আম্পানের কবলে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১২ এএম, ২২ মে ২০২০ শুক্রবার
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পানের’ আঘাতে বিপর্যয়ের কবলে দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা। প্রায় সোয়া দুই কোটি গ্রাহক দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছন্ন ছিল। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের অন্য এলাকাতেও ঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও উপকূলীয় এবং উত্তরের অনেক জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতের এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় এক কোটি গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎহীন। ৬০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ভোলা, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, পোল ভেঙে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৬০ শতাংশে রিকভার করা গেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ৯০ ভাগ এলাকা রিকভার করা যাবে।’
দেশে ছয়টি বিতরণ সংস্থার অধীনে রয়েছে তিন কোটি ৬৫ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক। তার মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি গ্রাহকের সংযোগ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ বা বিচ্ছিন্ন থাকায় চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় সচল এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের ভোল্টেজ বেড়ে যায়। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আরও অনেক এলাকায় সরবরাহ বন্ধ রাখা হয় বলে বিতরণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থার এই বিপর্যয়ের মধ্যে অনেক উৎপাদনকেন্দ্রও বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ঝড়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আম্পানে সারা দেশে প্রায় আড়াই হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাড়ে ৫ হাজার পোল হেলে পড়েছে। গাছ ভেঙে পড়ে সাত থেকে আট হাজার কিমি লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রায় ৯শ ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার।
স্বাভাবিক সময়ে এই মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াট হলেও আম্পানের কারণে বুধবার রাতে তা আড়াই হাজার মেগাওয়াটে নেমে যায়। বিতরণ ব্যবস্থার মেরামতের পরও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাহিদা পাঁচ হাজার মেগাওয়াট পেরোয়নি।
আম্পানে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। সারা দেশে গ্রাহক দুই কোটি ৮৫ লাখ। তার মধ্যে প্রায় দুই কোটি গ্রাহক ঝড়ের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল জানান আরইবির সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অঞ্জন কান্তি দাশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া গণমাধ্যমকে জানান, কুষ্টিয়া ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাব স্টেশনে দুটি ট্রান্সফরমার জ্বলে গেছে। ফলে কুষ্টিয়াসহ পাশের কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রয়েছে। কিবরিয়া জানান, ট্রান্সফরমার মেরামতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। ভেড়ামারা থেকে বিদ্যুৎ এনে বিকল্প উপায়ে জরুরী স্থাপনায় সরবরাহের চেষ্টা করছে আরইবি। দেশের অন্য স্থানে সঞ্চালন লাইনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। সেখানে বিতরণ সংস্থাগুলো লোড কমিয়ে দেওয়ার কারণে হয়েছে। চাহিদা অনুসারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাজশাহীর আট জেলার বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘তারা অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে পেরেছেন। তবে ঝড় থাকায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম কালিগঞ্জ উপজেলায় সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়নি। এছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে বৃষ্টি হচ্ছে এমন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।’
এমএস/এসি