ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে আম্পানের তাণ্ডবে ১২ জনের মৃত্যু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৩ এএম, ২১ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার

আমহার্স্ট স্ট্রিটে গাছের নিচে চাপা পড়েছে ট্যাক্সি। ছবি: সংগৃহীত

আমহার্স্ট স্ট্রিটে গাছের নিচে চাপা পড়েছে ট্যাক্সি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে, হাওড়া, হুগলী এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক এলাকায়। হাজার হাজার কাঁচা বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন আম্পানের ভয়াল থাবা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাত দিয়ে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।  তবে ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসেব এখনও জানা যায়নি।

বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি রুপিতে পৌঁছাতে পারে। ঝড়ের তাণ্ডবলীলা বোঝাতে গিয়ে বারবারই তিনি রাজ্যের সর্বনাশ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই ২৪ পরগনা ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়িঘর, নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে, ফসলের মাঠ ভেসে
গেছে।’ ১০ থেকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার কথা জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। 

ঝড়ের সময়ের নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘নবান্নে আমার অফিস কাঁপছিলো। মনে হলো যেন যুদ্ধকালীন একটি কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করলাম।’

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, কলকাতার রিজেন্ট পার্কে দেওয়াল চাপা পড়ে এক মহিলা ও তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আরও দু’জনের মৃত্যুসংবাদ পাওয়া গেছে। উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয় নুরজাহান বেওয়া নামে এক মহিলা (৫৬) গাছ ভেঙে পড়ে এবং গোপাল ভুঁইয়া (৩২) নামে এক যুবক ঝড়ে উড়ে আসা অ্যাসবেস্টসের আঘাতে মারা গেছেন। বসিরহাট-২ ব্লকের মোহান্ত দাস (২০)  নামে এক যুবক গাছ পড়ে এবং হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় লক্ষ্মীকুমার সাউ নামের তের বছরের এক কিশোরী বাড়ির টিনের চাল ভেঙে মারা গেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে মাটির বাড়ি চাপা পড়ে ছবিরানি শিট (৫৮) নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তাঁর ছেলেও। 

পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে তিন জন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে এক মহিলা আহত হয়েছেন। কচুবেড়িয়া জেটি ভেঙে মূল ভূখণ্ড থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে সাগরদ্বীপ। নামখানা, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, ভাঙড়, বসিরহাট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচুর ঘরবাড়ি, মাঠের ফসল নষ্ট হয়েছে। সুন্দরবনে বন দফতরের বিভিন্ন ক্যাম্পে পানি ঢুকেছে। তবে প্রচুর মানুষকে আগেভাগে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ায় মৃত্যু অনেকটাই এড়ানো গেছে বলে প্রশাসন মনে করছে। 

লণ্ডভণ্ড অবস্থা বিধাননগর পুর এলাকার। নিউ টাউন, রাজারহাটেও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সল্টলেকের অধিকাংশ ওয়ার্ডে গাছ ভেঙে পড়েছে। দত্তাবাদ-সহ একাধিক জায়গায় কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে। তবে বিপজ্জনক বাড়ি, নিচু এলাকা থেকে আগেই লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিল প্রশাসন।

উত্তর ২৪ পরগনায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বসিরহাটে। এই জেলায় প্রায় ১০ হাজার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। দমদম, বিরাটি, নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসতের বহু এলাকায় খুঁটি উপড়ে বা ট্রান্সফর্মার ফেটে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। হাওড়ার বহু জায়গায় বাড়ি ভেঙেছে, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ঝড়ের দাপটে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হিমশিম খেয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশ। 

এএইচ/