খালেদার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দায় সরকারের : বিএনপি
প্রকাশিত : ১৩:২১, ২১ এপ্রিল ২০১৮
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তার সম্পূর্ণ দায় সরকারকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য কারাগারে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। আর তাতে দলের পাশাপাশি সারা দেশের মানুষ উৎকণ্ঠিত। এসময় তিনি অবিলম্বে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা সংবাদপত্র সূত্রে জানতে পেরেছি, সরকারের গঠিত একটি মেডিকেল টিম খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে প্রফেসর মালিহার রশীদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি মেডিকেল টিম তাঁকে দেখতে যান। আমরা আরো জানতে পেরেছি, তিনি বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে এক্যুইট রিউমেটিক আর্থারাইটিস তাঁকে বেশ কষ্ট দিচ্ছে। ডাক্তাররা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার পছন্দনীয় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সুপারিশও করেছেন।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, এখনো সময় আছে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে তাঁর পছন্দনীয় চিকিৎসক দ্বারা এবং হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন এবং সারা দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। অন্যথায় দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হবে। এ বিষয়ে নোংরা রাজনীতি না করে সোজা পথে তাঁকে মুক্তি দিয়ে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল তাঁর পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও দেখা করতে পারেননি। তাদের জানানো হয়েছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার আগের দিন আমি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং নজরুল ইসলাম খানকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ এর জন্য সুস্পষ্টভাবে কোনো কারণ দেখানো হয়নি। জেলার ভেতর থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে মির্জা আব্বাসকে জানান যে, আজ সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় ১০ দিন যাবৎ পরিবারের সদস্য এবং দল দেশনেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পায়নি। এতে করে উদ্বেগ আরো বেড়েছে।
বিশেষ করে কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা এবং এমআরআই পরীক্ষা খালেদা জিয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। অথচ এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত স্পষ্টভাবে কোনো বক্তব্য আমাদের দেয়নি বা জাতির সামনে তুলে ধরেনি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, `সরকারি ডাক্তারদের সুপারিশকৃত অর্থোপেডিক বেড তাঁকে সরবরাহ না করা, ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা না করানো, দলের নেতারা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া অত্যন্ত হীনউদ্দেশ্যমূলক। সরকারের মন্ত্রীদের এ বিষয়ে মন্তব্য এবং কটূক্তি সব শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা যখন ‘হায়াত-মওত আল্লাহর হাতে’ বলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে রাজনীতি করছেন তখন এটা স্পষ্ট তারা দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চান। তাঁকে রাজনীতি এবং আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান।
খালেদা জিয়াকে ‘সাজানো মামলায়’ সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাঁকে এবং তাঁর দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া- এমন অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘গণবিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সরকারের ২০১৪ এর মতো একতরফা নির্বাচনের প্রহসনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতা দখলই হচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্য। আইনের বিধানকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দেশনেত্রীকে জামিন না দেওয়ায় কারাগারে তাঁর প্রাপ্য সুবিধা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা, সুচিকিৎসা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা- এটা অমানবিক। যে কারাগারে, যে কক্ষে তাঁকে রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থী।
মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘এত ভয় কেন? দেশনেত্রীকে মাঠে নামতে দিন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দিন, যথেচ্ছ পুলিশ ব্যবহার বন্ধ করুন- দেখুন আপনারা কোথায় দাঁড়াতে পারেন। রাজনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস আপনাদের নেই। আপনারা এখন জনগণ থেকে এ কারণেই বিচ্ছিন্ন- তাই বলপ্রয়োগ করে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করতে চান।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
/এআর /
আরও পড়ুন