কদর বাড়ছে চার্টার্ড ফ্লাইটের
নাজমুশ শাহাদাৎ
প্রকাশিত : ০৯:০৬ পিএম, ২ জুন ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:৪০ পিএম, ২ জুন ২০২০ মঙ্গলবার
চার্টার্ড ফ্লাইট হিসেবে ব্যবহৃত একটি এয়ারক্রাফট।
দেশের বিত্তশালীদের অনেকেই কিনছেন ব্যক্তিগত বিমান, গড়ে তুলছেন এভিয়েশন কোম্পানি। তার সাথে জরুরী প্রয়োজনে দেশ কিংবা বিদেশে ভ্রমণে বর্তমানে কদর বাড়ছে চার্টার্ড ফ্লাইটের। এক সময় এই চার্টার্ড বিমানের বাজার বিদেশ নির্ভর হলেও এখন দেশীয় উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বিমান কোম্পানি। যারা নিজেদের প্রয়োজন বা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব বিমান পরিচালনা করছেন। বর্তমান করোনাকালে এর ব্যবহার নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা যায়, দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী দেশের বাইরে ভ্রমণে জরুরী প্রয়োজনে আবার কেউ কেউ সবসময় চলাচল করেন এসব চাটার্ড ফ্লাইটে।
এক সময় বিশ্বের কেবল অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই চলাচল করতেন বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে। বর্তমানে এ ফ্লাইটটি কেবল অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য থেমে থাকেনি। সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশেও এর ব্যবহার বাড়ছে। সর্বশেষ দেশের তিনজন ব্যবসায়ীও তাদের চার্টার্ড ফ্লাইটে চড়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি কয়েকটি কোম্পানি দেশে ও বিদেশে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর ব্যয় নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর। তবে গড়পড়তা ঘণ্টা প্রতি প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা গুণতে হয়। সে হিসেবে ইউরোপের দেশে পাড়ি দিতে চাইলে খরচ দাঁড়াবে প্রায় কোটি টাকা। আর চার ঘণ্টা ফ্লাইটে লাগবে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা।
তবে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স চার্টার্ড করতে চাইলে খরচ পড়বে ঘণ্টা প্রতি প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা। এ বিষয়ে বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নভোএয়ারের সিনিয়র ম্যানেজার একেএম মাহফুজুল আলম বলেন, এই খরচটা আসে যাত্রার স্থান ও গন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে। এছাড়া আরও আছে ল্যান্ডিং, পার্কিং, নেভিগেশন, গন্তব্যের রাউণ্ড হিলিংয়ের যদি কোন চার্জ থাকে তার ওপর।
মাহফুজুল আলম আরও বলেন, চার্টার্ড ফ্লাইটে চড়লে যে কোন একটি গন্তব্যে ফ্লাইটটা কিন্তু খালি আসতে হয়। হয়তো যাওয়ার সময় খালি যায় আসার সময় যাত্রী নিয়ে আসে, নয়তো আসার সময় খালি আসে, যাওয়ার সময় যাত্রী নিয়ে যায়। আর এজন্য এই ফ্লাইটে রিটার্ন ভাড়া বা যাওা-আসা উভয়ের ভাড়াই একসাথে গুণতে হয় যাত্রীকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন ব্যবসায়ীর পরিবার সবসময়ই চার্টার্ড ফ্লাইটে বিদেশে যাতায়াত করেন। অনেকক্ষেত্রে জরুরী প্রয়োজনে বা নিজেদের সুবিধাজনক ও দ্রুত সময়ে নিরিবিলি পৌঁছানোর জন্য এই চার্টার্ড বিমান ব্যবহার করা হয়। চলমান করোনাকালেও চার্টার্ড ফ্লাইটে চড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার। তারা অবশ্য নিজেদের এভিয়েশনের হকার ৮০০ বিমানই ব্যবহার করেছেন। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান ও সাবেক মন্ত্রী এম মোরশেদ খান বিদেশ থেকে আনা জেট বিমান চার্টার্ড করে লণ্ডনে গেছেন।
এছাড়াও বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে নিজস্ব হেলিকপ্টার। যার মোট সংখ্যা ৩৪টি বলে জানা যায়। এ তালিকায় থাকা সিকদার গ্রুপের (আরএন্ডআর) ৮টি, সাউথ এশিয়া এভিয়েশনের (আকিজ+বেক্সিমকো) ৮টি, বসুন্ধরা এভিয়েশনের ৪টি, মেঘনা গ্রুপের ৪টি, বিআরবি গ্রুপের ২টি, এটিএল-গ্রুপের ১টি, স্কয়ার গ্রুপের ৩টি, বাওয়াল গ্রুপের ১টি, বিসিএল গ্রুপের ২টি, বেক্সিমকোর ১টি। নিজেরা ব্যবহারের পাশাপাশি ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে তাদের হেলিকপ্টারগুলো।
তবে বিদেশে যাতায়াতে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া করা চার্টার্ড ফ্লাইটই ভরসা তাদের। যদিও সিকদার ও বেক্সিমকোর একটি করে এয়ারক্রাফট আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমতি পেয়েছে। এসব এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টারগুলোর দর মডেলভেদে পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত একেকটি কপ্টারের দাম ১০-২০ কোটি টাকা হয়ে থাকে। তবে এয়ারক্রাফটগুলোর দাম আরও বেশি।
চার্টার্ড ফ্লাইট বা বিমান কি?
