কারফিউ উপেক্ষা করে মার্কিনীদের বিক্ষোভ অব্যাহত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৪৮ পিএম, ৭ জুন ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৭:৫৩ পিএম, ৭ জুন ২০২০ রবিবার
ট্রাম্পকে ‘বর্ণবাদি’ ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প ন্যাশনাল ডোরাল’র সামনে বিক্ষোভ করছেন মার্কিনীরা- এপি
পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে কারফিউ উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে শনিবারও দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহরে ওই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। খবর এএফপি ও আলজাজিরা’র।
শনিবারও রাজধানী ওয়াশিংটনসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচি থেকে বর্ণবাদ, বৈষম্য ও পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে আন্দোলনকারীরা। রাজধানী ওয়াশিংটনে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। শহরটির ইতিহাসে এটি ছিল স্মরণকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীদের চাপে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রাজপথ। দোকানপাট বন্ধ রাখেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। উত্তাল বিক্ষোভের মুখে হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। হোয়াইট হাউসমুখী সব পথ বন্ধ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। রাজপথে নেমে আসা আন্দোলনকারীদের স্বাগত জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার। তিনি বলেন, ‘এই বিশাল জনসমাবেশ ট্রাম্পকে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।’
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকে ১২ দিন চলা বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে শনিবারই সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয়। কারফিউ ভেঙে জর্জ ফ্লয়েডের নিজ শহর নর্থ ক্যারোলিনা ছাড়াও বড় বড় শহরে বিশাল প্রতিবাদসভা হয়েছে। আমেরিকায় প্রতিবছর পুলিশের হাতে মারা যায় এক হাজার ২০০ জন। কিন্তু ৯৯ শতাংশ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয় না। মিনেসোটায় পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর গোটা আমেরিকাজুড়ে যে ব্যাপক প্রতিবাদ ও দাঙ্গা হয়েছে, তাতে গণদাবির মুখে এবার পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে রাজধানী শহরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে অ্যাক্টিভিস্টদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন থেকে সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শহরটির মেয়র। নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একইসঙ্গে বিপুল সামরিক উপস্থিতিকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মেয়র মুরিয়েল বাউজার।
ওয়াশিংটন ছাড়াও নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলস ও সান ফ্রান্সিসকো-র মতো বড় শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’, ‘জর্জ ফ্লয়েড’, ‘আমাদের ঘাড় থেকে তোমাদের হাঁটু সরাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। জর্জ ফ্লয়েডের জন্মস্থান নর্থ ক্যারোলিনায় তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় আন্দোলনকারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বর্ণবাদবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীরা ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ ছাড়াও দেশটিতে আদিবাসীদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তনের দাবি জানান। যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারিভাবে জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হলেও ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে বিপুল সংখ্যক মানুষ। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সেন্ট্রাল লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ার এলাকা।
ফ্লয়েডের আইনজীবী বেঞ্জামিন ক্রাম্প বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বর্ণবাদজনিত মহামারির বলি হয়েছেন তার মক্কেল। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী রেভ আল শার্পটন বলেন, ফ্লয়েডের এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সব কৃষ্ণাঙ্গকেই প্রতিধ্বনিত করছে।’ তার ভাষায়, ফ্লয়েডের সঙ্গে যা হয়েছে তা এদেশে প্রতিদিন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ আমেরিকান জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ঘটে। এখন আমাদের উঠে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। করোনা মহামারিতে ফ্লয়েড জীবন হারাননি। এটি অন্য এক মহামারি। বর্ণবাদ ও বৈষম্যের মহামারি তার জীবন কেড়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বেঞ্জামিন ক্রাম্প।
উল্লেখ্য, গেল ২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশি হেফাজতে হত্যার শিকার হন জর্জ ফ্লয়েড। এই পুলিশ অফিসার জর্জ ফ্লয়েডকে মাটিতে ফেলে তার হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরেছিল ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড।
এমএস/এসি