২৫০ কি.মি. গতিতে ধেয়ে আসছে ‘আম্ফান’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ১৯ মে ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:১৪ পিএম, ১৯ মে ২০২০ মঙ্গলবার
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে সুপার সাইক্লোন আম্ফান আজ (মঙ্গলবার) সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার, মংলা থেকে ৭৮৫ ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে কাল ভোররাত থেকে বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের সুন্দরবন অংশে ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ আঘাত হানতে পারে।
‘ঝড়ের মূল অংশ সুন্দরবন অংশে এলেও এর প্রভাব পড়বে চারদিকেই। তবে এখনো এটি এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। তাই নানা পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে,’ বলছিলেন রশিদ।
তার মতে, ঝড়টি ভারতের দীঘা থেকে বাংলাদেশের সন্দ্বীপ এলাকার মধ্য দিয়ে যাবে এবং এর মূল অংশ ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের সুন্দরবন অংশে আসবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ৪/৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
কোন জেলার কী সংকেত:
৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালি, ফেনী, চট্টগ্রাম।
আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আম্ফান কী ক্ষতি করতে পারে?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান যখন আঘাত হানবে তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরণের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট হয়।
ঘরবাড়ি, গাছ-পালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।
তবে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার উপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন আহমেদ।
তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াজেদ বলছেন, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি হয়তো দেশের উত্তর-পশ্চিম দিক অর্থাৎ সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানবে।
তিনি বলেন, আঘাত হানার সময় যদি ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বা তার উপরে থাকে তার মানে হচ্ছে এটা বড় ধরণের একটা ঘূর্ণিঝড়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দুই ধরণের ক্ষতি হয়। একটা হচ্ছে প্রাণহানি। আরেকটা হচ্ছে ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর ক্ষতি।
অতীতের বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রাণহানির সংখ্যা কমে গেছে।
১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোনে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রায় একই ধরণের আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ছিল ২০০৭ সালে সিডর। সেখানে মানুষের মৃত্যু হার তুলনামূলক কম ছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ৩ হাজার ৪০৬ জন মারা গিয়েছিল।
এরপরে বাংলাদেশে আরো বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫শে মে আইলার আঘাতে মারা যায় ১৯০জন। ২০১৩ সালে মহাসেনে মারা যায় ১৮ জন।
‘এরপরে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কখনোই দুই সংখ্যার বেশি হয়নি এবং সেটি ২৫ এর উপরে যায়নি,’ বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক।
অন্যদিকে আম্পানে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকলে বাড়ি-ঘর এবং গাছপালা পড়ে যাবে এবং এতেও ক্ষতি হতে পারে।
কী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে?
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে প্রস্তুতি হিসেবে এরইমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ স্কাউটস এবং সিপিসি এর মধ্যে এর আগেই বৈঠক হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রথম যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেয়া হয় সেটি হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা।
তবে এবার যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে কোভিড-১৯ এর কারণে, সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হবে।
এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কে কোন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে তারও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে, প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্যবহার করা হবে এবং বাড়ির কাছে থাকা স্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
এরইমধ্যে যেহেতু চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে তাই, মাঠ পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীরা প্রচারের কাজ করছে যাতে মানুষ সচেতন হয়।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন যারা দুর্যোগের সময়ে কাজ করেন।
পরবর্তীতে বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হলে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হবে। সেখানে খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, পানীয় জলের ব্যবস্থা এগুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান সিনিয়র সচিব।
‘এখন প্রিপারেশন স্টেজে আছি, পরে এক্সিকিউশনে যাবো, পরবর্তী সিগনালের অপেক্ষায় আছি,’ বলেন কামাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইক্লোন শেল্টারে যারাই আসুক তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করার মতো ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র: বিবিসি
এমবি//