চার্টার্ড ফ্লাইট হলো- একটি নির্ধারিত ফ্লাইট যা কোনও নিয়মিত বিমান রুটের অংশ নয়। চার্টার্ড ফ্লাইটের সাহায্যে আপনি পুরো বিমানটি ভাড়া করতে পারেন এবং যাতায়াতের গন্তব্য এবং সময় নির্ধারণ করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরণের চার্টার্ড ফ্লাইট রয়েছে, যেমন- বেসরকারি চার্টার, ব্যক্তি মালিকানা, পারিবারিক, সাধারণ চার্টার্ড।
যেহেতু চার্টার্ড ফ্লাইট কোনও নির্ধারিত পরিষেবার অংশ নয়, আপনি যখন চাইবেন তখনই ফ্লাইটটি ছাড়বে। এতে আপনার পছন্দমত শহরে বা স্থানে উড়ে যেতে পারবেন, যখন খুশি তখন। চার্টার্ড ফ্লাইটগুলো বিশেষত ব্যক্তির সুবিধার্থেই, যখন তার কোনও শহরে ভ্রমণের প্রয়োজন হয়, যেখানে নির্ধারিত বিমান সংস্থার পরিষেবাতে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে একাধিক সংযোগ বা লেভারওভারের প্রয়োজন হতে পারে।
একটি ব্যক্তিগত ফ্লাইটের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো গোপনীয়তা। বাণিজ্যিক বিমানের বিপরীতে, যেখানে ভ্রমণকারীরা জনাকীর্ণ বিমানবন্দর দিয়ে চলাচল করে এবং একটি হস্তক্ষেপমূলক সুরক্ষা স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেখানে চার্টার্ড ফ্লাইটের যাত্রীরা এফবিও হিসাবে পরিচিত একটি ব্যক্তিগত সুবিধা থেকে ছেড়ে যায়। বেশিরভাগ বেসরকারি বিমানবন্দরে যাত্রীরা বিমান থেকে নেমেই তাদের গাড়িগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
চার্টার্ড ফ্লাইটে যাত্রীদের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ নয়। তারা একটা আরামদায়ক ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য তাদের পছন্দমতো একটি রেস্তোঁরা থেকে আহারের জন্য নিজের খাবার বা অর্ডার করতে পারেন। চার্টার্ড ফ্লাইটে বিভিন্ন ধরণের বিকল্প বিনোদন রয়েছে। এছাড়াও চার্টার্ড ফ্লাইটে রয়েছে আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন এমনকি স্যাটেলাইট টিভিসহ ফ্রি ওয়াইফাই, হাই এন্ড সাউন্ড বা বিনোদন সিস্টেম রয়েছে। তবে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটের সর্বাধিক সুবিধা হলো- এতে আপনি আপনার সঙ্গীকে বেছে নিতে পারবেন! এটা আপনাকে শিথিল করতে আরামদায়ক কেবিন সুবিধা দেয় বা গোপনীয় ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় গোপনীয়তাও দেয়।
এনএস/