ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিবেকের তারণায় দগ্ধ হয়ে কী ক্ষমা চাইলেন একে খন্দকার?

প্রকাশিত : ২৩:৫৫, ৩ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১০:৩১, ৪ জুন ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

সাবেক মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। বইটির ৩২ নাম্বার পৃষ্ঠায় লেখা ছিল বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ডাক দিয়ে বলেন, ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’। এরপর পাঁচ বছর পর গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এটি ভুল ছিলো উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়েছেন জাতির কাছে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন,‘বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মার কাছে ও জাতির কাছে এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’ যদি তিনি বিবেকের দহনেই ক্ষমা চেয়ে থাকেন তাহলে কেন এতদিন পরে? এমন প্রশ্ন এখন সবত্র।

এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর পঁচাত্তরের মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডের পর তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান। জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ওই সরকারকে হটিয়ে এরশাদ ক্ষমতায় এলে এ কে খন্দকার যোগ দেন তার সঙ্গে। কিছুদিন পর তিনি এরশাদের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। আবার এরশাদের পতনের পর তার মন্ত্রীদের প্রায় সবাই কারাগারে গেলেও বাইরেই ছিলেন তিনি।

পরে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেয়ে যান আওয়ামী লীগের টিকিট। সেসময় জয় লাভ করে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সরকারেও তিনি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রায় সব দলের সব সরকারের সময়েই সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এ কে খন্দকার। শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় স্থান না পাওয়ার পরেই তিনি বইটি লিখেছেন। এটি `প্রতিশোধ` হিসেবে লিখেছেন কিনা এমন প্রশ্নও অনেকের কাছে।

এছাড়া তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে তাও ধুলিষ্যাত করার জন্যও সেটি করে থাকতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করছেন। কারণ এই বইয়ের মাধ্যমে সরকার বিরোধীরা সমালোচনা করার সুযোগ পেয়েছে। তিনি তার বইয়ের একাত্তরের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনকে `মোটামুটি সফল` বলেছেন। বইটির ৫২ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে এই বাক্যটি উল্লেখ করেন। যেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষনের ফলে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো। যার মাধ্যমে এসেছে মুক্তি। কিন্তু এমন অসহযোগ আন্দোলনকে তিনি ‘মোটামুটি সফল’ বলে তাচ্ছিলো করেছেন।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে শুধু ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেননি কেন তিনি এ ভূল করেছেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, “যেভাবেই আমার বইতে আসুক না কেন, এই অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে কখনই ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দ দুটি বলেননি। তাহলে কি তিনি এমন ভূল তথ্যের সমাধ্যমে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেতে চেয়েছেন সে বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন, ‘ভুল স্বীকার তিনি আগেই করতে চেয়েছেন; কিন্তু নানা কারণে পারেননি।’ তিনি কেন পারেননি সে বিষয়েও তিনি ভালোভাবে উল্লেখ করেননি। দুই একজেনর নাম শুধু উল্লেখ করেছেন তিনি।

এতদিন কেন বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি এমন প্রশ্নে তার স্ত্রী ফরিদা খন্দকার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বইটি প্রকাশের পর কী যে যন্ত্রণা সহ্য করেছি, তা বলার মতো নয়। এজন্য আমরা চাইনি, তাদের নাম বলে তাদেরকে এই যন্ত্রণায় ফেলি।” সাংবাদিকরা নাম জানতে চাইলে তিনি স্বামীর সায় নিয়ে মঈদুল হাসান ও জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম বলেন। এরা দুজনসহ আরও কয়েকজনের নাম ‘মনে পড়ছে না’ উল্লেখ করে ফরিদা বলেন, “তারা কয়েকদিন ধরে পাহারা দিয়ে রেখেছিল যেন এটা সংশোধন না করা হয়।”

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘উনি যেহেতু জাতির কাছে এ বিষয় নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন সেহেতু এটি ইতিবাচক। কিন্তু উনার এ বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার দরকার ছিলো। এছাড়া উনি সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে আরও স্পষ্ট করার দরকার আছে বলে মনে করি। জাতির এ বিষয়ে আরও জানা দরকার। যাদের কারণে এতদিনেও তিনি এটি সংশোধনে বাধা গ্রস্ত হয়েছে তাদের নাম আরও প্রকাশ করা উচিৎ।

যারা এ বিষয়ের সঙ্গে জড়িত বা তাকে বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,‘তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। তবে তাদের সাধারণ মানুষ তো চিনেছে। তাদের মুখোশ তো উন্মোচিত হয়েছে।’

 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণে আমি উপস্থিত ছিলাম। এ কে খন্দকার তো তখন ছিলো সেনানিবাসে। তিনি যে লেখা লিখেছিলেন তখন তিনি অবশ্যই কারো উপর নির্ভর করে এ লেখা লিখেছিলেন। আর তার বিবেকের দংশনে যদি ক্ষমা চেয়ে থাকেন তাহলে সেটা কেন পাঁচ বছর পরে?

তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন। আমি বলবো যারা এমন বই প্রকাশ করেছেন তাদেরও আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিলো। এছাড়া যারা তাকে আগে ক্ষমা চাওয়া বা বই সংশোধনের বিষয়ে বাধা প্রদান করে থাকে সে বিষয়েও তিনি যদি কোন নাম বাদ দিয়ে থাকেন, তাদের নামও প্রকাশ করা দরকার বলে মনে করছি।’

এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নিজের লেখা বইয়ের কিছু তথ্য প্রত্যাহার করে সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই আমরা দেখছি।’ তবে এই লেখা প্রত্যাহার না করার জন্য এ কে খন্দকারকে যারা চাপ প্রয়োগ করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা তাঁকেই (এ কে খন্দকার) নিতে হবে বলেও জানান হাছান মাহমু্দ।

 

এনএম/এসএইচ/

 

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি