দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৩৬ পিএম, ৮ জুন ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৪:০৫ পিএম, ৮ জুন ২০২০ সোমবার
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সম্প্রতি পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার লক্ষে গোপন টেন্ডারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালের যে কোন টেন্ডার দীর্ঘদিন থেকে গোপন করে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার অভিযোগ অনেক পুরানো বলে জানা গেছে।
করোনা সংকটে জর্জরিত জাতির এই ক্রান্তিকালে চিকিৎসাসেবা লকডাউন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলেশনে থেকে দুনীর্তি, অনিয়ম আর গোপন টেন্ডার চালিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের পথ্য, ধূপি ও ষ্টেশনারী ঠিকাদারী কাজ গোপনে সম্পন্ন করার লক্ষে বিজ্ঞাপন গোপন করে টেন্ডারকার্য সম্পন্ন করার অপকৌশল ফাঁস হয়েছে। ফলে টেন্ডার কাজে অংশগ্রহণে বঞ্চিত ঠিকাদারদের তোপের মুখে পড়েন কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: জাকিরুল ইসলাম লেলিন।
গত ২৮ মে দরপত্র দাখিলের শেষ দিনে অন্যান্য ঠিকাদাররা খবর পেয়ে তত্বাবধায়কের কার্য্যালয় ঘেরাও করে। এসময় ঠিকাদারদের এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা তত্ববধায়কের কার্য্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হন। কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপন প্রকাশ করা হয়েছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি অকপটে স্বীকার করেন বহুল প্রচারিত নয় এমন দুটি পত্রিকা নাম। দৈনিক এশিয়ার বানী ও দৈনিক মুসলিম নিউজ। পত্রিকা দুটি দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতেও ব্যর্থ হন এবং বলেন, করোনার কারণে পত্রিকা দুটি কুড়িগ্রামে আসেনি। তবে, আদৌ বিজ্ঞাপনটি কোনও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কি না তানিয়ে শংসয় রয়েছে।
টেন্ডার সিন্ডকেটের মূল হোতা, হাসপাতালের হিসার রক্ষক আশরাফ মজিদ জানান, বিজ্ঞাপনটি দৈনিক এশিয়ার বানী ও দৈনিক মুসলিম নিউজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে তা অদ্যাবধি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছায়নি।
অভিযোগ, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল জেলাবাসীর চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা তো দূরের কথা, উল্টো হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিনামূল্যের ওষুধ রোগীদের কিনতে হয় অতিরিক্ত মূল্যে। হাসপাতালে কম্বল, মশারি, চাদর ও বালিশের কভার দেয়ার নিয়ম থাকলেও সব রোগী সেগুলো পায় না। অন্যদিকে, অসাধু উপায়ে হাসপাতালের ঠিকাদারী কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেই ঠিকাদারী করেন হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ। হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি করে কোটি কোটি হাতিয়ে নিচ্ছেন হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট। কুড়িগ্রাম শহরে বিশাল অট্রালিকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ। প্রকাশ্যে অনিয়ম করে হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের কোটি কোটি টাকার কাজ প্রতিবছর পাচ্ছেন একই ঠিকাদার। তদন্ত করলেই বেরিয়ে পড়বে থলের বিড়াল।
অভিযোগে আরো জানা য়ায়, করোনা সংকটের আগে হাসপাতালে আউটসোর্সিং-এর ঠিকাদারী কাজে দরপত্র দাখিল সম্পন্ন হয়। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সিদ্ধান্ত না দিলেও তড়িঘড়ি করে গত সপ্তাহে চূড়ান্ত ঠিকাদার নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেরণ করা হয়। সেখানেও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টেন্ডার শর্তবালীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক সলভেন্সী, সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার সনদ ও কেন্দ্রীয় সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্য হওয়া বাধত্যমূলক। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে ভূয়া সনদ দেখিয়ে চূড়ান্ত ঠিকাদার হিসেবে স্বরলিপী সিকিউরিটি সার্ভিসিং প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করে জোরালো তদবির করছেন।
অন্যদিকে, দরপত্রের সকল শর্তবলী পূরণ করে আল ফারাহ সিকিউরিটি সার্ভিস টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলেও তাকে দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে রাখা হয়েছে। লিখিত অভিযোগে জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আল ফারাহ সিকিউরিটি সির্ভিস লিমিডেটের স্থানীয় প্রতিনিধি মো: নূরুজামান অভিযোগ করেন, স্বরলিপী সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড-এর অভিজ্ঞতার সনদ, ব্যাংক সলভেন্সী, কেন্দ্রীয় সিকিউরিটি সার্ভিসের সদস্যের ভূয়া সনদ জমা দিয়েছে। স্বরলিপীর দেয়া সনদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই করলে তা ভূয়া প্রমাণিত হবে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির একের পর এক আলামত রীতিমত উদ্বেগজনক। যা সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অবস্থানকে মারাত্বকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বার বার একটি সিন্ডিকেটকে ঠিকাদারী কাজে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসলেও অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজরা থাকছে বহাল তবিয়তে। প্রকাশ্যে অনিয়ম, ঠিকাদারদের বিক্ষোভ, তত্বাবধায়কের কার্য্যালয় ঘেরাও করার পরেও অভিযুক্তরা এবারো যদি দায়মুক্তি পায়, তাহলে স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি কেবল সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে পড়বে। ব্যবসায়ীক লাভালাভের বিবেচনার কাছে চিকিৎসা প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন, অনেকে মারা যাবেন বিনা চিকিৎসায়।
এসব অনিয়মের ব্যাপারে জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: জাকিরুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারদের সাথে একটু সমস্যা হয়েছিল সেটা সমাধান হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির কথা তুললেই তিনি বলেন, সিষ্টেমটি দীর্ঘদিনের যা আমি রাতারাতি ঠিক করতে পারবো না। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন। একটু পরেই তত্ত্বাবধায়কের টেন্ডার সিন্ডিকেট বাহিনীর লোকজন সাংবাদিকদের নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
এনএস/