রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন খালেদা জিয়া
প্রকাশিত : ১৫:৫৩, ২৯ মে ২০২০
খালেদা জিয়া
দল ও জোটের নেতাদের হতাশ না হয়ে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেইসঙ্গে দেশ ও দলের 'সুদিন' ফিরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। এরশাদ সরকারের শাসনামলের 'ক্রান্তিকাল' পেরিয়ে ক্ষমতায় আসার কথা স্মরণ করে শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কালো মেঘ একদিন কেটে যাবে। একইসঙ্গে সুস্থ হলে আবার তিনি দলের হাল ধরবেন বলেও জানিয়েছেন।
দীর্ঘ আড়াই বছর পর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৫ মে (ঈদের দিন) দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সাক্ষাৎকালে আন্দোলনের মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে না পারার ব্যর্থতায় অনুতপ্ত হওয়ার কথা বলেন শীর্ষ নেতারা। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, 'কে কী বলেছেন, কী করেছেন- সবই জানি। জেলে থেকেও সব খবরই পেয়েছি আমি।'
এদিকে, দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরদিন মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের ঘটনায় অনেক দিন পর রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা আলোচনার আবহ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দল ও জোটের নেতাদের এ সাক্ষাৎ বা বৈঠকে পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে মতবিনিময়ের সুযোগ হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যা খুবই স্বাভাবিক। খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পেলে হয়তো ধীরে ধীরে বিএনপি তার সমমনাদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে। অবশ্য সরাসরি রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়ার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা দেখতে এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে শীর্ষ নেতারা তার বাসভবনে গেছেন। এ সময় দেশে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপি নেতাকর্মীরা দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়া। এই সংকটময় মুহূর্তে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে খালেদা জিয়ার মনোবল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত বলেই জানিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারক একাধিক সূত্র। সূত্রমতে, ভবিষ্যতে সুদিন ফিরে আসার ব্যাপারে অনেক বেশি আশাবাদী তিনি। নেতাদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি সাক্ষাৎ করতে গেলে ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে আবারও আগের মতো দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
তবে দলের শীর্ষ নেতাদের ভূমিকায় তিনি সন্তুষ্ট নন বলেই জানা গেছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর এ সাক্ষাৎকালে দলের নীতিনির্ধারক নেতারা যা নিয়ে কিছুটা বিব্রতও ছিলেন। প্রসঙ্গত, কারাবন্দি হওয়ার আগে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই খালেদা জিয়াকে আইনি লড়াই এবং কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে পারবেন বলে জোরালো বক্তব্য ও আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এসব শীর্ষ নেতা। কিন্তু আড়াই বছরে কোনোভাবেই সফল হননি তারা।
সাক্ষাতের একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে নিজেদের ব্যর্থতার কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করেন শীর্ষ নেতারা। তাদের ব্যর্থতার স্বীকারোক্তির সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়া কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় নেতারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যান। সরকারের কঠোর অবস্থানসহ বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেন তারা।
ভবিষ্যতের ব্যাপারে শীর্ষ নেতাদের আশ্বস্ত করে বিএনপি প্রধান বলেন, সবাই যার যার অবস্থান থেকে দেশ ও দলের জন্য কাজ করুন। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই খারাপ সময় থাকবে না। এরশাদের শাসনামলের নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির পরও বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে; ক্ষমতায় এসেছে। যারা তার সঙ্গে আঁতাত করেছিল- জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
'শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে' দলীয় প্রধানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান টুকু।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয় বিএনপির প্রধানকে। এরপর স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ।
এনএস/
আরও পড়ুন