সারাদেশে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি ছাত্রলীগের
প্রকাশিত : ০৯:৫৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
রোববার (২৭সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি অভিযুক্তদের এবং তাদের পক্ষে যারা ‘সাফাই গায়’ তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সমাবেশ থেকে সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ, সাভার, খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ডাকসু সাবেক ভিপি নুরুল হক ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার সর্বোচ্চ বিচার দাবি করা হয়৷ জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় তারা।
এদিকে সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের কেউ ‘ছাত্রলীগের নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘সিলেটের এমসি কলেজে যারা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কেউ ছাত্রলীগ হতে পারে না। আপনারা জানেন, এই ঘটনায় সিলেটের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের জন্য লজ্জার যে আমাদের বোন ধর্ষিত হয়েছে যাদের দ্বারা তাদের সংগঠনের নেতারাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মানসিক বিকারগ্রস্ত শিক্ষার্থী সেই ধর্ষকদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ পুরোটাই মানসিক বিকারগ্রস্ততায় ভুগছে। তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন। এরা নিজেরা বাঁচার জন্য অপরাধ করে দায় চাপাচ্ছে ছাত্রলীগের উপর। আমরা দেখেছি এই অপরাধীদের পক্ষে সুশীল সমাজের একটি অংশ সাফাই গাচ্ছেন। এই ধর্ষকের পক্ষে যারা কথা বলছেন তাদের এবং ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার না করলে সারাদেশের ছাত্র-ছাত্রী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
ধর্ষকদের দেখা মাত্র গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে নাটকবাজ আখ্যা দিয়ে জয় বলেন, নুর গুজবের সহায়তা নিয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর দ্বারা তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মর্যাদাহানি করেছেন।
সভায় বক্তারা দাবি করেন, গত ১০- ১২ বছর ধরে সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কার্যক্রম নেই। তাই সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের সাথে ছাত্রলীগের নাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান জয় বলেন, ‘ধর্ষকের কোনো দল নেই। তারা কুলাঙ্গার। আপন ভাই ভাইকেও খুন করে। তার দায়ও কি ছাত্রলীগ নেবে?’ ধর্ষক যে কেউ হতে পারে। ক্ষমতাধর কিংবা জনপ্রিয়, তাকে কোন ছত্রছায়ায় বাঁচিয়ে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ যেন ধর্ষকের অভায়ারণ্য হয়ে উঠতে না পারে সে জন্য এর কঠোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ছাত্রলীগ সর্বদা ধর্ষণের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে এসেছে। যেই বোন তাদের আন্দোলনের নিজের আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দিয়েছে, রান্না করে খাইয়েছে সেই বোনকেই ধর্ষণ করেছে সংগঠনের শীর্ষ নেতা। এর মাধ্যমে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই ধর্ষণ করেছে।
সমাবেশ সঞ্চলনার দায়িত্বে থাকা ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন ঢাবি ছাত্রীর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের যে বোন ধর্ষিত হয়েছেন তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চির উন্নত মম শীর। ধর্ষণের মামলার রাজনৈতিক মোড়ক যারা দিয়েছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। পপুলিস্ট প্রোপাগান্ডা দিয়ে যারা নির্যাতিতার আর্তনাদকে ঢেকে দিতে চায় তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ঢাকা-সিলেট-খাগড়াছড়িতে ঘটা সকল ধরনের ধর্ষণের বিচার করতে হবে।
এমবি//
আরও পড়ুন