বৃত্তিসহ দেড় লাখ তরুণকে প্রশিক্ষণ
প্রকাশিত : ১৮:০৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৯:১৩, ৫ মার্চ ২০১৮
দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মর্যাদাসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট (স্টেপ) প্রজেক্ট শীর্ষক এই প্রকল্পের অধীনে কারিগরি শিক্ষার প্রসার, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং এর মাধ্যমে দারিদ্র ও বেকারত্ব দূর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক দেশের দেড় লাখ তরুণকে বৃত্তিসহ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৯বছর মেয়াদী (জুলাই ২০০৯ থেকে ২০১৯) এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব ব্যাংক ও কানাডা। ১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর।
প্রতিষ্ঠানটি তিন ধরণের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ ৬ মাস মেয়াদী, ডিপ্লোমা কোর্স চার বছর মেয়াদী এবং তিন দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে, যেটিকে অভিজ্ঞতা সনদও বলা হয়ে থাকে।
স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ
৬ মাস মেয়াদী স্বপ্লমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে ৭২টি প্রতিষ্ঠানের আওতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার তরুণ স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুবিধা পাবে। গত ২০১০ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৬ জনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিদের প্রশিক্ষণও শুরু হচ্ছে।
এই প্রকল্পের আওতায় মোট ১০হাজার শিক্ষকদের বিভিন্ন মেয়াদি বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৬৩৫ জন শিক্ষিকের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।
যে সব বিষয় প্রশিক্ষণ
সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ৬৪টি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (কনস্ট্রাকশন), মোটরসাইকেল সার্ভিসিং, প্লাম্বিং, টেইলারিং অ্যান্ড ড্রেস মেকিং, ওয়েল্ডিং, ব্লক-বাটিক অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং, সুইং মেশিন অপারেশন, আইটি সাপোর্ট, সোলার ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, গ্রাফিক ডিজাইন ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিংসহ ৩২ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি করা হয়।
আবেদনের যোগ্যতা
অষ্টম শ্রেনি পাশ যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন করা হবে।
যেভাবে আবেদন
আগ্রহী প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট আরপিএল অ্যাসেসমেন্ট কেন্দ্রগুলো থেকে বা প্রকল্পের ওয়েবসাইট (www.step-dte.gov.bd) থেকে নিবন্ধন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। নিবন্ধন ফরমে প্রার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, কর্মস্থলের ঠিকানা, পদবি, পছন্দের বিষয়, জন্মতারিখ ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। ফরমের সঙ্গে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র, পরীক্ষা পাসের সনদসহ লিখিত আবেদনপত্র প্রার্থীর নিকটস্থ বা পছন্দের কেন্দ্রের অধ্যক্ষ বরাবর জমা দিতে হবে।
বৃত্তি
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা যাচাই করে প্রতি মাসে স্বপ্লমেয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য মাসে ৭শ’ টাকা হারে বৃত্তি দেওয়া হবে। মেয়েদের জন্য শতভাগ বৃত্তি প্রদান করা হবে। ছেলেদের জন্য শতকরা ৫০ শতাংশ হারে বৃত্তি প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৬ জন প্রশিক্ষণনার্থীর মধ্যে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। কোর্সশেষে উত্তীর্ণদের দেওয়া হবে সনদ।
উদ্যোক্তারা যা বললেন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেপের যোগাযোগ পরামর্শক মো. জিল্লুর রহমান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, দেশ-বিদেশে এখন কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তির অনেক চাহিদা আছে। চাইলে বেকার তরুণ তরুণীরা এই প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি বাজারে নিজেকে যাচাই করতে পারে। এখানকার প্রশিক্ষণ একজন কর্মীকে দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। সেই সঙ্গে কোর্সশেষে যে সনদ দেওয়া হবে সেটি দেশ-বিদেশের বাজারে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও খুব সহায়ক হবে। এছাড়া কেউ চাইলে নিজে উদ্যোগী হয়েও ব্যবসা করে ভালো উপার্জন করতে পারবেন। তিনি জানান, দেশের বিপুল সংখ্যাক জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজ লাগতে সরকার এই প্রকল্পে হাতে নিয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়া লক্ষে কাজ করছে সরকার।
বিস্তারিত জানতে
স্টেপের ২০টি আরপিএল অ্যাসেসমেন্ট কেন্দ্রসহ বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (স্টেপ), কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এফ-৪/বি, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা ১২০৭ এই ঠিকানায় অথবা ফোন করতে পারেন ০১৯৯২-০০৭১৩৭ এই নম্বরে। এ ছাড়া www.step-dte.gov.bd এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।
টিআর / এআর /
আরও পড়ুন