৭ মার্চের ভাষণের সময়: এ কে খন্দকার ছিলেন সেনানিবাসে
প্রকাশিত : ১৭:১০, ৪ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৯:২৮, ৪ জুন ২০১৯
সাবেক মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটি প্রকাশের পাঁচ বছর গত শনিবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেছেন, বিবেকের দংশনে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু আসলেই কি তিনি বিবেকের দংশনে ক্ষমা চেয়েছেন-এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণে আমি উপস্থিত ছিলাম। এ কে খন্দকার তো তখন ছিলো সেনানিবাসে। তিনি যে লেখা লিখেছিলেন তখন তিনি অবশ্যই কারো উপর নির্ভর করে এ লেখা লিখেছিলেন। আর তার বিবেকের দংশনে যদি ক্ষমা চেয়ে থাকেন তাহলে সেটা কেন পাঁচ বছর পরে?
তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন। আমি বলবো যারা এমন বই প্রকাশ করেছেন তাদেরও আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিলো। এছাড়া যারা তাকে আগে ক্ষমা চাওয়া বা বই সংশোধনের বিষয়ে বাধা প্রদান করে থাকে সে বিষয়েও তিনি যদি কোন নাম বাদ দিয়ে থাকেন, তাদের নামও প্রকাশ করা দরকার বলে মনে করছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘উনি যেহেতু জাতির কাছে এ বিষয় নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন সেহেতু এটি ইতিবাচক। কিন্তু উনার এ বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার দরকার ছিলো। এছাড়া উনি সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে আরো স্পষ্ট করার দরকার আছে বলে মনে করি। জাতির এ বিষয়ে আরো জানা দরকার। যাদের কারণে, এতদিনেও তিনি এটি সংশোধনে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের নাম আরও প্রকাশ করা উচিৎ।
যারা এ বিষয়ের সঙ্গে জড়িত বা তাকে বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। তবে তাদের সাধারণ মানুষ তো চিনেছে। তাদের মুখোশ তো উন্মোচিত হয়েছে।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এ কে খন্দকারের বইটি প্রকাশের পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে একটি দৈনিকে আমি লিখেছিলাম `১৯৭১ :ভেতরে বাইরে নিয়ে তিন প্রশ্ন` শীর্ষক নিবন্ধ। সেখানে যে তিনটি প্রশ্ন তুলেছিলাম, তার প্রথমটি অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর ভাষণে এ কে খন্দকারের `জয় পাকিস্তান` শোনা নিয়ে। ঐতিহাসিক ওই সভায় আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। এ প্রসঙ্গে লিখেছিলাম- আমি তো বটেই; আমার ধারণা উপস্থিত গোটা জনসমুদ্র মন্ত্রমুগ্ধের মতো বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রনিনাদের প্রতিটি শব্দ শুনছিল। আমরা হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম ওই দিনের পরিস্থিতি। ভাষণের সময় উপস্থিত সব মানুষের মনে এখনও সেই ভাষণ গেঁথে আছে। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণ শেষ করেছিলেন `জয় বাংলা` বলে। তিনি যেখানে বলছেন `এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম; সেখানে জয় পাকিস্তান কেন বলতে যাবেন- এটা তো কাণ্ডজ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়।
বিলম্বে হলেও তার যে বোধোদয় ঘটেছে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। এটা ইতিবাচক। কিন্তু বইটি কেবল `জয় পাকিস্তান` নিয়েই বিভ্রান্তি তৈরি করেনি। একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনকে `মোটামুটি` সফল বলেও কি তিনি বিভ্রান্তি তৈরি করেননি? আমার মতে, বইয়ের বাকি বিষয়গুলো নিয়েও তার উচিত বিভ্রান্তি নিরসন করা বা প্রত্যাহার করা।
আর এত বড় `ভুল` তিনি করেছিলেন কেন? হতে পারে, তিনি বইটি নিজে লেখেননি। কাউকে ডিকটেশন দিয়েছেন। তারপরও পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতের পর কি তিনি একবার পড়ে দেখেননি? বইয়ের ভূমিকায় তিনি যেভাবে `প্রচলিত অনেক ধারণা` ভেঙে দিতে চেয়েছেন, তাতে মনে হয় ৭ মার্চের ভাষণের তথ্য নিছক স্লিপ অব পেন নয়। বইটির ভাষ্য কি অন্য কোনো প্রকল্পের অংশ ছিল?
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সাবেক মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটি প্রকাশ হয়। এই বইয়ের ৩২ নাম্বার পৃষ্ঠায় লেখা ছিল বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ডাক দিয়ে বলেন,‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’। এরপর পাঁচ বছর পর গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এটি ভুল ছিলো উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়েছেন জাতির কাছে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন,‘বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মার কাছে ও জাতির কাছে এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
এনএম/এসএইচ/
আরও পড়ুন