ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ‘তৃতীয় পক্ষের হাত’ দেখছে ১৪ দল
প্রকাশিত : ২২:৩৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৮:৪৮, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দেয়ার বিষয়টিকে দেশটির ‘ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখছে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।
একইসঙ্গে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরাতে ‘তৃতীয় পক্ষের হাত’ রয়েছে দাবি করে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার এবং বন্ধুদেশগুলোর কাছে সব বিষয়ে ‘সঠিক তথ্য’ তুলে ধরার পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে জোটের নেতারা।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় জোটের নেতারা এসব কথা বলেন।
জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সারাবিশ্ব যখন জঙ্গিবাদ আলোড়িত একটি বিষয়, সেই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হয়েছে। জঙ্গি নির্মূলে যেই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে সেই সংস্থাকে আঘাত করা হচ্ছে কেন আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি বলেন, এখানে তৃতীয় কোনো শক্তি আমাদের সম্পর্কের মধ্যেই ফাটল ধরানো বা এই ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই দেশের জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়াস আছে কি না বা তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে কি না? যে বাহিনী নারী পাচার রোধ, মাদক চোরচালানরোধসহ জঙ্গিবাদ নির্মূলে বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেছে তাদের বিষয়ে কেন এমন সিদ্ধান্ত। এই বিষয়ে তলিয়ে দেখা উচিত। তাদের সিদ্ধান্ত বদলানো উচিত।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের সরকারকে পছন্দ না করেন বা তার ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার পরিবর্তন করতে চান, তখন তাদের ওপর বিভিন্ন দোষারোপ করেন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে পিছিয়ে গেছে। বাইডেন কিন্তু ঘোষণাই দিয়েছে সে বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরতে চায়। এজন্য বিভিন্ন দেশকে তাদের বলয়ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। এই অঞ্চলেও তারা প্রভাববলয় সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। গণতন্ত্রের সম্মেলনে দাওয়াত না দেয়া সেই ভূরাজনীতির কাজ করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার নিয়ে এতো কথা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার কি? সেখানে বর্ণ-লিঙ্গ বৈষম্যও প্রকট। সেখানকার জনগণ লড়াই করছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র যখন মানবাধিকারের কথা বলে বিশ্ব তখন তা বিশ্বাস করে না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এই বিজয়ের মাসে যুক্তরাষ্ট্র কতিপয় উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশধিকবারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এটি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংবিধানের বিধান সমুন্নত রেখেই র্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে থাকে। র্যাব পুলিশসহ সব বাহিনীর বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেরও যদি বাহিনীর কোনো সদস্যই বিধান ও আইনের বাইরে গিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড করে তাকে সাজা দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যাকান্ডের সঙ্গে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বিচারে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভূরাজনীতির হিসাব-নিকাশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী বাংলাদেশ তার স্বকীয়তা থেকে সরে আসবে না এবং সব ধরনের জোটের বাইরে অবস্থান করেই তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যে শক্তি মানতে পারেনি, সেই শক্তি এই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে আমাদের আঘাত করার চেষ্টা করছে। আজকে বাংলাদেশে যে বাহিনীটি দেশের আইনশৃঙ্খলা ও জঙ্গিবাদী নির্মুলে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে তাদের আঘাত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উস্কে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে, সেই সময়ে আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত দূরভিসন্ধি এবং অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। একাত্তরে যারা আমাদের বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি, সেই শক্তি শেখ হাসিনার উন্নয়নকে মেনে নিতে পারছে না।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীফ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজা আহম্মেদ মুক্তা, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহবায়ক ডা. ওয়াজেদ ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, বাসদের আহবায়ক রেজাউর রশীদ খান প্রমুখ।
এসি
আরও পড়ুন