নিঃশ্বাসকেই বিশ্বাস করুন!
মানিক মুনতাসির
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ১৩ জুন ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৯:৫৮ পিএম, ১৩ জুন ২০২০ শনিবার
মানিক মুনতাসির
"এক সেকেন্ডের নাই ভরসা। বন্ধ হবে রং তামাশা। চক্ষু মুদিলে, হায়রে দম ফুরাইলে"। এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় বাংলা গান। ৯০-এর দশকে হাইস্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খালি গলায় গানটি গেয়ে ৫০০ টাকা বকশিস পেয়েছিলাম হেড স্যারের কাছ থেকে। সেটা মনে আছে আজও।
আমার এক বন্ধু "বর্ণালী" রবীন্দ্র সংগীত আর দেশাত্ববোধক গান গাইতো। এখন সে কোথায় আছে, ঠিক জানি না। "আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি, নাচিবে ঘিড়ি ঘিড়ি, গাহিবে গান"। বর্ণালী এ গানটাও সে খুব গাইতো। আহা! সহচরী, সখি, বন্ধু-স্বজন, প্রিয়জন। কতদিন ধরি না হাত। চলি না পাশাপাশি। নাচি না এক সাথে। গাহি না গান! পৃথিবী থেকে এক রকম পালিয়ে আছি সবাই। এভাবে পালিয়ে বাঁচা যায় না। বুক ভরে শ্বাসও নেয়া যায় না। নিশ্চিন্তে কিছু খাওয়াও যায় না। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ বলছে- ঢাকার ৭০ ভাগ মানুষ ভালোভাবে ঘুমাতে পারছে না।
মূল গল্পঃ ১৯ মে রাত তিনটায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। এক অজানা আতঙ্কে। মাত্র দু'ঘন্টা আগে ঘুমিয়েছিলাম। জেগেই মনে হলো বুকটা ভার ভার লাগছে। বারান্দায় গিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করি। ব্যর্থ হই বার বার। চোখ দিয়ে অটো পানি বেরুচ্ছে। প্রায় আধা ঘণ্টা লাগে স্বাভাবিক হতে। ফ্লাস্ক থেকে চা খেলাম। গরম পানি খেলাম। বাথরুমে গিয়ে মুখ ধুলাম। বারান্দায় বসে থাকলাম গাছগুলোর সাথে অনেক্ষণ। ফজরের আযান শুনতে পেলাম। নামাজ পড়ে শুইলাম। কিন্তু ঘুম হলো না। কারণ আমি তখন কোভিড-১৯ পজিটিভ। বার বার মাকে মনে পড়ল। প্রায় ২২ বছর আগে হারানো বাবার কথা মনে পড়লো খুব। আর মনে হলো- এবার কি তাহলে বাবার কাছেই চলে যাচ্ছি। অবুঝ ছেলে দুটো এতিম হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে খুব কাঁদলাম। হালকা কাশিও ছিল।
ইতিমধ্যে আমার সহধর্মিণীরও ঘুম ভেঙে গেছে পাশের ঘরে। শব্দ পেলাম, ১১ মাস বয়সী ছোট ছেলের। আবার বুকটা হুহু করে উঠল। মনে হলো দম বন্ধ হয়ে আসছে। অতঃপর হালকা ব্যয়াম করলাম। আবার গরম পানি খেলাম। শ্বাসের ব্যয়াম করলাম। ততক্ষণে ছয়টা বেজে গেছে। পুবাকাশে সুর্য উঠতে শুরু করেছে। সেদিন সুর্যোদয় দেখলাম। সাতটার দিকে স্বাভাবিক হয়ে ঘুমালাম। আল্লাহ তুমি মহান। আমি বেঁচে আছি। অবাক লাগছে। শুকরিয়া হাজারো।
আজকের দুঃখগাঁথা: মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু ভাই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন আজ। আহা! নিয়তি। টগবগে ছেলেটা পুড়ে মারা গেল। মাত্র ক'মাস পরে নিজেও। তার স্ত্রী-র কথা ভাবতে পারছি না। বেঁচে থেকে তিনি কি করবেন। কিভাবে বাঁচবেন। তিনি কি আর কোনদিন স্বাভাবিক শ্বাস নিতে পারবেন। তবুও বাঁচতে হবে। মনকে বোঝাতে হবে। ফলে নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নাই- এ কথার ভিত্তি নাই। বাঁচতে হলে নিঃশ্বাসেই বিশ্বাস করুন।
আজও ৪৪ জন মারা গেছেন করোনায়। উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তারা তো হিসাবের খাতাতেই নেই। জীবনকে ভালোবাসুন। নিঃশ্বাস কে বিশ্বাস করুন।
জননেতা মোহাম্মদ নাসিম একজন আপাদমস্তক রাজনীতিক, হঠাৎ করেই তিনিও চলে গেলেন। বিতর্ক ছাড়া মানুষ নেই। ফলে আসুন, তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। হাসপাতালে গেলেন করোনা নিয়ে। মুক্তও হলেন, কিন্তু ফিরে এলেন না।
আমাদের যা করা উচিতঃ সুতরাং প্রকৃতিকে বাঁচান। প্রকৃতিই আপনাকে বাঁচতে সহায়তা করবে। করোনা কোন জীবাণু অস্ত্র কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে যদি তাই হয়! এরজন্য দায়ীকে নিশ্চয়ই প্রকৃতি কখনো ক্ষমা করবে না। মহাশক্তিধর! মানুষ আজ কতো অসহায়। ক্ষুদ্র এক জীবাণুর ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। তাও বাঁচাতে পারছে না নিজেকে। পুরো বিশ্ব-ই যেন ধরাশায়ী।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। বাজেট হয়ে গেল। এরই মধ্যে। কে কী পেল তার হিসাব করে লাভ নেই। আমি জানি এ বাজেটে আমার জন্য কিছু নেই। এখন টিকে থাকাই যুদ্ধ। বেঁচে থাকাও যুদ্ধ। তাই আসুন, নিজেকে প্রস্তুত করি। ইমিউনিটি গ্রো করি। হয় বাঁচবো, না হয় মরবো। এ কথাই সত্যি।
লেখক- সাংবাদিক।
এনএস/