বৃদ্ধা মাকে ফেলে গেল রাস্তায়, ৩ ছেলে গ্রেপ্তার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৪৬ পিএম, ২৬ মে ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:৪৮ পিএম, ২৬ মে ২০২০ মঙ্গলবার
৮৬ বছরের বৃদ্ধা সিরাতুন্নেছা- ছবি একুশে টিভি।
বৃদ্ধার নাম সিরাতুন্নেছা, বয়স ৮৬ বছর। নূর মোহাম্মদ মোল্লার স্ত্রী। জয়পুরহাট পৌর শহরের জানিয়ার বাগান এলাকার বাসিন্দা। নূর মোহাম্মদ ঢাকায় নাভানা কোম্পানীতে ষ্টোর কিপার হিসেবে চাকুরী করতেন। মারা যান ১৮-১৯ বছর আগে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই জানিয়ার বাগান এলাকায় বসবাস করেন সিরাতুন্নেছা। পৈতৃক সূত্রে সিরাতুন্নেছা ১৫ শতক জমি পান বাবার কাছ থেকে। যার মূল্য বর্তমানে দুই কোটি টাকার উপরে।
সিরাতুন্নেছার এই সম্পত্তি কৌশলে তার ছেলেরা লিখে নেওয়ার পর থেকেই চলে তার উপরে ভরণ পোষণের অবহেলা, মানসিক নির্যাতন, চরম অমানবিক আচরণ। এরই বর্হিপ্রকাশ ঘটে ঈদের দিনে। অচল প্রায় বৃদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে যায় ছেলেরা। বৃদ্ধার আহাজারি করতে দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন।
পরে পুলিশ অসহায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে সোমবার (২৫ মে) রাতে জয়পুরহাট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাময়িক সময়ের জন্য সেফ হোমে রেখে আসেন। ওই দিন রাতেই বৃদ্ধার পক্ষে তার নাতবৌ শিল্পী আক্তার বাদী হয়ে তার শ্বশুর ও চাচা শ্বশুড়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বৃদ্ধার তিন ছেলেকে নিজ বাড়ি থেকে আব্দুর রাজ্জাক, মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোজাম্মেল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বৃদ্ধ মায়ের দায়িত্ব নেয়ার কথা স্বীকার করেন বড় ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। তার ওপর ভাইয়েরা তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মুচলেকা দেয়ার পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার খান জানান, আটককৃতরা কৌশলে তাদের মায়ের নামের সব জমি লিখে নেন। এরপর থেকে ছেলেরা ৮৬ বছরের ওই বৃদ্ধা মায়ের ভরণপোষণে অবহেলা, গালমন্দ, মানসিক নির্যাতনসহ তার প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে মায়ের ভরণপোষণ কোন ছেলেই আর গ্রহণ করবেন না বলে সোমবার সকালে জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের পাশে বৃদ্ধা ছিরাতুন্নেছাকে ফেলে রেখে চলে যান তারা। পরে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে স্থানীয়দের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে জয়পুরহাট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেফ হোমে রাখা হয়েছে। পারিবারিক আইনে বৃদ্ধা মায়ের দায়িত্ব নেয়ার কথা উল্লেখ করে বড় ছেলে মুচলেকা দিলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জয়পুরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আরাফাত হোসেন মুন বলেন, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইনে মামলার পর যদি কোন ছেলে ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়, তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। এটা জয়পুরহাটের জন্য দৃষ্টান্ত হলো।
এনএস/