আশির দশকের রোমান্টিক নায়ক নিখোঁজ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৫ পিএম, ১০ জুন ২০২০ বুধবার
অনেক তারকাই বলিউর থেকে বৃস্মৃত। কিন্তু তিনি হয়েছেন নিখোঁজ। অতীতের জনপ্রিয় নায়ক রাজকিরণ মেহতানির খোঁজ শুধু ইন্ডাস্ট্রিই নয়, কেউ-ই জানেন না কোথায়, কী অবস্থায় আছেন। মুম্বইয়ের এক সিন্ধি পরিবারে আশির দশকের জনপ্রিয় এই রোমান্টিক নায়কের জন্ম হয়েছিল। ১৯৪৯-এর ৫ ফেব্রুয়ারি। সারিকার বিপরীতে তার প্রথম অভিনয় ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কাগজ কি নাও’ ছবিতে।
তবে রাজকিরণ আশির দশকে খ্যাতির শীর্ষে এসেছিলেন। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘কর্জ’। ঋষি কপূর, টিনা মুনিম, সিমি গারেওয়ালের সঙ্গে এই ছবির আর এক তারকা ছিলেন রাজকিরণ। বক্স অফিসে সুপারহিট হয় ছবিটি।রাজকিরণ বলিউডে পরিচিতি পাওয়ার পরে নায়ক ও পার্শ্বনায়ক, দুই ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘অর্থ’, ‘বসেরা’, ‘ওয়ারিস’, ‘বোম্বাই কি মহারাজা’, ‘মান অভিমান’, ‘মনোকামনা’, ‘নজরানা প্যায়ার কা’, ‘পতিতা’, ‘সজন মেরে ম্যায়ঁ সজন কি’ এবং ‘ইয়ে ক্যায়সা ইনসাফ’।
কেরিয়ারে চলার পথে বেশির ভাগ ছবিতেই রোমান্টিক যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। ছিল দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় ছিল তাঁর এই ইমেজ খুবই। অবশ্য কিছু ছবিতে ছক ভেঙেছিলেন তিনি। নির্দয় স্বামীর ভূমিকায় ‘জাস্টিস চৌধুরী’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন। পরিস্থিতির চাপে তাঁকে সেরকম হতে হয়েছিল বিষয়টি পরে জানা যায়। সুরাসক্ত ব্যবসায়ীর ভূমিকায় ‘এক নয়া রিস্তা’ ছবিতে রাজকিরণ ছিলেন। এক যৌনকর্মীকে তিনি-ই আবার বিয়ে করেন। তাঁর অভিনীত চরিত্রদুটির আলাদা শেড ছিল এই দু’টি ছবিতেই। আশির দশকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা রাজকিরণের জীবনের পট আচমকাই পাল্টে যায় পরের দশকে। ছবিতে কাজের সুযোগ কমতে থাকে। বাধ্য হয়ে তিনি দূরদর্শনে অভিনয় করেন।
নব্বইয়ের দশকে তাঁকে দেখা গিয়েছিল শেখর সুমনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘রিপোর্টার’-এ। ‘কলিঙ্গ’ ছবির কাজ ১৯৯৬ সালে মাঝপথেই ছেড়ে দেন তিনি। তার পরে রাজকিরণের কিছু ছবি মুক্তি পেয়েছিল, যে গুলির শুটিং আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। পর্দায় রাজকিরণের শেষ আবির্ভাব এটাই ছিল। তিনি হারিয়ে যান পরের দশকে। মহেশ ভট্ট এক বার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ২০০০ সালে তিনি রাজকিরণের পরিজনদের কাছে তাঁর সন্ধান করেছিলেন। তার পরে নাকি তিনি জানতে পারেন মুম্বইয়ের বাইকুল্লায় এক উন্মাদআশ্রমে আছেন অভিনেতা!
রাজকিরণ চিকিৎসার পরে ফিরে এসেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি, কারণ মানসিক রোগের চিকিৎসা করিয়ে আসা অভিনেতাকে কাজ দিতে রাজি ছিল না বলিউড। এত ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করা রাজকিরণ কার্যত কোনও কাজই পাচ্ছিলেন না। যা সুযোগ পাচ্ছিলেন, তা ছিল তাঁর জনপ্রিয়তার তুলনায় নিতান্ত সামান্য। এর প্রভাব পড়তে থাকে তাঁর পারিবারিক জীবনেও। কেরিয়ারে ব্যর্থতার জেরে রাজের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী রূপার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। পর্দার রোমান্টিক নায়ক ডিপ্রেশনের শিকার হন। ঘরে বাইরে বিধ্বস্ত রাজ কিরণ যোগাযোগ করেন আমেরিকা প্রবাসী ভাই গোবিন্দ মেহতানির সঙ্গে। তিনি বন্দোবস্ত করার পরে মানসিক হতাশার চিকিৎসা করাতে পরিবারের সঙ্গে আমেরিকা পাড়ি দেন রাজ।
চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতে আমেরিকায় গিয়ে রাজ কিরণ কাজ করতেন ট্যাক্সিচালক হিসেবে। নিউ ইয়র্কে ক্যাব ড্রাইভার হিসেবে তাঁকে নাকি দেখাও গিয়েছিল। অভিনেত্রী দীপ্তি নাভাল সে কথা নিজের ফেসবুকে লেখেন। দীপ্তি জানান, দীর্ঘদিন রাজ কিরণের কোনও খবর না পেয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। সংশয় দূর করতে রাজের ভাই গোবিন্দের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি দীপ্তিকে জানান, রাজ সে সময়ে আটলান্টায় একটি অ্যাসাইলামে ছিলেন। নিজের চিকিৎসার খরচ জোগাতে সেখানেই কাজ করছেন। এর পর রাজকিরণের নাম ধীরে ধীরে বলিউডে প্রায় মুছেই যায়। প্রয়াত ঋষি কাপূরের দৌলতে আবার ভেসে ওঠে। ২০১১-য় তিনি নিউ ইয়র্কে গিয়ে ‘কর্জ’ ছবিতে তাঁর সহঅভিনেতা রাজ কিরণের খোঁজ করেন। গোবিন্দ মেহতানির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন ঋষি।
ঋষি জানান, গোবিন্দ তাঁকে বলেছেন, খারাপ সময় আমেরিকায় এসেও রাজের পিছু ছাড়েনি। সেখানেও আর্থিক সমস্যার সুরাহা হয়নি। এর ফলে তিক্ততার আগুনে যেন ঘি পড়ে। স্ত্রী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যান তাঁকে ছেড়ে। এরপরই আটলান্টার মানসিক চিকিৎসালয়ে জায়গা হয় রাজ কিরণের। রাজের বড় মেয়ে ঋষিকা, ঋষি কাপূরের এই দাবি নস্যাৎ করে দেন। তিনি বলেন, তাঁর বাবা হঠাৎই কোথাও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশ তাঁর সন্ধান করছে। পরিবারের তরফে গোয়েন্দাও নিয়োগ করা হয়েছে রাজের খোঁজে।
এর পর কেটে গিয়েছে নয় বছর। রাজ কিরণ ‘নিখোঁজ’ হয়েই আছেন। তাঁর দুই মেয়ে এখন বিবাহিত। রাজের স্ত্রী রূপাও দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছেন। শুধু রাজ কিরণের সন্ধান নেই। কোন দুঃখ তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন, ব্যর্থ নায়কের কাছ থেকে ইন্ডাস্ট্রি জানতে চায়নি।
এসইউএ/এসি