রাব্বানীর সঙ্গে জাবির টাকা ভাগাভাগির ‘অডিও ফাঁস’
প্রকাশিত : ০৯:৪৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে একটি অডিও ফাঁস হয়েছে।
বলা হচ্ছে, ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানো গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে জাবি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হামজা রহমান অন্তর এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের।
ফোনালাপের শুরুতে গোলাম রাব্বানীকে বলতে শোনা যায়: হ্যাঁ অন্তর, কোথায় আছো। টাকা নেওয়ার সময় ছিল কে কে?
এ সময় হামজা রহমান অন্তর বলেন: জুয়েল ভাই, চঞ্চল ভাই ও সাদ্দাম ভাই ছিল আরকি।
রাব্বানী: টাকাটা দিছে কোথায়?
অন্তর: ভাই, ম্যামের বাসায়, সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে একটু কথা বলেন। আমার পাশেই আছে।
রাব্বানী: আচ্ছা দাও দাও!
সাদ্দাম হোসাইন: ভাই স্লামুআলাইকুম।
রাব্বানী: ওয়ালাইকুম সালাম, সাদ্দাম কি খবর ভাই।
সাদ্দাম: ভাই খবর তো আপনাকে জানাইছি ভাই, খবর তো ভাল না, বেশি একটা। আমি আপনাকে বলছিলাম না ভাই- আমি, তাজ, জুয়েল চঞ্চল আমরা চারজন ছিলাম ওই মিটিংয়ের সময়। আজকে কিছুক্ষণ আগে জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দিছে আপনাদের বিপক্ষে।
রাব্বানী: সেটা তো দেখলাম।
হোসাইন: বিষয়টা হচ্ছে ভাই, বামের সাথে সেটিংয়ে গেছে। বৈঠক হইছে বামের সাথে। তারপর বৈঠকে বিচার বিভাগীয় তদন্তবাদে বাকিগুলা বামের সাথে মেনে নিছে। আর বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে মানবে কিনা আগামী বুধবার পর্যন্ত ভাই। তিনদিন সময় দিছে।
রাব্বানী: আন্দোলন নিয়া?
হোসাইন: হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।
রাব্বানী: ম্যাম তো বলছে যে আন্দোলনেও নাকি আমরা করাচ্ছি। সামথিং লাইক ও রকম কিছু। আন্দোলন কারা করতেছে ওটাও তো আমরা জানি না। আমাদের এটা তো আমরা জানি না।
সাদ্দাম: ভাই বিষয়টা হচ্ছে উনি ছাত্রলীগের উপর দিয়ে সবকিছু করে নিজের ফ্যামিলিকে সেইভ করতে চাচ্ছে আরকি। উনি বাঁচতে চাচ্ছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে অনেকগুলা কথা বলছে আপনার বিপক্ষে, মানে সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এবং যুগান্তরে ভাই, নিউজটা কি দেখছেন.......
রাব্বানী: ওটা দেখছি, আচ্ছা টাকা যখন দিছিলো তখন তুই ছিলি না!
সাদ্দাম: ছিলাম ভাই আমি আর তাজ ছিলাম। এখন আপনি ভাই বলেন। কি করতে হবে আমরা করতেছি। সমস্যা নাই।
রাব্বানী: তুই আর কে?
সাদ্দাম: আমি আর তাজ, আমার বন্ধু ভাই।
রাব্বানী: অহ তাজ তাজ, সহ-সভাপতি! তুই হলি জয়েন্ট সেক্রেটারি। টাকাটা কিভাবে! ম্যাডাম দিছিলো নাকি অন্য কেউ ছিলো?
সাদ্দাম: ওইখানে আর কেউ ছিলো না। ব্যাপারটা হচ্ছে ম্যাডাম আমাদের সাথে ডিলিংটা করছে। টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছায় দিছে।
রাব্বানী: ওহ হলে পৌছাই দিছে টাকা!
সাদ্দাম: হ্যাঁ হ্যাঁ। কথা তো হইছেই। আমি আর জুয়েলসহ তিনজনের সাথেই কথা হইছে।
রাব্বানী: কয় টাকা দিছে?
সাদ্দাম: আমাদেরকে বলছে হচ্ছে এক কোটি। আমরা বাকিটা জানি না। জুয়েল-চঞ্চলের সাথে আলাদা ডিল হইতে পারে। বাট আমাদের সাথে বসে মিমাংসা..........
রাব্বানী: আমি শুনলাম যে ১ কোটি ৬০ লাখ.....
সাদ্দাম: ব্যাপারটা হচ্ছে ভাই ৬০ এর টা আমরা জানি না। ওখানে বসে ভাগ করে দিছে ৫০ হচ্ছে জুয়েলের, ২৫ আমাদের আর ২৫ চঞ্চলের।
রাব্বানী: ওহ ম্যাডাম ওভাবে ভাগ করে দিছে! জুয়েল ভাল ছেলে ওই জন্য ৫০ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে ওইজন্য ২৫.....
