‘সুখী, সমৃদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন শেখ মণি’
প্রকাশিত : ২২:২৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ২২:২৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ভ্রাম্যমান চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
এছাড়া সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি’র ৮৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ কর্তৃক আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার জন্য আমাদের দেশের কৃতি সন্তান, মেধাবী প্রফেসর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিককে বেছে বেছে ঘরে ঘরে ঢুকে তাদেরকে তুলে নিয়ে নির্মম দুর্বিসহ অত্যাচার-যুলুম করে হত্যা করা হয়। আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সকল শহীদকে ও সহানুভূতি জানাই তাদের পরিবারের প্রতি। আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি হাজার বছরের অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যার নেতৃত্বে ৯ মাসের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমি আরও শ্রদ্ধা জানাই ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে আজকের এই বিজয় অর্জিত হয়েছিল। আমি আরও শ্রদ্ধা জানাই আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি ও আমার মা শহীদ আরজু মণিকে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু শব্দটি এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছাড়া আমরা স্বাধীনতা কল্পনা করতে পারি না। তাঁর ২৩ বছরের সংগ্রাম, জেল-যুলুম, অত্যাচার আর নির্যাতন সহ্য করে তিনি আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়ে বাঙালি জাতির এই বিজয় নিয়ে এসেছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর যে ত্যাগ তা কোন ভাষায় প্রকাশ বা সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব না। স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলার অধিকার আদায়ে সেটা তিনি ছয় দফার মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন এবং বাংলার তরুণ-যুবসমাজ ছয় দফাকে বুকে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে, ’৭০-এর নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে।
তার মতে, তিনি লড়েছিলেন শুধু একটি দেশ বা মানচিত্রের জন্য না, তিনি লড়েছিলেন বাঙালি কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর সাহিত্যের উন্মেষ বিকাশের জন্য। তিনি জানতেন বাঙালির সাহিত্য একটি পরিচয় আছে একটি ঐতিহ্য আছে, তিনি লড়েছিলেন সেই পরিচয় আর ঐতিহ্যের জন্য। তার সেই লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সাল থেকে যখন বাংলা ভাষার উপর প্রথম আঘাত করা হয়েছিল। শুধু আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ বেঁচে থাকার জন্য, বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ সাধণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যকীয়। আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি তার মধ্যে মহান বিজয় দিবস ও ডিসেম্বর মাস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ভ্রাম্যমান চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অন্যতম।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশব্যাপী শীতবস্ত্র বিতরণ, খাদ্য বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গতকালই আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমি আহ্বান জানাবো বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সকল ইউনিটকে যে, আপনারা সততা, শৃঙ্খলার সাথে আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করবেন। চলচ্চিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী মাধ্যম। আমাদের চলচ্চিত্রের একটি ঐতিহ্য আছে। আপনাদের নেতা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের ওপর পত্রিকা “সাপ্তাহিক সিনেমা” পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটা বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা যা সিনেমার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন সংস্কৃতিমনা, তিনি বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি কালচারের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন এবং সেই কারণে তিনি বিশ্বাস করতেন বাংলার সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে, বাংলার সংস্কৃতিতে যুবকদের জন্য যুব শক্তি হিসেবে রূপান্তরিত করার জন্য বাংলার সংস্কৃতি বিশেষ করে চলচ্চিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাবার সাথে আমারও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন কিছু স্মৃতি আছে। তিনি আমাদের সিনেমা দেখতে নিয়ে যেতেন। বিভিন্ন কালচারাল বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। আমি মনে করি আমাদের সংস্কৃতি বা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন দরকার কারণ এর ভিতরে আমাদের পরিচয় নিহিত রয়েছে।
এছাড়াও তিনি যুবলীগের প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি’র ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণ ও উত্তর কর্তৃক আয়োজিত মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার পিতা আপনাদের নেতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি।
এসি
আরও পড়ুন