল ২০২০
(১) প- তে প্রধানমন্ত্রীঃ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞগণের মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত করোনা মহামারী প্রতিরোধ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা বার বার আপনার মাধ্যমে জানা জাতির ঐকান্তিক প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে দেশবাসীর প্রতি আপনার সম্মোহনী ও শানিত আহ্বানে জনমনে আস্থা সৃষ্টি হবে। মানুষ আশাবাদী হবে। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
দেশবাসীকেও বুঝতে হবে কোভিড-১৯ - বন্যা/ খরা/ জলোচ্ছাসের মতো কোন জাতীয় দুর্যোগ নয়, যে সবই সরকার অতীতের ন্যায় সামাল দিবে। কোভিড-১৯ একটি ভাইরাস, ০১টি জীবাণু। এ জীবাণু যুদ্ধে জয়ী হতে প্রয়োজন বিজ্ঞানী/ বিশেষজ্ঞগণের মতামত/ পরামর্শ ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ। সে মোতাবেক সরকারের নির্দেশনা প্রদান। একই সাথে নির্দেশনা বাস্তবায়নে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণও জরুরী। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরী। সরকারী বেসরকারী সব হাসপাতালে প্রস্তুতি গ্রহণে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স ও ডাক্তারগণের আন্তরিক ও সাহসী অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তাঁদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সুরক্ষা সামগ্রির যোগানসহ স্বাস্থ্যবীমার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বস্ততা তাঁদের প্রত্যাশা। দেশের দুঃসময়ে জাতির শেষ ভরসাস্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা ও সহানুভ’তি আমাদের কাম্য। একইসাথে তাঁর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে চাই আইনী প্রয়োগ- যা কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করবে মর্মে জাতির দৃঢ় বিশ্বাস।
(২) প- তে প্রশিক্ষণঃ অদৃষ্টপূর্ব কোভিড-১৯ মোকাবিলার পূর্ব অভিজ্ঞতা কোন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর নেই। এ জীবাণু যুদ্ধের প্রথম সারির সৈনিক হচ্ছে নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে চিকিৎসা প্রদান পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সসহ ডাক্তারগণ। কাজেই তাঁদের জন্য ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ অতীব জরুরী।
(৩)প- তে পরীক্ষাঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নমুনা পরীক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। অবশ্য ইতোমধ্যে সরকার পরীক্ষার উপর জোর দিয়েছেন। তারপরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান যাদের আরটিপিসিআর করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের সহায়তায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধিপুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
(৪)প- তে পরিচ্ছন্নতাঃ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতায় অংশগ্রহণ প্রত্যেকের প্রধান কর্তব্য। সমগ্র দেশবাসীকে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আমরা পালন করতে পারি “করোনা প্রতিরোধ সপ্তাহ”। করোনা ভাইরাস যেহেতু কোন বস্তুতে সর্বোচ্চ ০৫ দিন কার্যক্ষম থাকে; তাই আমরা ১৭ কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আমাদের ঘরের সব বস্তু- চেয়ার, টেবিল, দরজা, জানালা, জুতা, তালাচাবি ইত্যাদি ও চারপাশ সাবান পানি/ ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দ্বারা ০৫দিন পরিচ্ছন্ন করি তাহলে মোট হবে ১৭০ কোটি কর্মঘন্টা যা দ্বারা দেশবাসী এ মহামারীর হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবে।
(৫)প- তে পারস্পরিক (শারীরিক) দূরত্বঃ শারীরিক দূরত্ব ৩ মিটার মেনে চলা এ সংক্রমণ প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান নির্দেশনা। পৃথিবীর অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে লকডাউন, সাটডাউন করে বিভিন্ন দেশের সরকার জনগণকে ঘরে আটকে রাখতে বাধ্য করছে। যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মানছে তারা সুফল পাচ্ছে। আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় দীর্ঘদিন মানুষকে ঘরে আটকে রাখা কঠিন। তবুও ১৪দিন যদি যথাযথভাবে আমরা জনগণের চলাচল বন্ধ করতে পারি তবে সুফল পাবো। অন্যথায় ঝুঁকি মারাত্মক হবে। কাজেই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া সব পরিবহন, সব কারখানা অন্তত ১৪দিন বন্ধ রাখার বিকল্প নেই। কাঁচা বাজার, মুদি দোকান নির্দিষ্ট স্থানে খোলা থাকবে। সেখান থেকে ভ্যানে করে পাড়ায়-পাড়ায়, গলিতে-গলিতে ০৩ দিন পরপর পর্যায়ক্রমে হোম সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কোন মানুষ কাঁচা বাজারে যেতে পারবে না। গেলেই জরিমানা।
(৬)প- তে প্রণোদনাঃ নিম্নবিত্ত ও কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তায় সরকার ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। তদুপরি দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে ক্ষুদ্র/ মাঝারি/ বড় ব্যবসায়ী/ শিল্প উদ্যোক্তা, খাদ্যশস্য/ ডেইরী/ পোল্ট্রি/ মাছ উৎপাদনকারী সহ সবার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সময়োচিত জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই। একইসাথে দেশের বিত্তবানদের ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসহায়তায় এগিয়ে আসাও মানবিক কর্তব্য।
(৭)প- তে পুষ্টি নিরাপত্তাঃ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। এজন্য পুষ্টিকর খাদ্য- দুধ, মাংস, ডিম, মাছ, ফল, সবজির উৎপাদন ও যোগান নিশ্চিতসহ বাড়ী বাড়ী সরবরাহ প্রদান একান্ত প্রয়োজন। ত্রাণ গ্রহীতারাও যাতে এগুলো ক্রয় করতে পারে সেজন্য ত্রাণের সাথে নগদ অর্থ প্রদান নিঃসন্দেহে মহতী উদ্যোগ।
(৮)প- তে প্রশাসন/ প্রতিনিধি (সিভিল, সেনা, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি): সরকারের নির্দেশনা ও ত্রাণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিভিল, সেনা, পুলিশ প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিগণের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দেশের দুঃসময়ে তাঁদের অবদান জাতি স্মরণ করবে। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে সমন্বয় খুবই প্রয়োজন। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে/ পাড়ায়-পাড়ায়/ গ্রামে-গ্রামে/ রাস্তা ভিত্তিক করোনা সাভিলেন্স/ নজরদারী কমিটি গঠন সময়ের দাবী। সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা, আইসোলেশন, পরিবারের অন্যদের কোয়ারেনটাইনে রাখার ব্যবস্থা/ দেখভাল করবেন সার্ভিলেন্স কমিটি (স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে এ কমিটি)। আইইডিসিআর এর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সার্ভিলেন্স কমিটি জেলা/ উপজেলা পর্যায়ের সার্ভিলেন্স কার্যক্রম মনিটরিং করবেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। তাঁরা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ পূর্বক ব্যবস্তা গ্রহণের সুপারিশ করবেন।
উপর্যুক্ত পদক্ষেপ সমূহ গ্রহণের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আমারা সফল হবো মর্মে দেশবাসী আশাবাদী।
লেখক: উপ সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মহামারী এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণে পূর্বাভিজ্ঞ।
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।