ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

স্বপ্ন পূরণে ভারতের প্রথম মিস বিনোদন জগত ছেড়ে দেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:১১ পিএম, ২ জুন ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:১৪ পিএম, ২ জুন ২০২০ মঙ্গলবার

শুধু প্রথম ভারতবাসী হিসাবেই নন,  প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯৬৬ সালে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয়ী হন রীতা ফারিয়া। বিশ্বকে চমকে দিয়ে বিশ্বসুন্দরীর তাজ মাথায় উঠেছিল। দেশে ফিরে পেয়েছিলেন মডেলিং ও অভিনয়ের অজস্র সুযোগ পেয়িছিলেন। কিন্তু সে সব দিকে পা রাখেননি। তিনি  চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন।

রীতার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বম্বে শহরে ১৯৪৩ সালের ২৩ অগস্ট। তাঁর বাবা মা ছিলেন গোয়ার বাসিন্দা । তাঁর বাবা কাজ করতেন মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্টে।  একটি বিউটি পার্লার ছিল মায়ের।

২৩ বছর বয়সি, ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার রীতা তখন গ্রান্ট মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ছিলেন কিছুটা মজা করেই যোগ দিয়েছিলেন ‘মিস বম্বে’-র মঞ্চে। ছবি তোলাবার জন্য দিদি ফিলোমেলার সঙ্গে স্টুডিয়ো গিয়েছিলেন।  

‘মিস মু্ম্বই ক্রাউন’ জয়ী হওয়ার পরে রীতা ১৯৬৬ সালে ‘ইভস উইকলি মিস ইন্ডিয়া’ মঞ্চেও বিজয়িনী হন। রীতা মিস মু্ম্বই ক্রাউন’ জয়ী হওয়ার পরে, ‘ইভস উইকলি মিস ইন্ডিয়া’ মঞ্চেও বিজয়িনী হন ১৯৬৬ সালে। সে বছর ‘ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া’ হয়েছিলেন ইয়াসমিন ডাজি। মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে প্রথম তিন জনের মধ্যে থাকতে পারেননি রিতা। তিনি মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সম্ভাব্য বিজয়িনীদের মধ্যে ও ছিলেন না। 

সে বার প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল লন্ডনের ওয়েলিংটন স্ট্রিটের লাইসিয়াম বলরুমে। লন্ডনের বুকিদের খেলা জমে উঠেছিল কে বিজয়িনী হবেন, তা নিয়ে। ৬৬ জন সুন্দরীর মধ্যে সে বারের মিস লন্ডন জেনিফার লোয়ি প্রতি বুকিদের বাজি ছিল। মাত্র এক জন প্রবাসী ভারতীয় রীতার জন্য বাজি ধরেছিলেন। রীতা ফারিয়া অপ্রত্যাশিত ভাবে সেই মঞ্চে বিজয়িনী হন। রাতারাতি কপাল বদলে যায় বাজিতে জয়ী হওয়া ওই প্রবাসী ভারতীয়র। রীতার জীবন ও বদলে যায় । 

বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে ঢুকে পড়বেন গ্ল্যামারবৃত্তে তিনি আশা করেননি। সারা পৃথিবীর সুন্দরীদের সঙ্গে টক্কর দিতে রীতার সম্বল ছিল সুটকেস ভর্তি ধার করা জামাকাপড়, মেক আপ কিটে কয়েকটা লিপস্টিক, পার্সে তিন পাউন্ড। প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগে ছিল না পাসপোর্ট-ও।

রীতা একটা শাড়ি চেয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, মুম্বইয়ের উচ্চবিত্ত সমাজে পরিচিত এক মহিলার কাছ থেকে। ১৯৬৫ সালের মিস ইন্ডিয়া খেতাবজয়ী পার্সিস খাম্বাট্টা বেদিং সুট দিয়েছিলেন, কিন্তু পার্সিসের উচ্চতা তাঁর তুলনায় কিছুটা কম ছিল। ফলে রীতাকে সেই স্নানপোশাক কোনওভাবেই মানায়নি। তাঁর জুতোজোড়াও প্রতিযোগিতার সঙ্গে বেমানান ছিল।

পরবর্তীতে রীতা জানান এক সাক্ষাৎকারে, তিনি লন্ডন থেকে তিন পাউন্ড দিয়ে আরও একটি পোশাক ও জুতো কেনেন। দুটোর কোনওটাই তবে সে দিনের পরে ব্যবহার করেননি। তবে এখনও কাছে রেখে দিয়েছেন। সেই লাজুক অথচ আত্মপ্রত্যয়ী হাসিও তাঁর সঙ্গেই রয়েছে। যা দিয়ে অর্ধশতকেরও বেশি আগে তিনি জয়ী করেছিলেন তামাম দুনিয়া।

তাঁর উচ্চতা ও ব্যক্তিত্ব-ই বাজিমাত করেছিল এমনটাই রীতার ধারণা। তাছাড়া তুরুপের তাস হিসেবে কাজ করেছিল তিনি যে ডাক্তারির ছাত্রী, সেটাও প্রশ্নোত্তর পর্বে রীতা জানিয়েছিলেন, পরে তিনি চিকিৎসকই হতে চান। এই উত্তরে মুগ্ধ হয়ে ন’জনের মধ্যে সাতজন বিচারকই রীতাকে বেছে নেন মিস ওয়ার্ল্ড হিসেবে।শিরোপা পাওয়ার পরে এক বছর মিস ওয়ার্ল্ডের নির্ধারিত কাজ করেছিলেন রীতা ফারিয়া। তার পর আর থাকতে চাননি গ্ল্যামার দুনিয়ায়। ফিরে গিয়েছিলেন ডাক্তারির পাঠক্রমে।

কিন্তু পরে তিনি আর ভারতে নয় রীতা ডাক্তারি পড়লেন লন্ডনের কিংস কলেজে। সেখান থেকেই পেলেন এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। কিংস কলেজেই পরিচয় হয় আইরিশ চিকিৎসক ডেভিড পাওয়েলের সঙ্গে। তিনি ছিলেন রীতার শিক্ষক। টেলিভিশনে রীতাকে দেখে আগেই মুগ্ধ ছিলেন ডেভিড। এরপর প্রেম গাঢ় হতে সময় লাগেনি। দু’জনে বিয়ে করেন ১৯৭১ সালে। তারপর দু’জনেই চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন বস্টনে। দুই মেয়ের জন্মের পরে তাঁরা চলে যান আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে।

রীতা কিছুদিন ডাক্তারি থেকে দূরে ছিলেন দুই মেয়েকে বড় করার জন্য। মেয়েরা বড় হতেই আবার ফিরে আসেন পেশায়। অবসরের অনেকটা জুড়ে থাকেন দুই মেয়ে-জামাই এবং পাঁচ নাতিনাতনি। ভালবাসেন গল্ফ খেলতে, স্কি এবং রান্না করতে। ডাক্তারি পড়ার সময়ে যে রীতা ডেভিডের কাছে ডিমসিদ্ধর ‘রেসিপি’ জানতে চেয়েছিলেন, দীর্ঘ দাম্পত্যে তিনি এখন রন্ধনপটিয়সী।

ভারতকেও ভুলে যাননি। দেশে প্রতি বছর নিয়মিত আসেন, প্রাক্তন এই বিশ্বসুন্দরীর কাছে গ্ল্যামারের চাকচিক্যের থেকে সম্পর্কের নিশ্চিন্ত আশ্রয় অনেক বেশি ভালবাসার।

এসি