জীবন-জীবিকার মানোন্নয়নেই হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:২৬ পিএম, ১২ জুন ২০২০ শুক্রবার
জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়ন করেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছে স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান “উন্নয়ন অন্বেষণ”। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মহামারীতে রুপ নেয়া করোনা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী সরকার কর্তৃক সকল প্রকার অর্থনৈতিক কার্যাবলী বন্ধের ফলে অর্থনীতি যে মন্দায় পতিত হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারে ২০২০-২১ সালের নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার এবং নীতি-কৌশল নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে কতগুলো বিষয়ে ঐক্যমত্য লক্ষ্য করা গেছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি মধ্য মেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-কাঠামো, রাজস্ব ও মুদ্রানীতির সমন্বয়, প্রয়োজনে ১০ শতাংশের মতো বাজেট ঘাটতি নির্ধারণ এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষিখাতে অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে।
প্রবৃদ্ধি ও সঞ্চয় ও বিনিয়োগ
উন্নয়ন অন্বেষণের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে, এ বছর মোট দেশজ উৎপাদনের উচ্চ প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চেয়ে চলমান সঙ্কট থেকে অর্থনীতির পুনর্বাসন, পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়াই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্যাশিত। জিডিপি উৎপাদনশীল খাতের অবদান ৩১ শতাংশের ওপরে। করোনার কারণে এ অবদান ১২.৪ শতাংশ কম হবে। ফলে প্রবৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশ কমে যাবে। হিসাব বলছে, প্রবৃদ্ধির প্রক্রৃত হার ৪.৪ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রস্তাবিত ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অবাস্তব। প্রথমত, করোনাভাইরাস মহামারী এখনই সমাপ্তির পূর্বাভাস নেই। বরং সংক্রমণ বাড়ছে এবং এটি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আঘাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কাঙ্ক্ষিত জিডিপি অর্জনের জন্য অর্থনীতি বর্তমানের চেয়ে তিন শতাংশ দ্রুত হারে বৃদ্ধি করা দরকার যা কোনও দেশ অর্জন করতে পারেনি। তাছাড়া রেমিটেন্স আয় এবং পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয় করোনার কারণে অনেক কমে যাবে। তবে করোনাত্তর বিশ্বে এই দুটি খাতের আয় বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিকাঠামো ও বাজেট
সরকার কোভিড-১৯ মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও ব্যবসায়ের জন্য ঋণ সুবিধা তৈরি, চরম দরিদ্র ও অনানুষ্ঠানিক খাতের স্বল্প বেতনের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা জাল কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ এবং অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি— এ চারটি বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কৌশল নির্ধারণ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রকৃত পরিবর্তনের পরিমাণ ৭.৮% যা জিডিপির ০.৯% এবং বাজেটের ৫.১%। এছাড়া শিক্ষা ও প্রযুক্তির ২.৪% এবং সামাজিক সুরক্ষা বাজেটে ২.৫% পরিবর্তন থাকলেও জনসেবামূলক খাতে বরাদ্দ অপর্যাপ্তই রয়ে গেছে।
উন্নয়ন অন্বেষণ মনে করে, স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির অন্তত ৫-৬ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। পূর্ববর্তী বছরের মূল্যস্ফীতি সমন্বিত বরাদ্দের তুলনায় এ বছর সামাজিক সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ ৭৯০ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু এটি করোনার কারণে সৃষ্ট বিপুল সংখ্যক নতুন দারিদ্র্য এবং বেকারদের জন্য যথেষ্ট নয়। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে কেবলমাত্র ৩৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এসএমই এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা খুব বাধা হয়ে দাঁড়াবে। পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে না। আর্থিক খাতের দূর্দশা এবং কোভিড-১৯ থেকে উত্তরণে বাজেটে দিক নির্দেশনার ঘাটতি রয়েছে।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারঃ প্রকৃত খাতসমুহের অবস্থা - কৃষি
গত ছয় বছরে, কৃষিতে ভর্তুকি ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আটকে আছে। যার অর্থ- বাজেটের আকার বাড়ার সাথে সাথে প্রতি বছর অনুদানের অনুপাত হ্রাস পাচ্ছে। চাষাবাদে বৈচিত্র্য না থাকায় সমস্যা প্রকট হয়েছে। কৃষি এককেন্দ্রিক শস্য চাষাবাদে আটকে আছে। কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকির ঘাটতি রয়েছে। এ অর্থবছরে সরকার ভর্তুকিতে ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়েছে তবে বিশ্বব্যাপী মহামারীর মুখে এই বৃদ্ধি স্থিতিশীল খাদ্য সুরক্ষা তৈরি করতে যথেষ্ট নয়।
উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, কৃষি খাতে পর্যাপ্ত মনোযোগ না দেওয়া হলে আগামী দিনে খাদ্য সুরক্ষা মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। কৃষি খাতে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকার বর্ধিত বরাদ্দ রয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত ব্যয়ের চেয়ে ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বেশি। করোনাকালেও কৃষিতে বাজেটের মাত্রা জিডিপির ০.৯ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে কাঙ্খিত ফল আশা করা সম্ভব নয়।
শিল্প
উৎপাদন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়ায় পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙ্গে পড়েছে। পণ্যের এবং বাজারের বহুমুখীকরণ না থাকায় সমস্যা প্রকটরূপ ধারণ করেছে। এক শিল্পনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার কারণে করোনার অভিঘাত এখানে বেশি পড়েছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে পোশাক রফতানি হ্রাস পেয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪৮ কোটি মার্কিন ডলার। আনুমানিক সাড়ে ৩ মিলিয়ন বাংলাদেশি পোশাক খাতে কাজ করে এবং প্রায় এক মিলিয়ন শ্রমিককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবার জন্য বরাদ্দ ৩৯৪০ কোটি টাকা যা গেল অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ের পর ৪১০১ কোটি থাকা থেকে কিছু কম। এই বরাদ্দ হ্রাসে মহামারী মোকাবেলা করে উৎপাদনশীল খাতের পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন কঠিন হয়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগ বন্ধ হয়েছে। প্রায় ২৮ শতাংশের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যাংকগুলোর আরোপিত কঠিন শর্তের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্তরের উদ্যোক্তারা ঋণে সহজ প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন না। এছাড়াও ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপি এবং সরকারের ব্যাংকিংখাত থেকে অর্থ নেয়ায় এখন তারল্য সংকট রয়েছে।নারী উদ্যোক্তারা এসএমই খাতের সমস্ত ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ পাওয়ার কথা। তাছাড়া এবারের বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে।
সেবাখাত
সেবাখাত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধ হয়ে গেছে। নির্মাণ শিল্প, পরিবহন, পর্যটন, হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। উদাহরনস্বরূপ- পর্যটন এবং আতিথেয়তা শিল্পে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিযুক্ত অর্ধ মিলিয়ন মানুষ তাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। মহামারীজনিত কারণে এ খাতে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লোকসানের অনুমান করা হয়েছে। লকডাউনের কারণে পরিবহন খাতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ব্যাংক-বীমা করোনার আগেই ধুকছিল। এখন সরকার অর্থ নিলে আরও একবার তারল্য সংকটে পড়বে। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়বে। সেবাখাতের পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বাজেটে উপেক্ষিত থেকে গেছে। জনসেবা, পরিবহন ও যোগাযোগ ইত্যাদি সেবাখাতে পূর্বের তুলনায় বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে।
অবকাঠামো
বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে অন্যান্য দেশের চেয়ে অত্যধিক ব্যয় হয়। ১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের ব্যয় ২.৫ থেকে ১১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে ভারতে একই পরিমাণ রাস্তা নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ৩৫ হাজার ৯০০ থেকে ৪৫ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার, নেপালে ৬৩ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার, থাইল্যান্ডে ৫৯ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার এবং ভিয়েতনামে ৮৫ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। অত্যধিক ব্যয় কমানোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি। কোভিড-১৯ সংকটের সময় বিদ্যুতের চাহিদা আরও বেশি হ্রাস পেয়েছে এবং ফলস্বরূপ ক্যাপাসিটি চার্জ এ অর্থবছরে বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে দেয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ভর্তুকি ৮০০ কোটি টাকা বেড়েছে, যা আগের অর্থবছরে প্রদত্ত পরিমাণের দ্বিগুণ। ২০৩০ সালের মধ্যে, নতুন কয়লা এবং এলএনজি চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র যুক্ত হওয়ার কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি হবে।
প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, অর্থবছরের প্রথমদিকে উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয়ের ধীর গতি এবং শেষদিকের হঠাৎ উল্লম্ফন প্রশ্ন উদ্রেককারী।
