ইশতেহারে যেসকল প্রতিশ্রুতি দিলেন আতিকুল
প্রকাশিত : ১৪:০৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৫:২৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২০
সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ৩৮টি প্রতিশ্রুতি সংবলিত ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি । সুস্থ, সচল ও আধুনিক- এই তিন শিরোনামে নিজের ইশতেহার সাজিয়েছেন সাবেক এ মেয়র।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীর সার্বিক উন্নয়নে আমি কথা দিচ্ছি, আমাকে পুনরায় পূর্ণমেয়াদে নির্বাচিত কবলে লক্ষ্য অর্জনে সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো। সব উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে ঢাকা শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার সমস্যার সমাধান করে গড়বো সবার প্রিয় ঢাকা, যে ঢাকা আপনাদের সবার প্রাপ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্রধান লক্ষ্য সাবেক ও প্রয়াত মেয়র আনিস ভাইয়ের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’
কাউন্সিলরদের প্রত্যেক বছর সম্পদের হিসাব দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাবেক এ মেয়র বলেন, এই পথযাত্রায় আমি নগরবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে চাই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় স্বপ্নের ঢাকাকে বাস্তব করতে চলুন এগিয়ে যাই একসঙ্গে। সবাই মিলে গড়ে তুলি একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি শত সংকট, শত সীমাবদ্ধতা, নাগরিক যন্ত্রণাসহ নানাবিধ সমস্যা আছে এ শহরে। ঢাকা আপনার, আমার, সবার। আমাদের একটু সচেতনতা ও কিঞ্চিৎ সহযোগিতা এই নগরীর প্রাপ্য। যদি আমরা সবাই একটু সচেতন, আন্তরিক ও উদ্যোগী হয়ে দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত রাখি; শহর বিনির্মাণে অংশ নেই, তবে অবশ্যই ঢাকা উত্তরে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবেই। যার নেতৃত্বে থাকবে উত্তর ঢাকাবাসী।’
সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে কাঙ্খিত নগরী গড়া সহজ হবে জানিয়ে আতিক বলেন, ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকা, যার বাঁকে বাঁকে ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংগ্রাম আর বিনির্মাণের গল্প। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। একে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বিকশিত হয়েছে। বিশ্বের জনবহুল শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরের মানুষের যাপিত-জীবনে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ শহর আমাদের কাছে বড় আবেগের, বড় ভালোবাসার।’
তিনি বলেন, ‘একটি শহরের প্রাণ হচ্ছে শহরের পাড়া ও মহল্লাগুলো। সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে গেলে প্রতিটি এলাকা, পাড়া ও মহল্লাকে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। প্রতিটি এলাকাভিত্তিক সমস্যা শনাক্ত করে সেগুলোর স্থায়ী সমাধানের মধ্য দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনই নগরীর সামগ্রিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। যার ফলে এই নগরীতে বসবাস করা মানুষগুলো সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আমার প্রধান লক্ষ্য, এই নগরীকে কেবল বসবাস উপাযাগী নয়, বরং নগরবাসীর জীবনমানেরও উন্নতি সাধন করা।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০১৯ সালের উপ-নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারের অধিকাংশ কাজই শুরু হয়েছে উল্লেখ করে আতিক বলেন, ‘আমার গত ৯ মাসের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে কাজে লাগিয়ে আগামির ঢাকা গড়ার লক্ষ্য অর্জনে পেশ করছি আমার ত্রিমুখী ইশতেহার।
সুস্থ ঢাকা গড়ে তুলতে ১৩টি ওয়াদা। এগুলো হলো-
১) উন্নত বিশ্বের মতো ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিতে বছরব্যাপী মশা নিধন।
২) টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটি স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্যকে জ্বালানি ও শক্তিতে পরিণত করা।
৩) তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে শহরের সব ওয়ার্ডে নিয়মিত পাড়া উৎসব আয়োজন করা।
৪) বস্তিবাসীদের জন্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
৫) প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নাগরিকদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া।
৬) ডিএনসিসির বর্ধিত এলাকায় কম্প্রিহেনসিভ রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ কেয়ার সেন্টার ও প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার নির্মাণ।
৭) মিরপুরে বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ।
৮) সবার জন্য উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ।
৯) বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক পশু জবাই কেন্দ্র স্থাপন।
১০) ডিএনসিসির প্রতিটি স্থাপনায় মাতৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ।
১১) বিশেষভাবে সক্ষম ও সবার জন্য আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।
১২) মিস্ট ব্লোয়ার ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো।
১৩) ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরি।
সচল ঢাকা- শিরোনামেও আছে ১৩টি ওয়াদা। এগুলো হলো -
১) ফুটপাত দখলমুক্ত করে ফুটপাথ নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
২) যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
৩) পথচারী পারাপারে বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিংয়ে ডিজিটাল পুশ বাটন স্থাপন
৪) নগর পরিবহনে ই-টিকেটিং সেবা।
৫) শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
৬) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য গণস্থাপনা ও গণপরিবহন নিশ্চিতকরণ।
৭) নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ।
৮) হকারদের পুনর্বাসন ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা।
৯) আনিসুল হকের পরিকল্পনা ঢাকা বাস রুট র্যাশনাইলেজেশরের কাজ সম্পন্ন করা।
১০) এসকেলেটরসহ ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ।
১১) সাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও সাইকেল পার্কিং।
১২) স্মার্ট বাসস্টপ ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।
১৩) প্রতিটি মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান ট্র্যাক করা।
আধুনিক ঢাকা- শিরোনামে ১২টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আতিকুল ইসলাম। এগুলো হলো -
১) সবার ঢাকা অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকি করা। মেয়রের সঙ্গে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা।
২) ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্য নাগরিক সেবা প্রদান।
৩) ডিএনসিসির মালিকানাধীন কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য স্ট্রাকচারাল আপগ্রেডেশন।
৪) একটি সার্বক্ষণিক ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরি যার মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হবে।
৫) নগর পরিকল্পনাবিদ রাষ্ট্রপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ।
৬) সব লেট খালের সংস্কার উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধকের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন।
৭) বায়ুদূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু করা।
৮) ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তৈরি হবে হেল্প ডেস্ক।
৯) উত্তর ঢাকাকে একটি স্মার্ট সিটি করে তুলতে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি এলাকায় স্মার্ট নেইবার হুড হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
১০) তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সেবা কেন্দ্র গঠন।
১১) প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
১২) জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জনতার মুখোমুখি মেয়র শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান।
এআই/
আরও পড়ুন