ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড
দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে
প্রকাশিত : ২৩:৪১, ২৭ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১২:২৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৮
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড হল কোনো দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার, অর্থাৎ ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার আধিক্য। যখন কোনো দেশে এই কর্মক্ষম জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি থাকে, তখন ওই দেশ ডেমোগ্রাফিক বোনাসকালে অবস্থান করছে বলে ধরা হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৪ সালে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (জনসংখ্যার বোনাসকাল)-এ প্রবেশ করছে। সঠিক নীতি প্রণয়নের এ সুযোগ কাজে লাগাতে রাষ্ট্রকে আরও সহায়ক হওয়া প্রয়োজন। উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে বাংলাদেশের এ সুযোগ বিফলে যাবে। এমনকি বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশে। যুবকদের শক্তি উৎপাদনশীল কাজে না লাগালে বা লাগাতে ব্যর্থ হলে তা ধ্বংসাত্মক পথে ধাবিত হতে পারে। এমনটাই মনে করেন সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। সম্প্রতি একুশে টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকার তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: জনসংখ্যার বোনাসকাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) অতিবাহিত করছে দেশ। অথচ সরকারি হিসেবে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি। আমরা দেশের এই বিশাল কর্মক্ষম জনশক্তিকে কেন কাজে লাগাতে পারছি না? কেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রি নেওয়ার পরও চাকরি মিলছে না? মূল সমস্যা ও সমাধান কোথায়?
সৈয়দ আবুল মকসুদ: সরকারে সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি নাই যে কোনো একজন শিক্ষার্থী অর্নাস ও মাস্টার পাশ করার পর তাকে চাকরি দেওয়া হবে। দেশে এমন কোন বিধান নেই যে পড়াশুনা শেষ করলেই সরকার চাকরি দিতে বাধ্য থাকবে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সঠিকভাবে কাজে লাগতে বাজারে চাকরির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। একজন শিক্ষার্থীর পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকরিই করতে হবে-এমন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থী ব্যবসায় করতে পারে। চাইলে সে উদ্যোক্তা হতে পারে। তবে ব্যবসা ও উদ্যোক্তা তৈরি করা জন্য সব সুবিধা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো শিক্ষার্থী দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে না। শিক্ষা থাকলেও স্কিলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে পড়াশুনা শেষে অনেকের চাকরি মিলছে না। দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারিভাবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মানসম্মত ও বাজারমুখী শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে অনেক শিক্ষার্থী বের হচ্ছে। কিন্তু তার চাকরি পাচ্ছে না। অনেকেই মেডিক্যালে পড়াশুনা করে ব্যবসা করতে হচ্ছে। তাহলে তার মেডিক্যালে পড়া দরকার ছিল কি? আমার মনে হয় মানুষের চাহিদার আলোকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সার্বিক ভাবে এসকল সমস্যা বিবেচনা করে সরকারে একটি বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। না হলে সমস্যা বড় আকার ধারণ করবে। কোনো প্রকারের পরিকল্পনা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা তৈরি হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়চ্ছে সনদনির্ভর।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: জনসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে কি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে ?
সৈয়দ আবুল মকসুদ: বিপুল জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগতে হলে, তাদের দক্ষ করে তুলতে হবে। আগে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করতে হবে। চাকরির বাজারের চাহিদার আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। মূল সমস্যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের দক্ষতা বাড়ছে না। শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছি। বিপুল জনগোষ্ঠীকে তথ্যপ্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এবং তাদের সঠিক কর্মংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য একপক্ষ আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক বলে আপনি মনে করেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সামী ৩০ বছর আছে। আমার মতে এটা ঠিক আছে। আর বাড়ানো উচিত হবে না। চাকরিতে প্রবেশরসীমা বাড়ালে আরও অনেক সমস্যা তৈরি হবে। প্রতিবছর আমাদের দেশে যে পরিমান শিক্ষার্থী বের হচ্ছে এদেরকে সঠিকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পাচ্ছি না। এরপরে যদি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়, তাহলে সরকারি চাকরির জন্য অনেক শিক্ষার্থী তাদের জীবনের অর্ধেক সময় এখানে ব্যয় করবে। ফলে দেশের অর্থনীতি আরও হুমকির মুখে পড়বে।
একুশে টিভি অনলাইন: আমাদের দেশে কোটিংয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে শিক্ষাকে কিভাবে নিরেট সেবায় রূপান্তর করা যায়?
সৈয়দ আবুল মকসুদ: শিক্ষা সবসময়ই সেবা। এটা কোনো বাণিজ্যের বিষয় না। এটা হোক সরকারি পর্যায়ের বা হোক বেসরকারি পর্যায়ের। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো খারাপ কিছু না। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো করছে। কিন্তু কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তার সেবার নামে বাণিজ্য করছে। এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকও মনে করছেন অন্যান্য ব্যবসার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও একটা ব্যবসা। তাদেরকে শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করার মন মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ দিয়ে ভরিয়ে দিলে দেশের কোনো লাভ হবে না যদি না মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: স্যার, আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ আবুল মকসুদ: একুশে পরিবারের প্রতি শুভ কামনা রইল।
টিকে
আরও পড়ুন