দারিদ্র্য ও অসমতা
লকডাউনের কারণে আয় কমে যাওয়ায় বা বন্ধ থাকায় ৪৩.৫ শতাংশ পরিবার আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার চেয়ে কম আয় করবে। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতিতে, ৪৭.৪৩ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পদ্ধতিগতভাবে অর্থনীতি পুনরায় সচল করতে পারলে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা ৩৯.৪৩ শতাংশে নেমে আসবে। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী দেশে ফেরত আসলে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। করোনাভাইরাস প্রকট অসমতা আরও উন্মোচিত করেছে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গিনি সহগ ০.৩২ থেকে বেড়ে ০.৫০ এবং পা’মা রেশিও ২.৯৩ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ১ শতাংশ হ্রাসে বেকারত্বের ০.৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটবে। সুতরাং, জিডিপি হ্রাসের কারণে বেকারত্বের হার ৩ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। যার ফলে মানুষের আয় কমে যাবে। ইতিমধ্যেই সেবাখাতের কর্মীদের বেতন ৩১.২% হ্রাস হয়েছে। গ্ণপরিবহন এবং আবাসিক পরিষেবা কর্মীদের বেতন হ্রাস যথাক্রমে ৪৬.৩% এবং ১৬.৫%।
সার্বজনীন প্রাথমিক প্রয়োজন
স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি প্রতি নিজস্ব খরচ (ওওপি) এখনও খুব বেশি এবং ওওপি হ্রাস করার জন্য কোনও নির্দেশনা বা বিশেষ কোনও কর্মসূচী নেই। বাংলাদেশে ওওপি ৬৭% যা ভারতে ৬২%, পাকিস্তানে ৫৬%, নেপালে ৪৭%, ভুটানে ২৫% এবং মালদ্বীপে ১৮%। স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু সরকারি ব্যয় বাংলাদেশে সবচেয়ে কম ৮৮ মার্কিন ডলার, পাকিস্থানে এটি ১২৯, ভারতে ২৬৯, শ্রীলঙ্কায় ৩৬৯ এবং মালদ্বীপে ২০০০ মার্কিন ডলার। করোনার কারনে স্বাস্থ্য খাতে নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশায় সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগী কেউই সেবা পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ একেবারে সামান্য বেড়ে গতবারের বাজেটের ৪.৯ থেকে এবার ৫.১ শতাংশ হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন ব্যয় ৫.৮% স্থিতিশীল রয়ে গেছে যদিও পরিচালন ব্যয় গত অর্থবছরের ৪.৩% থেকে বেড়ে ৪.৭% হয়েছে।
শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে ৮৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হিয়েছে যা বাজেটের ১৫.১ শতাংশ। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে জিডিপির ২.৭% বরাদ্দ। শিক্ষা বৃদ্ধি, গবেষণা, নাগরিকত্ব বোধ সৃষ্টিতে ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী অন্তত জিডিপির ৬ শতাংশের কাছাকাছি বরাদ্দ রাখা দরকার রয়েছে। শিক্ষার গুণগত উন্নয়নের বদলে অবকাঠামো ও পরিচালনই ব্যয় বেশি। উপরন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকোচনের কারণে অনেকেই ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন বাস্তবতার কারণে শিক্ষক। ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টারনেট ও আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনতে এবরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষায় সকলের সমান সুযোগ নেই। যাদের আয় বেশি তারাই সুযোগ পাচ্ছে। অন্যরা পিছিয়ে পড়ছে। বাজেটে এস্কল বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেনি। সামাজিক সুরক্ষা নেট খাতে বাজেটের বরাদ্দ বেড়ে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা যা জিডিপির ৩.০১%। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত কর্মসূচীগুলো সার্বজনীন নয়। নতুন সৃষ্টি হওয়া দারিদ্র্যকে টেনে ধরতে এ বরাদ্দ সম্ভব কিনা ‘তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নতুন সৃষ্ট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যোগ হলে এই কর্মসূচীগুলোর সুবিধাপ্রাপ্তদের (৯৬ লাখ সর্বসাকুল্যে) সংখ্যা অনেক কম।
অর্থায়ন
ব্যাংকিং খাত থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছে। পূর্বেই তারল্য সংকটে থাকা ব্যাকিং খাতের অবস্থা আরও নাজুক হবে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। জনপ্রশাসন খাতে উচ্চ বরাদ্দ (১৯.৯%) এর একটি উদাহরণ। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পদায়ন ও পদোন্নতি বজায়মান রয়েছে। কর ফাঁকি, কর জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।ট্রান্সফার প্রাসিং সেলের অকার্যকারিতার কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে অনেক কর আদায় সম্ভব হচ্ছে না। দেশে কর্মরত বিদেশী শ্রমকিদের কাছ থেকেও অনেক কর আদায় করা যেত। এগুলো না করে ইন্টারনেট, মোবাইল রিচার্জ, অনলাইন কেনাকাটার ওপর ঢালাও হারে কর আরোপ করায় স্বল্প আয়ের মানুষদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এনএস/