শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে জোর উদ্যোগ শুরু
প্রকাশিত : ১৭:০৫, ১১ নভেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৭:০৯, ১১ নভেম্বর ২০২৪
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পালিয়ে যান দলটির শীর্ষ অনেক নেতাও। সারাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার নামে প্রায় তিন শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা হয়েছে তার সরকারের এমপি, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে। দাবি উঠেছে শেখ হাসিনা ও তার দলের শীর্ষ নেতোদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার।
এমতাবস্থায়, গতকাল রবিবার (১০ই নভেম্বর) আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, জুলাই-অগস্ট মাসে গণহত্যা চালিয়ে যারা পালিয়ে আছেন, তাদের ধরার জন্য আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করতে যাচ্ছি। এটি খুব দ্রুত হবে। তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন, আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ করব।
মূলত তারপরই ধারণা করা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফেরানোর জন্য ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও মি. আসিফ শেখ হাসিনার নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি।তবে জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময়ের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে শেখ হাসিনার বিষয়ে গত অক্টোবরে ভারত জানিয়েছিল, হাসিনা ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ভারতে এসেছেন এবং এখানেই আছেন। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত হাসিনার ভারত ছাড়ার কোনও তথ্য জানা যায়নি।
যদি সত্যিই ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিস জারি করে অন্তবর্তীকালীন সরকার,তার মানে ইন্টারপোলের সদস্য প্রতিটি রাষ্ট্রকে হাসিনা সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হবে। ইন্টারপোলের একাধিক রঙের নোটিস রয়েছে। বেগুনি, কমলা, সবুজ, কালো, নীল, হলুদ ও লাল। এক এক রঙের নোটিসের অর্থ এক এক ধরনের। পলাতক কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফেরানোর জন্য ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারি করা হয়। ইন্টারপোল রেড কর্নার নোটিস জারি করলে সদস্য রাষ্ট্রগুলির তদন্তকারী সংস্থা নিজ নিজ দেশে অভিযুক্তের খোঁজ চালায়।তার মানে এমনটি হলে ভারত ও তখন হাসিনাকে ফেরত দিতে চাপে থাকবে।
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর তার বিরুদ্ধে শতাধিক হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। উল্লেখযোগ্য মামলার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৩৩টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে ।
এর মধ্যে ১৯৮টি মামলায় খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। গত ১৭ অক্টোবর জারি হয়েছিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তারপর থেকে এত দিন পর্যন্ত হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে সেই অর্থে কোনও পদক্ষেপ করেনি অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকার।
অক্টোবরের শেষের দিকে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ফিনানশিয়াল টাইমস্’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও ইউনূস তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথা পরিষ্কার করেছেন। যেখানে তিনি বলেন এখনই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর কোনও ভাবনা নেই তাদের। প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেছিলেন, হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব।আদালতের রায়ের আগে এ ধরনের কোনও পদক্ষেপ করা হবে না বলেও ওই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ইউনূস।
উল্লেখ্য গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ’-এর অভিযোগে দু’টি মামলার প্রেক্ষিতে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বর হাসিনা-সহ সব অভিযুক্তকে ট্রাইবুনালে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।
এসএস//
আরও পড়ুন