করোনা দূর করতে ড. বিজন শীলের গুরুত্বপূর্ণ টিপস
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ২৪ মে ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১২:৪৮ পিএম, ২৪ মে ২০২০ রবিবার
বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। এক পরিচিত নাম। তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালের প্রধান বিজ্ঞানী। বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও সহজ-স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি (টেস্টিং কিট) উদ্ভাবন করে আলোচনায় ড. বিজন কুমার শীল।
বিশ্বব্যাপী যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রোগ শনাক্তে কিট সংকটে ভুগছে তখন বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে মাত্র ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই জানা যাবে আপনি করোনায় আক্রান্ত কীনা। চিন্তা না করে দিয়েছেন ঘরের মধ্যেই এর চিকিৎসা সেবা।
ডঃ বিজন শীল জানান, যেকোনও ধরনের গলা খুশ খুশ বা কাশি দেখা দিলেই আর অপেক্ষা করা উচিত হবে না। ওটা করোনা না করোনা নয়, এ নিয়ে চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। বরং ওই মুহূর্ত থেকে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো আদা (জিঞ্জার) ও লবঙ্গ (ক্লোব) একসঙ্গে পিষে সেটাকে গরম পানিতে সিদ্ধ করে তার সঙ্গে কিছুটা চা দিয়ে ওটা এক কাপ মতো নিয়ে গারগল করে খেতে হবে। দিনে অন্তত তিন-চারবার এক কাপ করে এটা খেতে হবে। এর ফলে গলার ভেতরের কোষগুলোতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। এতে কোষগুলো শক্তিশালী হবে। কোষগুলোর ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষগুলো সমর্থ হবে কোভিড-১৯ ভাইরাস যদি আক্রমণ করে, তাকে প্রতিরোধ করতে।
যাদের গলা খুশখুশ করে না বা কোনও কাশি দেখা দেয়নি, তারাও এটা নিয়মিত দিনে দুইবার অন্তত দু’কাপ খাবেন। তাতে তাদেরও ইমিউনিটি বাড়বে। এর পাশাপাশি যাদের জোগাড় করা সম্ভব, বিশেষ করে যারা গ্রামে আছেন, তারা এখন নিমপাতা পাবেন। ওই নিমপাতা একটু পানি দিয়ে পিষতে হবে। পেষার ফলে যে সবুজ রঙের রসটি বের হবে সেটার সঙ্গে গরম পানি মিশিয়ে তা গারগল করে খেতে হবে। এর ফলে গলার কোষগুলোয় রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ইমিউনিটি বাড়বে। যা অনেক বেশি সমর্থ হবে করোনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পরাজিত করতে।
এর পাশাপাশি তিনি ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন একগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই ভিটামিন সি’র সঙ্গে অবশ্যই কিছুটা পরিমাণ জিঙ্ক থাকতে হবে কারণ, ভাইরাসের ‘আর ডি ডি’কে ব্লক করে দিতে সমর্থ হয় জিঙ্ক। যার ফলে ওই ভাইরাস সহজে রোগীকে আক্রান্ত করতে পারে না।
ড. বিজন শীলের মতে, করোনা থেকে বাঁচার আরেকটি উপায় হচ্ছে-টয়লেট পরিষ্কার রাখা। কারণ, কমোড, প্যান এবং বেসিন থেকে কফ, থুতু, প্রস্রাব ও পায়খানার মাধ্যমে করোনা বা কোভিড-১৯ ছড়ায় বেশি। রোগীর কফ ও থুতুর মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন- করোনা আমাদের গলা থেকে ফুসফুসে গিয়ে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে ফুসফুসে পানি জমে যায়। তখন রোগী মৃত্যুর মুখে চলে যায়।
ড. বিজন শীল বলেন, করোনার এই যে তিনটি পর্যায় অর্থাৎ প্রথমে গলায় আক্রমণ করা। অর্থাৎ গলায় খুশ খুশ কাশি হবে। এর পরে এটা আমাদের ফুসফুসের ব্রঙ্ক অ্যালভিয়োলিতে চলে যায়। ব্রঙ্ক অ্যালভিয়োলিতে যাওয়া দ্বিতীয় স্টেজ। তৃতীয় বা শেষ স্টেজ হচ্ছে ব্রঙ্ক অ্যালভিয়োলিতে পানি জমানো। ড. বিজন শীলের পরামর্শ হলো, করোনাকে প্রথম স্টেজেই অর্থাৎ গলা খুশ খুশ অবস্থাতে দমন করতে হবে। আর সেজন্য তিনি মনে করেন তার ওই আদা, লবঙ্গ এবং চা থেরাপি আর নিমপাতা থেরাপি অনেক কার্যকর হবে।
