আবারও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থমন্ত্রী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:২৪ পিএম, ১১ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:১৫ পিএম, ১১ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার
দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ভাগ্যটাই যেন কেমন! বরাবরই কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাকে। তিনিও চ্যালেঞ্জন নিতে ভালোবাসেন। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মত বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন। প্রথমবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো বাজেট উপস্থাপন করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। কারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন তিনি। পরে তার অনুরোধে বাজেট পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার অর্থমন্ত্রী পুরোপুরি সুস্থ আছেন। এমনটি নিশ্চিত করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ শাখা। কিন্তু সুস্থ থাকলেও তিনি এমন এক কঠিন মূহুর্তে দেশের বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছেন যখন করোনা নামের ভাইরাস পুরো অর্থনীতির চাকা অচল করে দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তিনিই বিকেলে জাতীয় সংসদে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন।’
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের বাজেট পেশ করার এক সপ্তাহে আগে অর্থমন্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে গত বছরের ১০ জুন তিনি ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন। ১২ জুন হাসপাতাল থেকে তিনি বাজেট অধিবেশনে যোগ দিয়ে পুনরায় হাসপাতালে ফিরে যান। ১৩ জুন বাজেট উপস্থাপনের জন্য সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ বাজেট উপস্থাপনের পর অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বাজেট পড়েন। এমনকি ১৪ জুন বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও অর্ধমন্ত্রী উপস্থিত থাকতে পারেননি। অর্থমন্ত্রীর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, অর্থমন্ত্রী হিসাবে এটি হবে তার হবে দ্বিতীয় বাজেট। এর আগে তিনি ২০১৯ সালের ১৩ জুন প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন।
এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। যা উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ রয়েছে। সেই সঙ্গে করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতেও কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয় আরও সংকুচিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয়ের অনিশ্চয়তার মধ্যেও বড় বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। এটি পাশ হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর। তবে এবারের বাজেট অধিবেশনও গতানুগতিক হচ্ছে না। সীমিত ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংসদ সদস্য অধিবেশনে যোগ দেবেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর যেদিন যাদের বক্তব্য থাকবে, সেদিন শুধু ঐ সংসদ সদস্যরাই বৈঠকে থাকবেন। করোনার সংক্রমণ এড়াতে সংসদ কক্ষে সদস্যদের আসন বিন্যাসেও সাময়িক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সংসদ ভবনে এবার দর্শনার্থীর প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও সংসদ ভবনে না গিয়ে সংসদ টিভি দেখে অধিবেশন কাভার করার অনুরোধ জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়। অর্থমন্ত্রীর বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনও ভার্চুয়াল করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি সংশোধিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয়ের বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই বড় অঙ্কের বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
করোনায় আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে টানা ৬৬ দিন সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে অধিকাংশ শিল্প, কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। এর ফলে এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়ে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। লকডাউন-পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য এখন সচল হলেও ভোগ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। এরই মধ্যে তাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
এসএ/