ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের কাছে অসহায় অধিদপ্তরও!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৪৯ পিএম, ১৩ জুন ২০২০ শনিবার

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদের টেন্ডার দুর্নীতি, বদলি স্থগিতসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। একাধিকবার তার বদলির আদেশ স্থাগিত নিয়েও রয়েছে নানান রটনা। 

এ বিষয়ে একাধিকবার পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও আশরাফ মজিদ কুড়িগ্রাম জেলারেল হাসপাতালে রয়েছেন দাপটের সাথে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও আশরাফ মজিদের বিষয়ে অসহায়। 

চলতি বছরে মার্চ মাসে আশরাফ মজিদের প্রশাসনিক বদলি হয় রাজশাহী বিভাগের পুটিয়া উপজেলায়। অথচ সাত কর্ম দিবসের মধ্যে যোগদানের কথা থাকলেও সাড়ে তিন মাসেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে বদলি স্থগিত করে এখনও স্ব-পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। 

গোপন সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত কমিটি কর্তৃক চলতি বছরের ১২ ফেব্রয়ারির সভায় সুপারিশ ক্রমে আশরাফ মজিদের বদলি নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে প্রশাসন পরিচালক ডা. মো. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রশাসনিক বদলির নির্দেশনা দেয়া হয়। আদেশের সাত কর্ম দিবসের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। অন্যথায় ৮ম কর্ম দিবসে হতে সরাসরি অব্যাহতি হবেন বলে জানানো হয়। 

বদলির চিঠি পাওয়ার পর আশরাফ মজিদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতা মোটা অংকের টাকার বিনিয়মে বদলি স্থগিত করেন বলে জানাযায়। 

অনুসন্ধানে এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, ‘কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সরকারের অর্থ অত্মসাৎ করে রাতারাতি কোটি টাকার ঊর্ধ্বে সম্পদের মালিক বনে গেছেন হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ। দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় অবস্থান করার সুবাদে আশরাফ মজিদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। আর এই সিন্ডিকেট চক্রে খোদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত রয়েছেন।

এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসপাতালে ওষুধ চুরি করে প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি ছাড়াও টেন্ডার জালিয়াতিসহ আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অনায়সে। 

সাম্প্রতিক সময়ে তত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলামের যোগসাজসে হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদ হাসপাতালে পথ্য, ধূপি, স্টেশনারি এবং নন-স্টেশনারি মালামাল সরবরাহের টেন্ডার গোপন করার চেষ্টা করলে স্থানীয় ঠিকাদারদের চাপের মুখে তা বাতিল করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২৯ জন ক্লিনার এবং সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের টেন্ডার গোপনে সম্পন্ন করা হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২০ জন ক্লিনার ও ৯ জন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নেবার অভিযোগও পাওয়া যায়। 

আশরাফ মজিদ হাসপাতালের কম্বল, মশারি, চাদর ও বালিশের কভার ধৌতসহ বিভিন্ন টেন্ডার গোপন করে তার পছন্দের ব্যক্তিকে ঠিকাদারী কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেই ঠিকাদারী করে আসছেন। হিসাব রক্ষক পদে থেকে নানা দুর্নীতি করে শহরে জমি ক্রয় করাসহ ৫তলা বিশিষ্ট কোটি টাকার অট্রালিকা তৈরি করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রায় ২৩ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়ে তার ছেলের চাকরি নিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

এছাড়াও আশরাফ মজিদ নিয়মিত মাদক গ্রহণ করেন বলে হাসপাতালের অনেক কর্মচারী-কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।

হিসাব রক্ষক আশরাফ মজিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্নীতির সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর রংপুর এবং ঢাকা থেকে একাধিকবার দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত শুরু হয় যা এখনো চলমান রয়েছে। 

এই বিষয়ে আশরাফ মজিদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিনের কুড়িগ্রাম সদর হাসপালের এই প্রাকটিস রাতারাতি দূর করা সম্ভব না। ঠিকাদারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে আমি একটি টেন্ডার বাতিল করেছি। আউটসোর্সিংয়ের জনবল নিয়োগের টেন্ডারটি নিয়েও নানান জটিলতা দূর কারার চেষ্টা চলছে।’

এআই//