ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

২২২ বছর পর বাতিল হওয়ার শঙ্কায় হজ্জ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:১৬ পিএম, ১০ জুন ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৫:১৭ পিএম, ১০ জুন ২০২০ বুধবার

হজ্জ মুসলিম উম্মাহের জন্য একটি অন্যতম ইবাদতের নাম। প্রতি বছরই বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমান আল্লাহর ঘরে গিয়ে নিজেকে ইবাদতে মশগুল করেন। বিশ্ব এখন করোনার থাবায় আক্রান্ত, সৌদি আরবেও হানা দিয়ে অনেক প্রাণ ঝরিয়েছে এই করোনা। বাদ নেই হজ্জের স্থান পবিত্র কাবা ঘরও। ইতিমধ্যে এর প্রভাব পড়েছে ওমরাহ হজ্জেও। আর মূল হজ্জ মৌসুম আসন্ন হলেও ২২২ বছর পর ফের তা বাতিল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে এবার। 

এর আগে ১৭৯৮ সালে ইতিহাসে প্রথমবার হজ্জ স্থগিত করা হয়েছিল। এবারের হজ্জ পালনেও এখন পর্যন্ত রয়েছে অনিশ্চয়তা। করোনার গতি-প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে এ বছর হজ্জ হবে কি হবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সৌদি সরকার হজ্জের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে -এমনটাই আশা করছে বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি বলছেন, এ নিয়ে অন্য কোনো দেশের করণীয় কিছু নেই। তবে হজ্জ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য বিকল্প ভেবে নিবন্ধনসহ কিছু মৌলিক কাজ এগিয়ে রেখেছে ঢাকা। দফায় দফায় সময় বাড়ানো এবং মানুষকে আশ্বস্ত করার প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি মিলে ৬৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি পবিত্র হজ্জ পালনে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা নির্ধারিত অর্থ জমা করে রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন করেছেন। 

এদিকে, ২০২০ সালের জন্য বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে হজ সংক্রান্ত যে চুক্তি সাক্ষর করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশিদের হজ্জ কোটা ১০ হাজার বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ এ বছর ১ লক্ষ ৩৭ হাজার বাংলাদেশী হজ্জে যেতে পারবেন। 

অন্যদিকে, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ইন্দোনেশিয় নাগরিকদের এবারের হজ্জযাত্রা বাতিল করেছে দেশটির সরকার। পরিস্থিতি যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে সৌদি আরব হজ্জ নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়, এটিও একটি বড় বিষয়। পরিস্থিতি দেখে বাংলাদেশ সরকার পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ডেস্কের তথ্য মতে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জ পালনে আগ্রহী প্রত্যেকে ১ লাখ ৫১ হাজার ৯’শ ৯০ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে বাকী অর্থ জমা না দেয়ার আগাম নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদের দফায় দফায় সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অতিরিক্ত অর্থ জমা করলে সরকার কোনো দায় নেবে না। কোন এজেন্সি নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত দাবি করলে তাৎক্ষণিকভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতেও বলা হয়েছিল।

জানা যায়, প্রতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্জে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ-ক্যাটাগরিতে জন প্রতি চার লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আর বি-ক্যাটাগরিতে জন প্রতি খরচ পড়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা। অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর হজ্জে যাওয়ার ক্ষেত্রে জন প্রতি খরচ পড়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৮০ ভাগ মানুষই হজ্জে যাওয়ার জন্য ৮-১০ বছর ধরে অর্থ জমা করে থাকে। 

কিন্তু চলমান মহামারী বা দুর্যোগের কারণে এবারে যদি হজ্জ অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে এ বছর বাংলাদেশীদের বেঁচে যাবে প্রায় ৪৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এই অর্থ যদি চলমান সঙ্কট মোকাবেলায় অসহায়দের সাহায্যার্থে দান করা যায়, তাহলে সেটা কেমন হয়। 

এ বিষয়ে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, হজ্জ আর্থিক ও শারীরিকভাবে পালনীয় একটি ফরজ ইবাদাত। তবে দানের ক্ষেত্রে এটা একটা ভিন্ন বিষয়। এই মহামারি-দুর্যোগের কারণে হজ্জ যদি এ বছর না-ও হয়, তবে সেটা পরের বছর আদায় করে নিবে। এটা ফরজ হুকুম, যার আর্থিক সঙ্গতি আছে, তাকে এটা পালন করতেই হবে। অন্যদিকে, দানের বিষয়টা ব্যক্তিগত এবং এতেও রয়েছে বহু ফজিলত। 

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে, কোন অভাবীকে সাহায্যকরে বা কোন ঋণগ্রস্তকে ঋণমুক্ত করে অথবা কোন মুমূর্ষুকে প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসে, তাহলে এসব মহৎ মানবিক কাজের প্রতিদান বা পুরস্কার আল্লাহ অবশ্যই তাকে দিবেন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যার যার সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। 

এনএস/