কি হবে ওমর ফারুকের?
প্রকাশিত : ০৯:৫১, ২০ অক্টোবর ২০১৯
স্পষ্টভাষী আর ‘একক সিদ্ধান্তে’ সংগঠন পরিচালনায় সিদ্ধহস্ত যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী হঠাৎ দলের ভেতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। যে সংগঠনে টানা ১০ বছর তিনিই ছিলেন হর্তাকর্তা, আজ সেই সংগঠনের কোথাও নেই এ নেতা। এক কথায় তার নীরব পতন হয়েছে। তাকে বাদ দিয়েই দিব্যি চলছে সবকিছু। এদিকে আজ রোববার বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এতে যাচ্ছেন না যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তাকে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকেও ঐ বৈঠকে না থাকতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, বৈঠকটি যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে হলেও এতে যুবলীগ চেয়ারম্যানের ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে। এছাড়া যুবলীগের নেতৃত্বে যারা আসবেন তাদের বয়স নির্ধারণ নিয়েও নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। যুবলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর নির্ধারণ করা হতে পারে। এছাড়া সম্মেলনের নানা দিকসহ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা হতে পারে।
গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত যুবলীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না ওমর ফারুক চৌধুরী। এ বৈঠকে দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে, নানা অপকর্মের কারণে শাস্তি হিসেবে যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে সিদ্ধান্তের অনুমোদনের জন্য আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুবলীগ নেতারা বিস্তারিত প্রমাণাদিসহ বক্তব্য তুলে ধরবেন। আজকের বৈঠকে বিতর্কিত কোনো নেতাদের নেওয়া হবে না। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, একজন বাদে সকল প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা গণভবনে যাবেন।
প্রসঙ্গত, চলমান ক্যাসিনো অভিযানের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর যুবলীগ চেয়ারম্যানের সমস্ত ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট। এ ছাড়া সরকারের অনুমতি ছাড়া তার বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে ৬ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।
নেতারা বলছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব পাওয়ার পর গত প্রায় ১০ বছর একক কর্তৃত্বে সংগঠন চালিয়েছেন। এমনকি যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে তিনি অনেকের সামনেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। প্রায়ই সহকর্মীদের অকথ্য গালাগালি করতেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর যুবলীগ চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিতদের সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো এবং অপকর্মে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে।
সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, নৈতিক স্খলনের দায় নিয়ে নিজ থেকেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল ওমর ফারুক চৌধুরীর। তিনি পদ ধরে রাখায় সংগঠনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
এ অবস্থায় তাকে বাইরে রেখেই যুবলীগের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আজকের বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে। এক মাস ধরে ধানমন্ডির নিজ বাসায় অনেকটা ‘নির্বাসিত’ জীবনযাপন করছেন তিনি। এখন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন যুবলীগেরই কয়েকজন নেতা।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যেসব রাজনৈতিক নেতার নাম এসেছে, তাদের সবার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোতে অভিযান শুরুর দিন যুবলীগ চেয়ারম্যান মিরপুরে সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘এত দিন আঙুল চুষছিলেন?’।
এমএস/
আরও পড়ুন