ঢাকা, বুধবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৯ ১৪৩১

দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, গ্রেফতার ২ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:০৩ পিএম, ১৪ জুন ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৬:০৬ পিএম, ১৪ জুন ২০২০ রবিবার

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় মোবাইল সেট চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করার মামলার প্রধান আসামী ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামকে আটক করেছে র‌্যার। 

রবিবার ভোরে জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার গাজিরহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে  জিয়ারুল (৫৬) নামের একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার মূল আসামী মোতালেবকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

মোতালেবসহ অন্য আসামীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ। এদিকে মামলার ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে মামলাটি শনিবার দুপুরে ডিবি পুলিশের কাছে হন্তান্তর করা হয়। 
পরবর্তীতে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এদিকে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম নির্যাতিতদের সাথে দেখা করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

রবিবার দুপুরে র‌্যাব-১৩, ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী-১, দিনাজপুর এর একটি আভিযানিক দলের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট মামুন জহিরুলকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাব অধিনায়কের পক্ষ থেকে জানানো হয়,সেনগাঁও ইউনিয়নের মেম্বার এর মাধ্যমে জানা যায় চাঞ্চল্যকর মামলার শিশু নির্যাতনকারী সেনগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হরিপুর জামুন বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে ওই আসামীকে  পাওয়া না গেলে র‌্যাবের গোপন সূত্রে জানা যায় ঘটনার আসামী অন্যত্র পলাতক আছে। পরবর্তীতে র‌্যাব-১৩, ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী-১, দিনাজপুর এর একটি আভিযানিক দল শনিবার গভীর রাতে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানাধীন গাজীর হাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রধান আসামী জহিরুল ইসলাম গুড (৪৮) কে গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতারকৃত জহিরুল জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দেওধা গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামী দুই শিশুকে নির্যাতনের সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা র‌্যাবের নিকট প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের দেওধা গ্রামে নিজ বাড়ি  থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত জিয়াবুলকে।

গ্রেফারকৃত জিয়াবুল ইসলাম (৫৬) দেওধা গ্রামের প্রয়াত মেহেরাব আলীর ছেলে। সে ঐ মামলার ৬ নম্বর আসামী। ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান,তাদেরকেও গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য আসামীদেরকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এর আগে চুরির অপবাদে দুই শিশুকে বর্বরোচিত নির্যাতন করার অভিযোগে ইউপি সদস্যসহ তার সাত সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের দেওধা গ্রামে গত ২২ মে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার (৫ জুন) রাতে পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে নির্যাতনের শিকার সরিফা খাতুন।
 
মামলায় সেনগাঁও ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, মোতালেব আলীসহ আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে মোতালেব আলী তারই প্রতিবেশি গৃহবধূ সরিফা খাতুনকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে ওই গৃহবধূ সাড়া না দেওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে গত ২২ মে স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, মোতালেব আলীসহ আর ৭ জন মিলে গৃহবধুর ছেলে শিশু সুমন (১৩) ও তার ভাতিজা কমিরুল ইসলাম (১৬) কে আটক করে। এরপর তারা এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে।

সালিশে হাত-পা বেঁধে ওই দুই শিশুকে মারপিট করে ইউপি সদস্যসহ তার সহযোগীরা এবং মারধরের চিত্র ক্যামেরায় ধারণ করে। পরে ভিডিও চিত্র গৃহবধূ সরিফা খাতুনকে দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা মিলে সরিফা খাতুনকেও মারপিট ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পরে গৃহবধূর বাড়ি থেকে একটি গরু নিয়ে যায় তারা। পরে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে অভিযুক্তদের অতিদ্রুত গ্রেফতারের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয় স্থানীয়রা। 

এদিকে শনিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড.কেএম কামরুজ্জামন সেলিম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলমসহ ওই গ্রামে নির্মম নির্যাতনের শিকার সুমন ও কামরুলের বাড়িতে যান এবং ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশসহ তাদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।  
কেআই/