ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

তিনমাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত শিক্ষা কর্মকর্তা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৪২ পিএম, ৪ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়।

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়।

প্রায় তিনমাস ধরে দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন তার নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজসহ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোর দাপ্তরিক কাজ। 

এদিকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি নিয়মিত তার বেতন বোনাস উত্তোলন করছেন। তার বিরুদ্ধে রেজুলেশনসহ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও অজ্ঞাত কারণে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। 

তার অবর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বিল আটকে থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা তার স্বাক্ষর দিয়ে বেতন বিল করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তারা বলছেন, সই করার জন্য মাঝে মধ্যে কিছু সময়ের জন্য অফিসে আসেন তিনি।

গত রোববার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা পাঁচদিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, তার অফিস এখনও তালাবদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অফিসেই আসেন না, যদিও এর আগের মাসে একবার বা দুবার আসতেন। এভাবেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক মনিটরিং টিমের কার্যক্রমে তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। 

এদিকে, তার অবর্তমানে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন উপজেলা একাডেমিক কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী। এর ফলে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক স্কুল-কলেজগুলোতে দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যে তথ্য চাওয়া হচ্ছে, সেগুলো পাঠাতে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

তবে অফিসের বাহিরে সেই দপ্তরে কর্মরত একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘লকডাউন চলায় অফিস বন্ধ ছিল। তাই স্যারকে পাবেন কিভাবে। করোনায় কয়েকদিন তিনি আসেননি, তবে সম্প্রতি বিল বেতন সই করার জন্য এসেছিলেন তারপরে চলে গেছেন।’ 

শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরেই বিল বেতন হচ্ছে জানিয়ে তার অফিস করা বা হাজির হওয়া নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী আশরাফুল আলম।

এ ব্যাপারে জানতে হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে (০১৭৩৮১৮৫৪৩৪) কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হাকিমপুর উপজেলা একাডেমিক কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছেন দাপ্তরিক সকল কাজ সম্পাদন করার জন্য। সে মোতাবেক আমি কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, ‘আমি তাকে বেশ কয়েকবার বলেছি কিন্তু তিনি কখনোই আসেননি। কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা কখনোই হয়নি। এ ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাকিমপুরে যোগদানের পর থেকেই নিয়মিত অফিস করতেন না। সম্প্রতি করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর অফিসেই আসেননি। এ বিষয়ে আমরা রেজুলেশন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জেলা মিটিংয়ে তার বিষয়টি উঠানো হয়েছে সেখানে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’  

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে যা সকলের জন্য প্রযোজ্য। তবে উনি সম্পূর্ণ অনপস্থিত তা ঠিক নয়, মাঝে মধ্যে আসেন আবার আসেন না। তার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মহলে বেশ কয়েকবার লিখেছি। কর্তৃপক্ষ কি পদক্ষেপ নেয় সে মোতাবেক তার বিরুদ্ধে পব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এআই/এনএস/