শেখ হাসিনার মুক্তিতেই ফিরেছিল গণতন্ত্র
প্রকাশিত : ০৮:৩৬, ১১ জুন ২০২২ | আপডেট: ১১:৪৮, ১১ জুন ২০২২
এগারো জুন দিনটি এলেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বার বার ফিরে আসে। এই দিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই সময় থেকে আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে।
২০০৮ সালের ১১ জুন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মিথ্যা মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি নেতৃত্বধীন জোট সরকার যখন একতরফা নির্বাচন করার লক্ষ্যে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নিজেদের লোক বসিয়ে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে পাঁয়তারা করে, তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণআন্দোলন করে ভোটাধিকার রক্ষা করে বাংলাদেশের জনগণ।
শেখ হাসিনার লক্ষ্য ছিল নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। এজন্য তিনি যে আন্দোলন করেছিলেন, সেই আন্দোলনের ফসল ১/১১ সরকার। অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেয়াই তাদের দায়িত্ব ছিল।
কিন্তু তারা ক্ষমতার লোভে পড়ে নির্বাচন দিতে অস্বীকার করে। দুই বছরের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচনকে অনিশ্চিয়তার মুখে ঠেলে দেয়। দেশে ঘোষণা করে জরুরি অবস্থা। তাদের ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখতে জরুরি অবস্থার অজুহাত দেখিয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ, দুনীর্তির মিথ্যা অভিযোগে রাজনীতিবিদদের গণহারে গ্রেফতার ও চরিত্রহননের চেষ্টা করা হয়। জনগণের কাছে রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে বিতর্কিত করতে একের পর এক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। দেশের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের একে একে গ্রেফতার করা হয়।
যে শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ক্ষমতা নিয়ে তারাই তাকে প্রধান টার্গেটে পরিণত করে। কারণ শেখ হাসিনাকে সরানো না গেলে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যাবেনা, সেটা তারা বুঝে গিয়েছিল। এজন্যই শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলা। দেয়া হয় একাধিক চাঁদাবাজির মামলা। মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা এবং নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়াই সেই সরকারের লক্ষ্য হয়ে ওঠে। সরকার জানত, শেখ হাসিনা ডাক দিলে লক্ষ লক্ষ কর্মী মাঠে নেমে পড়বে। তখন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে পারিবারিক সফর শেষে দেশে ফিরে আসতে চাইলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, সকল ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু দেশে ফেরার দু-মাস পর ১৬ জুলাই বিনা পরোয়ানায় তাকে নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দী করে রাখা হয়।
গ্রেফতারের পর একটার পর একটা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেকোনো মূল্যে তাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণে ওঠে পড়ে লাগে। তাদের একমাত্র টার্গেট- শেখ হাসিনাকে যেকোনোভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। সেজন্য পরিকল্পনামাফিক প্রথমে দেশের বাইরে রাখার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সেটা যখন সফল হয়নি। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা, জনগণের কাছে দুর্নীতিবাজ সাজিয়ে জনগণ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়।
কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। সে সময় চিকিৎসার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার মুক্তির জোরালো দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠন ও দেশবাসীর আন্দোলন, আপসহীন মনোভাব এবং আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের পথ বেছে নেয়। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দেয়। অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং উপায়ন্তর না দেখে ২০০৮ সালের ১১ জুন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
মুক্তি পেয়েই শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এরপর ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন পান তিনি।
আর এই মুক্তির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছিল তার গণতন্ত্রকে। ফিরে পেয়েছিল স্বাভাবিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেই থেকে টানা চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
শেখ হাসিনা শুধু ১/১১ সময়ই অন্ধকার পথ পার করেননি। জীবনের প্রতিটি লড়াইয়ে তিনি কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন। পিতা বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে অসম্ভবকে সম্ভব করেই আজকের অবস্থানে এসেছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের জনগণের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা', আওয়ামী কর্মীদের কাছে ‘প্রিয় আপা' আর বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে এক অপার বিস্ময়। তিনি শান্তি, সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশের রূপকার।
এএইচএস/ এসএ/
আরও পড়ুন