জয়পুরহাটে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের তালিকা তৈরিতে ‘নয় ছয়’
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১:৪৭ এএম, ৩ জুন ২০২০ বুধবার
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর এককালীন আড়াই হাজার টাকা অনুদানের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের দুই নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষ ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যের বিরুদ্ধে তাদের পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রকিবুল হাসান তদন্ত করে তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সত্যতা পেয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অনুদানের তালিকায় তৈরিতে পরিচয়পত্রের সঙ্গে ব্যক্তির মিল নেই, ব্যক্তি ঠিক থাকলেও মুঠোফোন নম্বর অন্যদের, স্বাবলম্বী ব্যক্তি, পেশা পরিবর্তন , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি কর্মচারী, পুরুষ ও নারী ইউপি সদস্যের তাদের পরিবারে সদস্য ও আত্বীয় স্বজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সদর উপজেলার হানাইল গ্রামবাসীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর এককালীন আড়াই হাজার টাকা প্রদানের প্রকাশিত তালিকা দেখে তারা বিস্মিত হয়েছেন। ওই তালিকায় ওর্য়াডের পুরুষ সদস্য লোকমান ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পারভিনের পরিবারের সদস্য ও আত্বীয় স্বজনদের নাম রয়েছে।
১৬৩ নম্বর ক্রমিকে ইউপি সদস্য লোকমান হোসেনের ছেলে পলাশের নাম রয়েছে। তার পেশা কৃষক উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ভবঘুরে বলে জানিয়েছেন স্থানীরা। ১৯৪ নম্বর ক্রমিকে একরামুল ও ১৯৫ তে এসতামুলের নাম রয়েছে। তাদের পেশা কৃষক উল্লেখ করা হলেও তারা দু’জন ইউপি সদস্য লোকমান হোসেনের আপন ভাগিনা। তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
২১০ নম্বর ক্রমিকে মিঠু মিয়ার নাম রয়েছে। তার পেশা শ্রমিক উল্লেখ করা হলেও তিনি ওর্য়াডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পারভিনের স্বামী। ২৮৩ নম্বরে শ্রমিক পেশায় পাপ্পু নাম রয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তিনি নারী সদস্যের ছেলে। কৌশলে পাপ্পুর বাবার নাম আলম দেখানো হয়েছে। মুঠোফোন নম্বর ঠিক রয়েছে।
২৫৬ নম্বর ক্রমিকে আসমা নামের নারী সদস্য পারভিনের মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১৭৯ নম্বর ক্রমিকে মুনছুর নামের পাশে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবাকেন্দ্রর উদ্যোক্তার মুঠোফোন নম্বর রয়েছে। ১৩৩ নম্বর ক্রমিকে মোতারব হোসেন নাম রয়েছে। তার পেশা শ্রমিক উল্লেখ করা হলেও তিনি হানাইল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত স্টাফ।
এছাড়া ১৬৮ নম্বর ক্রমিকে মাহমুদা নাম রয়েছে। তাকে অতি দরিদ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনিও হানাইল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত স্টাফ। ১৬৭ নম্বর ক্রমিকে রফিকুলের নাম রয়েছে। ইউপি সদস্য লোকমান হোসেনের বিয়াইয়ের পরিবার। তাছাড়া তালিকায় অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য লোকমান হোসেন বলেন, ‘১০৬ জনের তালিকা দিয়েছি। ওই তালিকায় আমার ছেলের নাম রয়েছে। আমার ছেলে অটো চালক। এটাই আমার অপরাধ। আমার বিয়াই গরীব মানুষ। তাই তালিকায় তার ও পরিবারের সদস্য নাম দিয়েছি। তাদের অনুদান পাওয়ায় যোগ্যতা রয়েছে।’
সংরক্ষিত ইউপি সদস্য পারভিন বলেন, ‘যখন তালিকা হয়েছে তখন বুঝতে পারিনি। ত্রাণ দেবে এমন আশায় আমার ছেলের নাম দিয়েছি। আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে। এ কারণে তার নাম রয়েছে। আমার এক চাচির নামের পাশে আমার মুঠোফোন নম্বর রয়েছে। সেটি চাচির সম্মতিতে মুঠোফোন নম্বর দিয়েছি। আমার ছেলের নামের পাশে আমার সরকারি মুঠোফোন নম্বর দিয়েছিল। সেটি পরির্বতন করেছি। আমি নিজেও গরীব মানুষ। তারপরও তালিকায় নাম দিতে চাইনি। এটা ভুল হয়েছে।’
জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি অভিযোগটি তদন্ত করে তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সত্যতা পেয়েছি। তালিকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত দুই ব্যক্তির নাম রয়েছে। তাছাড়া ইউপির পুরুষ ও নারী সদস্য তাদের পরিবার ও আত্বীয় স্বজনদের নাম রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বম্বু ইউনিয়নের দুই নম্বর ওর্য়াডে প্রধানমন্ত্রীর এককালীন উপহার প্রদানের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে। আমরা তদন্ত করে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সত্যতা পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
ইউএনও জানান, ‘সদর উপজেলা ও পৌরসভাসহ ১৪ হাজার ৭৩২ জনের তালিকা করা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর এককালীন উপহারের টাকা পেয়েছেন।’
এআই//