গানের ঘর পুড়ে ছাই, বাউলের মাথায় হাত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:১৯ পিএম, ১৯ মে ২০২০ মঙ্গলবার
ভস্মীভূত স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ভুক্তভোগী বাউল রণেষ ঠাকুর- ছবি একুশে টিভি।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের অন্যতম শীষ্য বাউল রনেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার উজালধল গ্রামের এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৯ মে) বেলা ১১ টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দিরাই পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।
গত রোরবার (১৭ মে) গভীররাতে কে বা কারা রনেশ ঠাকুরের গানের ঘরটি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এতে বাউল গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র ঢোল, বেহালা, দোতারা, একতারা, খঞ্জনি, মন্দিরা, হারমু নিয়ামসহ বেশ কিছু দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ও ঘরে সংরক্ষিত মূল্যবান কাঠমাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বাউল রনেশ ঠাকুর বলেন, রোববার দিবাগত রাতে আমি অন্যান্য দিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত গভীর হলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে পারিবারের সদস্যদের ঘুম ভাঙ্গে। উঠে দেখেন বাউলের গান চর্চার ঘরটি পুড়ে গেছে। পরে প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজনের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন।
বাউল রনেশ ঠাকুরের মেয়ে জুই ঠাকুর বলেন, এটি তার বাবার গানের ঘর। দূরদূরান্ত থেকে আগত বাউল ভক্তবৃন্দ এ ঘরে থেকে বাউল গান শিখতেন। ঘর ও বাদ্যযন্ত্র পুড়ে যাওয়ায় এখন আর বাউল গান শেখানোর কোন স্থান নেই তাদের বাড়িতে। আজ তিনি দিরাই থানায় অভিযোগ দিবেন।
রনেশ ঠাকুরের স্ত্রী প্রণতি চক্রবর্তী বলেন, দূরের ভক্তবৃন্দদের বাড়িতে অবস্থান করে বাউল গান শেখানোর জন্য আজ থেকে ১০ বছর আগে তারা এ ঘরটি নির্মাণ করেন। গান শেখানোর জন্য সেখানে একতারা, দোতারা, ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি, বেহালাসহ বিভিন্ন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র এনে ঘরে রাখেন। এছাড়া বাউল গানের পুরোনো বইখাতাও এ ঘরে সংরক্ষিত ছিলো। আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে, এখন আর গান শেখানোর কোন ব্যবস্থা নেই।
বাউল আপেল মাহমুদ বলেন, এ কাজটি যে-ই করে থাক, তা খুবই জঘন্য। আগুন দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, উজান ধলের রবনী মোহন চক্রবর্তী কীর্ত্তনীয়া ছিলেন। তার ছেলে রুহী ঠাকুর ও রণেশ ঠাকুর বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল। ওস্তাদ শাহ্ আব্দুল করিম ও বড় ভাই রুহী ঠাকুর মারা যাবার পর ভাটি অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে যে কজন বাউল জনপ্রিয়, এরমধ্যে অন্যতম রণেশ ঠাকুর। বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের বাড়ি লাগোয়া রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে করোনা কালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বাউল আসর বসতো। রণেশ ঠাকুরের বসত ঘরের উল্টোদিকে তার বাউল আসর ঘর। ওখানেই তার নিজের ও শিষ্যগণের যন্ত্রপাতি থাকতো। রোববার রাত ১১টায় পরিবারের সকলে ঘুমোতে যান। রাত ১টার পর রণেশ ঠাকুরের বড় ভাইয়ের স্ত্রী সকলকে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। অন্যরা ঘুম থেকে উঠে দেখেন আসর ঘর পুড়ে যাচ্ছে। পরে আশপাশের লোকজন চেষ্টা করে আগুন নেভালেও পুরো ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের ছেলে নূর জালাল জানান, রাত প্রায় দেড়টায় চিৎকার শুনে তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখেন বাউল রণেশ ঠাকুরের আসর ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। রণেশ ঠাকুর কান্নাকাটি করছেন। পরে সকলের চেষ্টায় আগুন নেভালেও রণেশ ঠাকুরের প্রায় চল্লিশ বছরের সাধনার সকল যন্ত্রপাতি, গানের বই-পত্র পুড়ে ছাই হয়েছে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন লাগানোর ঘটনাটি খুবই গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে দুবার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দ্রুত এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সফিউল্লাহ বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং ক্ষতিগ্রস্তকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
এনএস/