সাদ্দাম: চঞ্চল তো ভাই ওই ঝামেলায় আমাদের বাদ দিতে পারে নাই।
রাব্বানী: ও সেক্রেটারির টাকাই তোদেরকে দিছে।
সাদ্দাম: আমরা বলছি আমাদের ২৫% দিতে হবে। চঞ্চলকে ২৫% দিতে হবে। আমাদেরকে না জানাইয়া ওদের আলাদা ৬০ লাখ টাকা দিছে। এটা হতে পারে। আমরা ওটা জানি না। আমরা ১ কোটির হিসাব জানি।
রাব্বানী: কিন্তু তোমার ম্যাডাম যে এখানে আমাদের নাম জড়াইলো, আমার তো কোন আইডিয়াই নাই।
সাদ্দাম: ভাই উনি খুব নোংরামী করতেছে ভাই। আপনারা ভাই সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের কি করা লাগবে আমরা করতেছি।
রাব্বানী: তোমাদের কিছু করা লাগবে না। তোমরা সাইলেন্ট থাকো। যেহেতু আপার কানে দিয়েছে, আমিও বুঝতেছি সে নিজে সেফ হওয়ার জন্য নিজের ফ্যামিলিকে সেফ করার জন্য। আরেকটি জিনিস, এই ৬টা কাজ ডিল করছে কে বেসিক্যালি?
সাদ্দাম: তার ছেলে, মূলত হচ্ছে তার ছেলে, তার পিএস সানোয়ার ভাই আর হচ্ছে পিডি, আর হচ্ছে তার হাজবেন্ড। এই হচ্ছে চারজন।
রাব্বানী: স্বামী, ছেলে, পিএস সানোয়ার ও পিডি নাসির? আগে থেকে ৬টা কোম্পানি রেডি করে রাখছে না!
সাদ্দাম: শুরু থেকেই তারা সবকিছু করছে ভাই। টেকনিক্যাল কমিটিতে ওরা ছিলো।
রাব্বানী: টেকনিক্যাল কমিটিতে ওরা ছিলো! না না ওরা তো থাকতে পারে না। এটার নিয়ম নেই।
সাদ্দাম: কথা হলো উনিতো সবাইকে ফেরত টেরত পাঠালো না! ছিনাই নিচ্ছিলো। তখন আমরা বললাম সবাইকে ড্রপ করাতে দিতে হবে। তখন সবাইকে ড্রপ করাতে দিলো। কিন্তু কাজ হচ্ছে.............................. হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ওটা নাটক ছিল। শিডিউল বিক্রির টাইমে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়ছে ইচ্ছে করে। যেন কেউ যোগাযোগ করতে না পারে।
রাব্বানী: ওহ আচ্ছা আচ্ছা। সিডিউল বিক্রির টাইমে সে হাসপাতালে ভর্তি হইছে ইচ্ছা করে?
সাদ্দাম: হ্যাঁ ভাই।
রাব্বানী: তুই জানলি কেমনে এইটা?
সাদ্দাম: সিডিউল বিক্রির সময় উনি হাসপাতালে ছিলেন। সিডিউল বিক্রি শেষ উনি...............
রাব্বানী: আমি তোর সাথে কথা বলবোনি প্রয়োজন হলে। ম্যাম আমাদের সম্পর্কে যা মিথ্যাচার করলো!
সাদ্দাম: আমি ফোন দিলে ভাই..............
রাব্বানী: আচ্ছা। থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসাইন ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'তিনি (রাব্বানী) সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন। আমি তার রাজনীতি করতাম। সে যা বলত, তাই করতাম।'
সাদ্দাম বলেন, 'অনেক কথাই তার সঙ্গে হয়েছে। সে সেন্ট্রাল সেক্রেটারি ছিল। সে যে কাজ করতে বলত তাই করেছি। সে তো এখন সাবেক। আমি আসলে কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে এসব বলছি মনে নেই। মনে করে জানাবো।'
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, অডিওতে আমি টাকা দিয়েছি এমন গল্প ফেঁদেছে। আমার সাথে টাকার কোন কথা হয়নি। এই মিথ্যাটা সত্য করার দায়িত্ব আমার না। ওরা করুক। আর ওরা তো বলতেই পারে।
তিনি বলেন, 'সাদ্দাম বলতে পারে রাব্বানীকে যে, উপাচার্য আমাদেরকে টাকা দিলেন বলে আমরা টাকা পেলাম। রাব্বানীর যেহেতু পদ নেই এটা সে ষড়যন্ত্র থেকে বলাতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকেন আমরা বাসায় কোনও টাকা পয়সার কথাই বলিনি।'
গোলামা রাব্বানীর সঙ্গে এ ব্যাপারে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন