আক্রান্তে শীর্ষ নয়ে ভারত, বাড়তে পারে লকডাউন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ২৯ মে ২০২০ শুক্রবার
করোনা সংক্রমণে একইপথে হাটছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত। প্রতিনিয়ত রেকর্ড আক্রান্তে দেশ দুটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে শীর্ষ দেশগুলোকে।
লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিলে যেমনটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা, তেমনি ভারতে প্রকোট আকার ধারণ করেছে ভাইরাসটি। উৎপত্তিস্থল চীন আর মধ্যপ্রাচ্যের ইরানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে শীর্ষ দশে ঢুকে পড়ে মোদির দেশ। এবার একদিনে রেকর্ড আক্রান্ত নিয়ে তুরস্ককে ছাপিয়ে শীর্ষ নয়ে উঠেছে দেশটি।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ৪৬৬ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। যা একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত। এতে করে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি ও গুজরাটে। এই চার রাজ্যেই আক্রান্ত ১ লাখের বেশি।
অপরদিকে, নতুন করে প্রাণ গেছে ১৭৫ জনের। এই নিয়ে প্রাণহানি ৪ হাজার ৭০৬ জনে ঠেকেছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯৮২ জনের। ৯৬০ জন মারা গেছে গুজরাটে। মধ্যপ্রদেশে মৃতের সংখ্যা ৩২১, পশ্চিমবঙ্গে ২৯৫। শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে দিল্লি (৩১৬), উত্তরপ্রদেশ (১৯৭), রাজস্থান (১৮০) ও তামিলনাড়ু (১৪৫)।
কেরলে শুরু হয়েছিল দেশের করোনা সংক্রমণ। তার পরই শীর্ষে চলে আসে মহারাষ্ট্র। হু হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে সেখানে। এখনও সেই ধারা অব্যাহত। দেশের মধ্যে সংক্রমণের হারে শীর্ষে সেই মহারাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায়, দু’হাজার ৫৯৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। এ নিয়ে সে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫৪৬ জন। এর মধ্যে মুম্বইয়েই আক্রান্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি।
আক্রান্তের হিসাবে রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৩৭২ জন। এর পরেই রাজধানী দিল্লি। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ২৮১ জন। গুজরাটে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৬২ জন।
এরপর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (৮ হাজার ৬৭), মধ্যপ্রদেশ (৭ হাজার ৪৫৩), উত্তরপ্রদেশ (৭ হাজার ১৭০), পশ্চিমবঙ্গ (৪ হাজার ৫৩৬), বিহার (৩ হাজার ২৯৬), অন্ধ্রপ্রদেশ (৩ হাজার ২৫১), কর্নাটক (২ হাজার ৫৩৩), তেলঙ্গানা (২ হাজার ২৫৬), পঞ্জাব (২ হাজার ১৫৮), জম্মু-কাশ্মীর (২ হাজার ৩৬), ওড়িশা (১ হাজার ৬০), হরিয়ানা (১ হাজার ৫০৪) ও কেরল (১ হাজার ৮৮)।
পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কলকাতার আশপাশ ছাড়িয়ে দূরের বিভিন্ন জেলাতেও বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। এই মুহূর্তে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৩৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৪ জন। এখনও অবধি রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯৫ জনের।
রাজ্য সরকারের প্রকাশিত বুলেটিনের হিসেবে, করোনাভাইরাসের জেরে মৃতের সংখ্যা ২২৩। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কোমর্বিডিটির কারণে।
করোনাভাইরাসে যেমন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তেমন সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও নেহাত কম না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এটাই যেন আশার আলো। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর এখনও অবধি সুস্থ হয়েছেন ৭১ হাজার ১০৬ জন। এর মধ্যে তিন হাজার ৪১৪ জন সুস্থ হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
এদিকে, আগামী ৩১ মে শেষ হচ্ছে চলমান চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউন। এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কথা বলেছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে জানা গেছে।
যেখানে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে, নাকি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যাবে, তা নিয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীরা।
সূত্রের খবর, অন্যান্যবার ক্যাবিনেট সচিব প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করলেও, এবার ছিল রাজনৈতিক পদক্ষেপ। করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ এবং একাধিকবার তার পরিবর্তন করা নিয়ে বিরোধী দল এবং মুখ্যমন্ত্রীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।
এই সপ্তাহের গোড়াতেই ভারত করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথম দশে ঢুকে পড়েছিল। আর গত ২৪ ঘণ্টায় তা নয়ে উঠে আসে। এতে করে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মোদির কপালে। সবকিছু বিবেচনা করে লকডাউন আরও দু’সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এআই//