করোনার কঠিন সময়ে কী ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৪৭ পিএম, ২৫ মে ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৯:২০ এএম, ২৬ মে ২০২০ মঙ্গলবার
দেশ যখন করোনার কঠিন সময় পার করছে তখন সরকারপ্রধান কী ভাবছেন, কী বা করছেন? নিশ্চয় প্রশ্নটি অনেকের। সংক্রমণের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনার মূলেই দেশের জনগণ। তাইতো মানুষকে সচেতন করা থেকে শুরু করে সাধারণ ছুটিতে কষ্টে থাকা অসহায়দের পাশে থেকেছেন তিনি। ভুলে যাননি মধ্যবিত্তদেরও। যারা কোনো কিছু হাত পেতে চাইতে পারেন না। দেখতে হচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। আবার শিল্প বাঁচিয়ে অর্থনীতির স্বাস্থ্য যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও নজর আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
বাঙালি যখন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই বিশ্ব মহামারি করোনার কালো ছায়া ঘিরে ধরে বাংলাদেশকেও। সব প্রস্তুতি থাকার পরও মুজিববর্ষের মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। একেবারে শুরু থেকেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয় শেখ হাসিনার সরকার। কারণ বাবার মতোই তার ভাবনার মূলেও দেশ ও দেশের মানুষ । স্বাস্থ্যবিধি মানা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখাসহ মানুষকে সচেতন করার কাজটিও শুরু করেন তিনি।
সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে চলছে সাধারণ ছুটি। একেবারে শুরু থেকেই কষ্টে থাকা কর্মহীনদের পাাশে থেকেছেন সরকার প্রধান। দলের নেতাকর্মীদেরও তাদের পাশে থাকতে নির্দেশ দেন। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন তিনি। রেশন কার্ডের সংখ্যা আরো ৫০ লাখ বাড়িয়ে ১ কোটি করে দেন।
যারা কোনো ভাতা পান না সে রকম ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপহার হিসেবে মোবাইল সেবার মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রমাণ করেছেন তিনি কতটা মানবিক। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রত্যেক পরিবারের হাতে ঈদের আগেই এই টাকা পৌঁছে দেয়া হয় এই টাকা।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। আমরা হয়তো অনেক বেশি দিতে পারবো না। কিন্তু কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সবাই যাতে সামান্য হলেও সহায়তা পায় আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া দেশের সকল মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য ঈদের আগে ‘ঈদ উপহার’ পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে বিভিন্ন মসজিদে ইমাম-মোয়াজ্জেমসহ অন্যান্যরা আছেন। সাধারণত রমজান মাসে সবাই মসজিদে বেশি যায়। তারাবির নামাজ পড়েন, অনেকে দান করেন। এতে মসজিদের ভালো ইনকাম হয়। আমি খোঁজ নিচ্ছি, এখনও অনেক মসজিদ কমিটি ও বিত্তশালীরা দান করে যাচ্ছেন-এ খবর আমি জানি। তারপরও সরকারের একটা দায়িত্ব আছে।’
পবিত্র মাহে রমজান ও করোনা ভাইরাস উপলক্ষে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোতেও অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ৬ হাজার ৯শ ৫৯টি কওমী মাদ্রাসাকে ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে জনগণকে সচেতন করা হয়। করোনার চিকিৎসা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে গত ৪মে দুই হাজার চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এছাড়া গত ৭মে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী হাসপাতালগুলোতে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে পদায়নের জন্য ৫ হাজার ৫৪ জন নার্সকে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী হিসেবে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী গত দু’মাসে ছয়টি ভিডিও কনফারেন্সে ৫৮টি জেলার মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে গোটা দেশের চিত্র জানার চেষ্টা করেছেন। করোনা মোকাবেলায় তাদেরকে দিয়েছেন দিক নির্দেশনা। এছাড়া করোনার কারণে শ্রমিক সংকটে বোরো ধান তোলা নিয়ে যখন সংশয় তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশেই মাঠে নামে ছাত্রলীগ। হাওরে কৃষি শ্রমিক পাঠাতে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। কৃষিতে প্রণোদনার পাশাপাশি আমন বিজ দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই স্বাস্থ্য খাতের দিকে নজর রেখেছেন। তার প্রত্যক্ষ নজরদারির কারণেই দ্রুততম সময়ে কেটে গেছে করোনা পরীক্ষার কিট সংকট, বেড়েছে ল্যাবের সংখ্যা ও পরীক্ষার পরিধি। অর্থনীতিকে বাঁচানোর কৌশলও আটতে হচ্ছে সরকার প্রধানকে। এরইমধ্যে কয়েক ধাপে এক লাখ এক হাজার ১৭ কোটি টাকার ১৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তিনি।
এতো কিছুর পরও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে গণভবনে মন্ত্রীসভার বৈঠক করেছেন, বাজেট নিয়েও একাধিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মোকাবেলায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী একে শতাব্দীর ভয়াবহ সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়ে মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির জন্য কী কী করা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিল্প খাতের জন্য সম্ভাব্য করণীয়, ব্যাংক সুদ সিঙ্গেল ডিজিটের বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিনিয়ত দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না বলে হুশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে সার্ক নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। করোনা মোকাবেলায় তার নেতৃত্বের প্রশংসা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকার যেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া সম্ভব হতো না। সরকার এ পর্যন্ত সারাদেশে সোয়া এক কোটি পরিবারের সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে সরকার।
এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২২ মে পর্যন্ত সারাদেশে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৭ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৯৩ মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ২ হাজার ৯৪৮টি এবং উপকারভোগী লোক সংখ্যা ৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৯ জন।
শিশু খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের জন্য নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮১ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা এবং বিতরণ করা হয়েছে ৬৯ কোটি ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৩ টাকা। এতে উপকারভোগীর পরিবার সংখ্যা ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৭২ টি এবং উপকারভোগী লোক সংখ্যা ৩ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার ৫৪৭ জন। শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বরাদ্দ ২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫ হাজার ৩৬ টাকা । এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৬টি এবং লোক সংখ্যা ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৬ জন।
সরকারের ত্রাণ বিতরণ এখনো অব্যহত আছে। গবীব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিটি এলাকার এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার থাবায় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেখানে পরাস্ত সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তা ইতিহাসে বিরল।
সবচে কঠিন এই সময়ে এক মুহূর্তও বসে নেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জনগণের জন্যই কাজ করছেন তিনি। পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে দোয়া করছেন বাংলার মানুষের জন্য। সব হারিয়ে এ বাংলার মানুষকেই যে তিনি আপন করে নিয়েছেন। তার কঠোর পরিশ্রম ও বিচক্ষণতায় অদৃশ্য শক্তিকে মোকাবেলা করে আবারো বাংলার ঘরে ঘরে শান্তি ফিরে আসুক এমনটাই আশা করেন দেশের আপামর জনসাধারণ।
এমবি//