জাপায় ফের ভাঙনের সুর
প্রকাশিত : ০৯:১৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ০৯:৪৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে চলছে অস্থিরতা। সংবাদ সম্মেলন আর পাল্টা সম্মেলনে নিজেদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দাবি করছেন এরশাদপত্নী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদের। বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে নানা আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জাতীয় পার্টি।
এ অবস্থায় বিব্রতকর সময় পার করছে দলের নেতাকর্মীরা। আসলে তারা কোনদিকে যাবে? কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? রওশন নাকি কাদেরের সঙ্গে থাকবে? কে তাদের নেতা? প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন দলের বিভিন্ন নেতারা।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যায় রয়েছে দলটি। যে কোনো সময় দুই ভাগ হয়ে যেতে পারে জাতীয় পার্টি। আর এর জন্য দায়ী থাকবে দলের সিনিয়র নেতারা।
বাংলাদেশে জাতীয় পার্টিতে ভাঙন নতুন নয়। ১৯৮৬ সালে গঠিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দলে ভাঙন দেখা দিয়েছে কয়েকবার। ১৯৯৬ সালে প্রথম ভাঙনে তৎকালীন মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। এর পরের মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুরও আলাদা হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি গঠন করেন। আরেক মহাসচিব কাজী জাফর আহমেদের হাত দিয়েও আলাদা দল হয়েছে। ফলে সেই একই ধরনের পুনরাবৃত্তি আবারো ঘটতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আগে যত ভাঙনের সময় এসেছে তার সবগুলো ভালোভাবেই সামাল দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে এবারের পরিস্থিতিতে কর্মীদের চোখে দেখা গেছে উদ্বেগের ছাপ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলনে সেই ভাঙনের ছাপ দেখা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই রওশন এরশাদ বলেন, পার্টি এখন উদ্বিগ্ন আছে। পার্টিতে কী হচ্ছে? জাপা অতীতেও ভাগ হয়েছে, এবারও কি সেটি হচ্ছে নাকি?
তিনি বলেন, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এত কষ্ট করে পার্টি গড়ে তুলেছেন, এখন সেই পার্টিটা ভালোভাবে চলুক, মান-অভিমান ভুলে যারা চলে গেছে, তারা ফিরে আসুক। আমি চাই পার্টির সবাই মিলেমিশে জনগণের সেবা করব।
এদিকে বনানীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো ভাঙনের মুখে নেই।
সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদের পাশে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও কাদের বলেছেন, রওশনকে ‘মায়ের মতো’ সম্মান করেন তিনি এবং সেই সম্মান রওশন রাখবেন বলেই তিনি আশা করছেন।
নিজের পক্ষে পাল্লা ভারী থাকার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো লোক যে কোনো জায়গায় বলে দিল, তিনি রাজা। রাজার তো রাজত্ব থাকতে হবে, প্রজা থাকতে হবে।
তবে দুই সংবাদ সম্মেলনেই বাইরে থাকা নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিল- ‘দলকে ভাঙতে দেব না, দেব না’।
প্রসঙ্গত, এরশাদের মৃত্যুতে রংপুরের একটি সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার পর সেখানে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেই উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করেও জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে। এরপর আগামী ৮ তারিখে সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। ফলে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে দলের। এই নেতা নির্বাচন নিয়ে মহাসংকটে পড়ে দলটি।
আরও পড়ুন