ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

মাথায় পানি ঢালতেই ‘বেঁচে উঠল’ ছেলেটি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২৮ পিএম, ৮ জুন ২০২০ সোমবার

মুগদা হাসপাতালের লনে পড়ে থাকা সেই তরুণ ও সুস্থ হওয়ার চিত্র।

মুগদা হাসপাতালের লনে পড়ে থাকা সেই তরুণ ও সুস্থ হওয়ার চিত্র।

বড় বোনকে নিয়ে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করতে আসেন বাবুবাজারের চা বিক্রেতা আল আমীন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বোনটি তাকে রেখে চলে যায়। এরপর তীব্র রৌদ্রে গরম আর ক্ষুধায় সংজ্ঞা হারিয়ে হাসপাতালের বাইরে পড়ে থাকেন আল আমীন।
 
এভাবে পড়ে থাকতে দেখে মৃত মনে করে তার কাছেও আসেনি কেউ। তবে এগিয়ে আসেন দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদ। ওই তরুণের সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে থাকার ছবিটিও তুলেছেন তিনিই। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় পানি ঢালেন তিনি। পানি ঢালতেই জ্ঞান ফিরে পান আল-আমীন। এরপর তাকে পানি পান করান ওই সাংবাদিক।

তার পানি পান করানো ও মাথায় পানি ঢালার ছবি দুটি তোলেন কালের কণ্ঠের স্পোর্টস ফটো-সাংবাদিক মীর ফরিদ। যা আজ সোমবার রীতিমত ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। একই সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে তাকে পানি পান করানো ও মাথায় পানি ঢালার দুটি ছবিও। 

এদিকে, ঘটনার বিষয়ে ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদ বলেন, প্রতিদিনের মতো করোনা পরিস্থিতির ছবি নিতে মুগদা হাসপাতালে যাই। বেলা সোয়া ১১টার দিকে গিয়ে দেখি হাসপাতালের লনে এক তরুণ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। তিনি বলেন, ‘আমি ক্যামেরায় দুটি ক্লিক করেই দৌড়ে সেখানে যাই। পাশে বসে থাকা একজন বয়স্ক লোকের হাত থেকে পানির বোতল অনেকটা কেড়ে নিয়ে নিই। পরে ছেলেটাকে তুলে ধরে বসিয়ে মাথায় পানি দিই এবং পানি পান করাই।’

রুবেল রশীদ আরও বলেন, ‘আমি ওই বয়স্ক মানুষকে বলি- আপনারা এখানে আছেন, অথচ ছেলেটাকে একটু পানি দিলেন না। প্রায় একশ’র মতো লোক আশপাশে ছিল; কিন্তু কেউ ছেলেটির দিকে এগিয়ে আসেনি।’

এদিকে, ভাইরাল হওয়া এসব ছবিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনার পাশাপাশি একজন সাংবাদিকদের এমন মানবিক আচরণের ভূয়সী প্রশংসা করেন নেটিজেনরা। তাদের প্রশংসার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘সব কিছু ছাপিয়ে আমি একজন মানুষ। ওই ছেলেটা আমার ভাইও হতে পারতো। দায়িত্ববোধ থেকেই আমি কাজটি করেছি।’

রুবেল রশীদ বলেন, ছেলেটি আমাকে বলেছিলেন রোববার তার সঙ্গে তার বোন এসেছিল। কিন্তু দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করেও তার কোনো দেখা পাইনি।

অন্যদিকে, ভাইরাল হওয়া দুটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে তানিয়া ইসলাম তন্বী নামের একজন লিখেছেন, ‘মানুষের ভুলে ভাঙছে পৃথিবী, তবুও মানুষের পাশে দাঁড়ায় মানুষ।’

রবিউল ইসলাম খান মোনা নামে একজন লিখেছেন, ‘ছবিটি দেখে ফটোগ্রাফার সানা ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। হাইকোর্টের সামনে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মারছিল ভদ্রমহিলাকে; সানা ভাই উদ্ধার করছিলেন উনাকে। আজ দেখলাম আরেকজন ফটোগ্রাফারের সাহায্য করার ছবি; খুব ভাল লাগলো। প্রিন্সেস ডায়না মারা যাবার ছবি তোলার কারণে ফটোগ্রাফারের অনেক সমালোচনা হয়েছিল, সেটাও মনে পড়লো আজ।’

এনএস/