শার্শায় সরকারি চাল বিতরণে অনিয়মের পাহাড়
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০১:৫৫ পিএম, ১ জুন ২০২০ সোমবার
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০টাকা কেজি দরের সরকারি চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে এই তালিকায় মেম্বারের চাচাতো ভাই ও ডিলারের আপন ভাই শফিকুল বিশ্বাস (৬১৯) ও তার স্ত্রী সালমা খাতুন (৫০৪), সাইফুল বিশ্বাস (৬২০), রফিকুল বিশ্বাস (৬২১), ফজলু বিশ্বাসের (৬২২) পরিবারে ৫টি, এভাবে তাদের চাচা ছাত্তার বিশ্বাসের পরিবারে ৪টি ও চাচাতো ভাই সেলিম রেজার পরিবারে ৩টি কার্ড আছে।
একাধিক কার্ড আছে এমন পরিবারের সংখ্যা ১৪টি, কর্তা প্রবাসে আছেন এমন পরিবারের সংখ্যা ৯টি, স্বচ্ছল পরিবারের সংখ্যা ২৬টি ও খুঁজে পাওয়া যায়নি এমন পরিবারের সংখ্যা ৯টি।
উপজেলার ৮নং বাগআঁচড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বাগআচড়া সাতমাইল ও পিপড়াগাছি গ্রামের মেম্বর আসাদুল ইসলাম ও ডিলার মেম্বারের চাচতো ভাই নজরুল ইসলাম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাধারণ মানুষ এই অভিযোগ করেন।
বাগআঁচড়া জিবলিতলা আইসি ক্যাম্প মোড়ে আসাদুল ইসলাম মেম্বরের দোকান থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৬৮০ জন দুস্থ অসহায়, সুবিধাভোগী ও হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হয়।
মেম্বর নিজে বিভিন্ন লোকের আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তালিকায় তাদের নাম ব্যবহার করে নিজেই সেই চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মফিজ উদ্দীন, আবু সাঈদ, ইউসুফ আলীসহ তালিকায় নাম রয়েছে এমন কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ডে তাদের নাম আছে, সেটা তারা জানতেন না। চার বছর ধরে ওই তালিকার চাল কাউকে না জানিয়ে মেম্বর নিজে আত্মসাৎ করেছেন।’
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বররা স্ব স্ব ওয়ার্ডে যাচাই-বাছাই করে এই তালিকা চূড়ান্ত করেন। তালিকা মোতাবেক তাদের নামে কার্ড বণ্টন করা হয়। ডিলাররা ওই কার্ড অনুযায়ী চাল বিতরণ করেন। এখানে ডিলার মেম্বরের আত্মীয় হওয়ায় এই অনিয়মের সুযোগ পেয়েছেন। পুনরায় এর ভিতরে কোন অনিয়ম থাকলে সেটি সংশোধন করে দিতে বলা হলে সে ১৬টি নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে। পরে বিষয়টি তদন্ত করে আমার কাছে ৫৮টি ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে।’
ওএমএস কার্ডে বিত্তবানদের নাম তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিলার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি সৎ পথে রয়েছি। আমার জানামতে, আমি কোনো ভুল করিনি। নামের তালিকা করে মেম্বার। সেখানে আমার কোন হাত নেই।’
বাগআঁচড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বর ও ডিলার আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভূল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দেন।’
শার্শা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা কোনো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির অন্তর্ভুক্ত নন, তাদের জন্য বিশেষ ওএমএস সুবিধা চালু করা হয়েছে।’
বাগআঁচড়া খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, ‘৬৮০ জন উপকার ভোগীর জন্য আসাদুল মেম্বর গত ১৭ মে বাগআঁচড়া খাদ্য গুদাম থেকে ২০ হাজার ৪০০ কেজি চাল উত্তোলন করেছেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দুস্থ অসহায় সুবিধাভোগী ও হতদরিদ্রদের মাঝে এই চাল উত্তোলনের এক সপ্তাহের মধ্যে বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও বুধবার তার দোকান থেকে চাল সরানোর সময় স্থানীয়রা আটকে দেয়।’
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, ‘আমি এমন একটি অভিযোগের কথা শুনেছি। এটি সংশোধন করার জন্য সময় দিয়েছি। অভিযোগ পাওয়া গেলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে দোষি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এআই//