ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ইমিউনিটি বাড়াতে পুলিশের যোগব্যায়াম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪০ পিএম, ৯ জুন ২০২০ মঙ্গলবার

যোগ ব্যায়াম করছেন পুলিশ সদস্যরা।

যোগ ব্যায়াম করছেন পুলিশ সদস্যরা।

চলমান করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। ফলে এই ভাইরাসটির প্রকোপ থেকে বাঁচতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়াতে প্যারেডের পাশাপাশি এবার যোগ ব্যায়ামও করছে বাংলাদেশের পুলিশ। 

সোমবার (৮ জুন) এএফপির একটি প্রতিবেদনে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের খোলা চত্বরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ম্যাট বিছিয়ে নিঃশ্বাসের ব্যায়ামসহ নানা ধরনের যোগ ব্যায়াম করছেন পুলিশ সদস্যরা।

যে কোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা ও প্যারেড করার ব্যাপারে স্বাভাবিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভোরে উঠেই প্রতিটি ইউনিটের সদস্যরা শরীর চর্চা ও প্যারেড করতে মাঠে যান। এরপর যে যার কাজে যোগ দিয়ে থাকেন। তবে গত ৮ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটিসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। মে মাসের শেষে এই বিধিনিষেধ যদিও তুলে নেয়া হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পুলিশ সদস্যরা।

আর এ কারণে গত প্রায় তিন মাস পুলিশে নিয়মিত শরীর চর্চা ও প্যারেড বন্ধ ছিল। তবে এখন থেকে আবার নিয়মিত শরীর চর্চা ও প্যারেড শুরু করেছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এবার শরীর চর্চার সঙ্গে যোগব্যায়ামও শুরু করেছে পুলিশ। করোনা পরিস্থিতিতে ফিটনেস ও ইমিউনিটি বাড়াতে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের সদস্যরা গুলশানে তাদের অফিস কমপ্লেক্সের সামনে যোগব্যায়াম শুরু করে দিয়েছেন। এখন থেকে সপ্তাহে দু'দিন যোগব্যায়াম চলবে। কিছুদিনের মধ্যে ডিএমপির অন্যান্য পুলিশ বিভাগেও যোগব্যায়াম শুরু করবে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা পুলিশ ও বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটেও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শরীর চর্চা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে ইয়োগা ইনস্ট্রাক্টর শামা মাখিং সোমবার অন্তত ১০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে শ্বাসের ব্যায়ামসহ নানা ধরনের যোগ ব্যায়াম করান। তিনি বলেন, তাদের তো দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। ফলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে যোগব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। এই যোগব্যায়াম সেশনে অন্তত ১২০০ পুলিশ কর্মকর্তা অংশ নেবেন বলে রঞ্জন কুমার সাহা জানান।

এ বিষয়ে ডিএমপির একজন মুখপাত্র রঞ্জন কুমার সাহা এএফপিকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা ও নির্দেশনা ঠিক রাখতে রাস্তায় নেমে বড় ভূমিকা রাখছে পুলিশ। ফলে দায়িত্বরত অবস্থায় তাদের চাপমুক্ত রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, ঢাকার মতো জনবহুল শহরে মানুষের জন্য সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাটা অনেক কঠিন ব্যাপার। যা পুলিশ সদস্যদের জন্য বড় ধরনের চাপ। রঞ্জন কুমার সাহা বলেন, বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধিতে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এই যোগব্যায়াম তারই একটি অংশ।

ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের ডিসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে খোলা পরিবেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শরীর চর্চা কার্যক্রম চালানো কঠিন। তাই অফিস কম্পাউণ্ডে ও ঘরে বসেই যাতে শারীরিক কসরতের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়, সেই লক্ষ্যে ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশন যোগব্যায়াম শুরু করেছে। বেসরকারি একটি সংস্থা থেকে ইন্সট্রাক্টর এনে ফোর্সদের যোগব্যায়াম করানো হচ্ছে। যদি দেখা যায় ফোর্সরা এতে উপকৃত হচ্ছে, তাহলে এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।

ডিএমপির ডিসি (ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সদস্যদের শরীর চর্চা ও প্যারেড কার্যত বন্ধ ছিল। এক সপ্তাহ ধরে রাজারবাগে পুনরায় তা শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন শরীর চর্চা ও প্যারেড করতে হয় পুলিশ সদস্যদের। সপ্তাহে এক দিন মাস্টার প্যারেড করার নিয়ম। শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য শরীর চর্চা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ফিট থাকার জন্য এটা জরুরি। করোনাকালে পুলিশ সদস্যদের শরীর ও মন চাঙ্গা রাখতে ডিএমপিও যোগব্যায়াম চালু করার চিন্তাভাবনা করছে।'

শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, 'দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সামাজিক দূরত্ব বজায়সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলার পুলিশ লাইনে শরীর চর্চা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া খেলাধুলাও শুরু করেছেন পুলিশের সদস্যরা। পুলিশ লাইন্স ছাড়াও থানা পুলিশের সদস্যদের নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

এদিকে, সরকারি হিসাবে ইতিমধ্যে ৬ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৯ জন। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই আক্রান্ত অন্তত সাড়ে ১৮শ, এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন।

অন্যদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩০ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৭৩৫ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৫০৪ জন। 

এই আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৬০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছে ৬৫৭ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।

এনএস/