বিপ্লব বড়ুয়া : আওয়ামী লীগের তারুণ্যদীপ্ত দূর্গ
প্রকাশিত : ১৫:৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৩৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯
ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া- ফাইল ছবি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, দেশের অস্তিত্বের অপর নাম। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭০’র নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ক্রমাগত টেনে এগিয়ে নিচ্ছে প্রাচীনতম দলটি। ১৯৭৫ সালে কিছু উশৃংখল সামরিক জান্তার হাতে দেশের উন্নয়নের ছন্দপতনের পর স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথেই দেশ ফিরেছে শেখ হাসিনার হাতে। এ অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগের ছায়াতলে বিকশিত হয়েছেন হাজার-লাখো নেতৃত্ব। রাজনীতির উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়েছেন অনেক নেতাই। তাদের ধারাবাহিকতায় তারুণ্যদীপ্ত এক উজ্জ্বল নাম ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির দপ্তরের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। দলের ২১তম কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি দপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। একইসঙ্গে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটির উপ-দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় তৎকালীন বিএনপি সরকারের নির্যাতনে শিকার বিপ্লব বড়ুয়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে চলেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রসারিত করার লক্ষ্যে নিরন্তন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন বীর চট্টলার সন্তান বিপ্লব বড়ুয়া। তারুণ্যদীপ্ত এই মেধাবী নেতৃত্বকে সম্মানও জানিয়েছে দল। নির্ভরতার প্রতীক রূপে নির্মোহ পরিচ্ছন্ন এই রাজনীতিককে দলের বিভিন্ন পদে অসীন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামীর রাজনীতি হবে সম্পূর্ণ মেধা ও জ্ঞাননির্ভর। আর এই ময়দানে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সত্যিকারের এক বিপ্লবী সৈনিক।
দলের জন্য ত্যাগ ও সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার বিপ্লব। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য মনোনীত হন। পরে সদস্য থেকে উপ-দফতর সম্পাদক করা হয় তাকে। এর আগে, ১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের অবৈতনিক গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারও আগে, সাংবাদিকতা করার সময় চিটাগাং জার্নালিস্ট ফোরাম- সিজেএফডি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
আওয়ামী লীগের তরুণ এই সদস্য ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সাতকানিয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুনীল কান্তি বড়ুয়ার ছেলে।
বিপ্লব শিক্ষা জীবনে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সাতকানিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাতকানিয়া থানা ছাত্রলীগের এডহক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বিপ্লব বড়ুয়া। পরে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের উল্ভারহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরে যুক্তরাজ্যের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে বার ভোকেশনাল কোর্স (পিজিডিএল), যুক্তরাজ্যের কল টু দ্য বার ‘দ্য অনারেবল সোসাইটি অব গ্রেস ইন’ অর্জন করেন। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ব্রিটিশ কোয়ালিফাইড ব্যারিস্টার।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতা বিপ্লব বড়ুয়া। ১৯৮৮ সালের ১২ এপ্রিল সাতকানিয়ায় জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর ১৯৯৪ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের হামলায় আহত হন। ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আগমন প্রতিহত করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। ২০০২ সালে ছাত্রলীগ করার অভিযোগে খালেদা জিয়ার জোট সরকার বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের প্রযোজক পদ থেকে বে-আইনীভাবে চাকরিচ্যুত করে বিপ্লব বড়ুয়াকে।
ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিধানের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দলের দুঃসময়ের ভূমিকা রাখেন বিপ্লব বড়ুয়া।
১/১১ সরকারের সময়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ২০০৭ সালের পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে ব্রিটিশ সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন লাভের জন্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বিশেষ করে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের কাছে ই-পিটিশন প্রদানে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেন্টারে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সফরকারী বিদেশী সাংবাদিকদের যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্রদান করেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে তার কাজ অসীম। তিনি চীনের সাথে দল ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে প্রশংসিত হন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে দেশটি সফর করেন। পরের বছর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনূর্ধ্ব ৪০ নেতাদের নিয়ে প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে চীন সফর করেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে চীন সফরে যান। ২০১৬ সালের জুন মাসে সিআরআই’র প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবেও চীন সফর করেন। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে চীন সফর করেন বিপ্লব বড়ুয়া।
২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের সফরকালে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের সাথে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তোলেন এ নেতা।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) এর সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সদ্য ঘোষিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া বিপ্লব বড়ুয়া।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুর হলে সারাদেশে জামায়াত-বিএনপি’র হামলা যে সম্প্রদায়িক তা বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের দূতাবাসে উপস্থাপন এবং এই নিয়ে জেনেভায় জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা এবং তাইওয়ানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে প্রশংসা পান এ মেধাবী তরুণ নেতা।
সম্প্রদায়িক সম্প্রতিতেও তার ব্যাপক কর্মকাণ্ড রয়েছে। ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার পর রামুতে একটানা ১০ দিন অবস্থান করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ শান্তি সম্মেলন অয়োজনে সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করেন তিনি। ২০১১ সালে ঢাকায় আয়োজিত এই বৌদ্ধ মহাসম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বিভিন্ন সামাজিক ও অরাজনৈতিক সেবামূলক সংগঠনের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন আওয়ামী লীগের এই তরুণ নেতা। বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ বৌদ্ধ জাতীয় সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব, বাংলাদেশ মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি, ড. বুদ্ধপ্রিয় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এলামনাই এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে তার একক উদ্যোগে নিয়মিতভাবে জাতীয় শোক দিবস এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন হয়।
এমএস/
আরও পড়ুন