এর পাশাপাশি তিনি ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন একগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই ভিটামিন সি’র সঙ্গে অবশ্যই কিছুটা পরিমাণ জিঙ্ক থাকতে হবে। যতদূর খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বাজারে এ মুহূর্তে ভিটামিন সি ওইভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, প্রধানমন্ত্রীও তার ৩২টি সাবধানতার ভেতর এই ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ কারণে বাজারে যা ভিটামিন সি ছিল, তার প্রায় সবই এখন বিক্রি হয়ে গেছে।
ড. বিজন শীল বলছেন, এই ভিটামিন সি’র সঙ্গে জিঙ্ক থাকতে হবে। কারণ, ভাইরাসের ‘আর ডি ডি’কে ব্লক করে দিতে সমর্থ হয় জিঙ্ক। যার ফলে ওই ভাইরাস সহজে রোগীকে আক্রান্ত করতে পারে না। তাতে দেখতে পাই এই মুহূর্তে গণস্বাস্থ্য একটি ভিটামিন সি তৈরি করছে, যার সঙ্গে তারা জিঙ্ক দিচ্ছে। আমাদের স্কয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, ইনসেপ্টা, অপসোনিন এমনি অনেক বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি রয়েছে।
ড. বিজন শীল যেসব থেরাপির পরামর্শ সবই ভেষজ পদ্ধতির। এছাড়া তিনি দুই প্রকারের ভিটামিন খেতে বলছেন। এতে শরীরে ক্ষতি হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাই এ বিষয়ে যেহেতু তিনি বিশেষজ্ঞ তার পরামর্শ আমাদের এখন থেকে মানা উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব সময় গরম পানি খাওয়ার জন্য। গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলেও উপকার পাওয়া যায়। আবার অনেকে তেজপাতা, কালোজিরা, রসুন, আদা, লবঙ্গ খাওয়ার কথা বলছেন।
শুধু করোনা নিয়েই নয় মহামারি আকার ধারণ করা সার্স নিয়েও ড. বিজন শীলের রয়েছে অনেক অভিজ্ঞতা। কারণ, সার্সের কুইক টেস্টের আবিষ্কারক ড. বিজন শীল। তার নামেই এই টেস্টটি প্যাটেন্ট করানো। এটাই চীনসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সার্স রোগ টেস্টে ব্যবহার হয়। সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ওই সময়ে সার্স প্রতিরোধে যে ক’জন বড় ভূমিকা রেখেছেন, ড. বিজন শীল তাদের একজন। সার্স প্রতিরোধের পুরো সময়টি তিনি সিঙ্গাপুর সরকারের একজন বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন।
বর্তমান সময়ের এক আতঙ্কিত নাম করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে আজ রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল পর্যন্ত বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনার শিকার হয়েছেন ৫৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৯৯ হাজার ৮৫৪ জন। নতুন করে প্রাণ গেছে ৪ হাজার ১৮৩ জনের। এ নিয়ে করোনাঘাতে পৃথিবী থেকে গত হয়েছেন বিশ্বের ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬০৮ জন মানুষ।
এছাড়া বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী গতকাল শনিবার পর্যন্ত করোনার শিকার ৩২ হাজার ৭৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেঁচে ফিরেছেন ৬ হাজার ৪৮৬ জন।
করোনা প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই যুদ্ধে সফল হতে গেলে সরকারের দেয়া বিভিন্ন নির্দেশনা পালন করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. বিজন শীলের পরামর্শগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব নির্দেশনাগুলো মেনে চললে হয়ত খুব তাড়াতাড়ি আমরা করোনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।
এমবি//