ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

যেভাবে করোনা জয় করলেন র‌্যাবের ১০৮ সদস্য

সৌরভ ইমাম

প্রকাশিত : ১০:৩৬ পিএম, ১০ জুন ২০২০ বুধবার

কঠোর নিয়ম মেনে আইসোলেশনের মাধ্যমে র‌্যাব-১১ সদস্যদেরকে নারায়ণগঞ্জেই চিকিৎসা দেয়ায় তাদের ১০৮ জন সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আদমজী র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ের চারতলায় ও শহরের পুরাতন কোর্ট ভবনস্থ ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশাল কোম্পানিতে আইসোলেশনের এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার একুশে টেলিভিশনকে এ তথ্য জানান।

করোনার শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জে লকডাউন নিশ্চিত করা, কর্মহীন মানুষকে খাদ্য বিতরণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানুষের সংস্পর্শে এসে র‍্যাব-১১ এর ১১৭ জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ১০৮ জন সদস্য সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন। বাকি ৯ জন সদস্য আদমজীনগরে র‍্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে আইসোলেশনে রয়েছেন। তাদের কোন উপাসর্গ নেই। চলতি সপ্তাহেই তাদের টেস্ট হবে এবং পরপর দুবার থেকে তিনবার টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই তারাও সুস্থ বলে ধরা হবে। এরপর তারা কাজে যোগদান করবেন।

ইতোমধ্যে ১০৮ জন করোনাজয়ী র‍্যাব সদস্যকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীস্থ র‍্যাব-১১ এর সদর দপ্তরের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠান করে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার। র‍্যাব সদস্যরা শুরু থেকেই মানসিকভাবে দৃঢ় ছিলেন এবং তাদের মনোবল অটুট ছিল। তারা সুস্থ হয়ে আগের চেয়ে আরও দ্বিগুণ গতিতে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন র‍্যাব সিও।

মূলত র‍্যাব-১১ এর আক্রান্ত সদস্যরা নিজস্ব আইসোলেশন ব্যবস্থায় থেকে সুস্থ হয়েছেন। শুধু বয়স্ক ও অধিক উপসর্গ থাকায় ৯ জনকে ঢাকায় সিএমএইচে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। তারা সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। বাকিদের ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরেই আইসোলেশনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

র‍্যাবের নিজস্ব আইসোলেশন ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত তুলে ধরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, শুধু অন্যান্য বাহিনী ও বিভিন্ন দপ্তরের সবাইকে নিজস্ব ব্যবস্থায় নিজেদের কর্মীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করতে পারার বার্তা দিতেই আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমাদের সদস্যদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছি। 

তিনি জানান, শুরু থেকেই কাজ করতে থাকা করোনা সংক্রমণ রুখতে র‍্যাবের ১১৭ সদস্যের কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সদস্যদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ভিড় হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল র‌্যাব-১১ এর ব্যারাক চতুর্থ তলার ওপর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১৪০ শয্যা ও ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশাল কোম্পানিতে ২০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়। আক্রান্তরা সেখানেই চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখনও ৯ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। তবে তারা সবাই সুস্থ আছেন। 

তিনি আরও জানান, তাদের রুম জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছিল। এছাড়া যারা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও খাবার বিতরণ করছে তাদের জন্য পিপিই দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন র‌্যাবের সদস্যদের সদর দপ্তরের মেডিকেল অফিসার, সিএমএইচ, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন চিকিৎসা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের জেনারেল দ্বারা জারি করা করোনা ট্রেটমেন্ট প্রোটোকল অনুসারে অক্সিজেন সিলিন্ডা, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, পোর্টেবল ইসিজি মেশিন, ২৪ ঘণ্টা জরুরি রোগী বহনের জন্য অক্সিজেন সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সসহ যাবতীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে।

তিনি বলেন, আইসোলেশনে থাকাদের ডিসপোজেবল প্লাস্টিকের পাত্রে তাদের তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ফল, লেবু, আদা, লবঙ্গ, কালোজিরা ও প্রতিদিন চা দেওয়া হয়। একইভাবে তাদের সুরক্ষায় দৈনিক ব্যবহারের জন্য ফেস মাস্ক, পিভিসি হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ন্যাপকিন দেয়া হয়। তাদের জন্য আলাদা প্রার্থনা কর্নার, গরম পানির বাথরুম, বৈদ্যুতিক কেটলি, টিভি ও সংবাদপত্র দেওয়া হতো। এখনও আইসোলেশনে থাকা ৯ জনকে এসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। 

এমবি//