আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ইতিহাস
প্রকাশিত : ১০:২১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯
দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেছে।
আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল আজ। বেলা ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দু’দিনব্যাপী কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন (শনিবার) সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন।
ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ২০টি সম্মেলনের মধ্যে পাকিস্তান আমলে আটটি আর স্বাধীন বাংলাদেশে ১২টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় প্রয়োজনে দলটি বিভিন্ন সময়ে সাতটি বিশেষ সম্মেলন করেছে।
পাকিস্তান আমলে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরনো ঢাকার কেএস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়। তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতৃত্বের বিরোধিতা করে দলটির প্রগতিশীল অংশ এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতারা সে সময় এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। গঠনের সময় দলটির নাম ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ রাখা হলেও ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে মুসলিম শব্দটি তুলে দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়। অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ভাবধারায় ফিরতেই তখন ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বাধিক আটবার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু টানা চার বার দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি চার বার সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠার সময়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া, অন্যান্য সভাপতির মধ্যে আবদুল হামিদ খান ভাসানী চার বার, আব্দুর রশীদ তকর্বাগীশ, এইএইচএম কামারুজ্জামান ও আব্দুল মালেক উকিল এক বার করে সভাপতি নির্বাচিত হন।
সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে জিল্লুর রহমান দায়িত্বে ছিলেন চার বার; তাজউদ্দিন আহমেদ তিন বার, আবদুর রাজ্জাক ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার করে এবং শামসুল হক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আবদুল জলিল এক টার্মের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চলতি টার্মের দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে জোহরা তাজউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে আওয়ামী লীগের ১১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের যত সম্মেলন:
প্রতিষ্ঠা সম্মেলন
২৩ ও ২৪ জুন, ১৯৪৯; ঢাকা, রোজ গার্ডেন। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
দ্বিতীয় সম্মেলন
১৪-১৬ নভেম্বর, ১৯৫৩; ঢাকা, মুকুল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বছর ঢাকার আগে ময়মনসিংহেও আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তৃতীয় সম্মেলন
২১-২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫; ঢাকা, রূপমহল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
চতুর্থ সম্মেলন
৭-৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭; কাগমারি, টাঙ্গাইল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
পঞ্চম সম্মেলন
৬-৮ মার্চ, ১৯৬৪; ঢাকা, ইডেন হোটেল। সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
ষষ্ঠ সম্মেলন
১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬। ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
সপ্তম সম্মেলন
১৯ আগস্ট, ১৯৬৭; ঢাকা, পুরানা পল্টন, আওয়ামী লীগ অফিস। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
অষ্টম সম্মেলন
৪ জুন, ১৯৭০; ঢাকা, ইডেন হোটেল । সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
নবম সম্মেলন
৭-৮ এপ্রিল, ১৯৭২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
দশম সম্মেলন
১৮-২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪; ঢাকা। সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
১১ তম সম্মেলন
৩-৪ এপ্রিল, ১৯৭৭; ঢাকা, ইডেন হোটেল। আহ্বায়ক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। (তবে, এর আগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।)
১২তম সম্মেলন
৩-৫ মার্চ, ১৯৭৮; ঢাকা, সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।
১৩তম সম্মেলন
১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদক অন্য দল গঠন করে বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
১৪তম সম্মেলন
১-৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
১৫তম সম্মেলন
১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
১৬তম সম্মেলন
৬-৭ মে, ১৯৯৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
১৭তম সম্মেলন
২৬ ডিসেম্বর, ২০০২; ঢাকা। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল।
১৮তম সম্মেলন
২৪ জুলাই ২০০৯; ঢাকা, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
১৯তম সম্মেলন
২৯ ডিসেম্বর, ২০১২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
২০তম সম্মেলন
২২-২৩ অক্টোবর ২০১৬; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিশেষ সম্মেলন
আওয়ামী লীগের বিশেষ সম্মেলনগুলোর মধ্যে প্রথমটি ১৯৫৩ সালের ১৪ থেকে ১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহের অলকা সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয় । এতে জোট গঠনের প্রস্তাব পাস করা হয়। যার অংশ হিসেবে ১৯৫৪ সালের পাকিস্তানের প্রথম প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট।
১৯৫৬ সালের ১৯ ও ২০ মে দ্বিতীয়বার বিশেষ সম্মেলন ডাকে আওয়ামী লীগ। এই সম্মেলনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন যেন ১৯৫৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আর স্থগিত রাখা না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৫৭ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিশেষ সম্মেলনটি আওয়ামী লীগের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় কোনও নেতা একই সঙ্গে দলের নেতৃত্ব ও মন্ত্রিসভায় থাকতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে দলীয় সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন থাকেন।
ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর ১৯৬৬ সালের ৮ মে আওয়ামী লীগের সে সময়ের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক হওয়ার পর, ১৯৬৭ সালের ১৯ আগস্ট দলের কৌশল নির্ধারণে ডাকা হয় চতুর্থ বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ভোটে প্রতিকূল অবস্থায় ৬ দফার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার তিন বছর পর রাষ্ট্রপতি ও সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে জিয়াউর রহমানের সরকার। আর নির্বাচনকে ঘিরে বিশেষ সম্মেলন ডাকে আওয়ামী লীগ। দলের পঞ্চম বিশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ১৯৭৮ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে।
১৯৯৫ সালে ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলটির ষষ্ঠ বিশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়।
২০০০ সালের ২৩ জুন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের সপ্তম বিশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুবছর বাড়াতে এই সম্মেলন ডাকা হয়
আরও পড়ুন