ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ভারত জুড়ে ফের লকডাউন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪০ পিএম, ১৪ জুন ২০২০ রবিবার

ভারতে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। পূর্বের দিনের রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে পরের দিন। আর সেই আবহেই গোটা ভারত জুড়ে মানুষের প্রশ্ন, তবে ফের কি লকডাউন ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র?

২৫ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত প্রায় পুরোদস্তুর লকডাউনের পর, গত ১ জুন থেকে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে, কনটেনমেন্ট জোনকে বাদ রেখে। কিন্তু যে ভাবে একটার পর একটা দেশকে টপকে ভারত সংক্রমিতের তালিকায় উপরে উঠে আসছে, তাতে উদ্বেগও বাড়ছে হু হু করে। এক দিকে লকডাউনে মানুষের জীবন জীবিকায় টান, অন্য দিকে আনলক পর্বে আরও দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। এই দুইয়ের মাঝে প্রবল টানাপড়েনের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলোকে। খবর আনন্দবাজারের

এই পরিস্থিতির মধ্যে আগামী মঙ্গল এবং বুধবার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আবার বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে কি নতুন করে লকডাউন জারির কোনও সম্ভাবনা থাকছে? সার্বিক না হলেও বিশেষ কোনও কোনও ক্ষেত্রে বা বিশেষ কোনও কোনও অঞ্চলে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে কি? এ প্রশ্নগুলো উঠছে।

এই নানান সম্ভাবনার পরিস্থিতিতে, জল্পনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া কিছু মেসেজ। গত কয়েক দিন ধরেই হোয়াটস্ অ্যাপ থেকে শুরু করে ফেসবুকের মতো নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি লকডাউন সংক্রান্ত ‘বার্তা’। কোথাও বলা হচ্ছে, ‘বাড়তে থাকা সংক্রমণ রুখতে আগের থেকে অনেক বেশি কড়া ভাবে করা হবে দেশ জোড়া লকডাউন। বন্ধ করে দেওয়া হবে বিশেষ ট্রেন এবং বিমান পরিষেবা।’

আবার কোনও মেসেজে লেখা, ‘১৫ জুন থেকে শুরু হচ্ছে লকডাউন-৫ বা পঞ্চম দফার লকডাউন। বাস-ট্রেন থেকে শুরু করে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বাজার দোকানও।’ গত শুক্রবার থেকে ভাইরাল হয়েছে এ রকমই আরও একটি বার্তা। সেখানে বলা হচ্ছে, ‘১৭ জুন থেকে ২২ জুনের মধ্যে ঘোষণা হতে চলেছে লকডাউন-৫। এ বার লকডাউন লাগু করার দায়িত্ব বর্তাতে পারে সেনা বা আধা সেনার হাতে।’

এই বার্তাগুলির সপক্ষে অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সিলমোহর দূরঅস্ত্, কোনও সরকারি নেতা বা কর্তার কথাতেও এমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। কিন্তু সরকারি কোনও বার্তা ছাড়াই বাদানলের মতো ছড়িয়ে পড়া এই বার্তাগুলো জনমানসে তৈরি করেছে আশঙ্কার মেঘ।

মহারাষ্ট্রে এই লকডাউন জল্পনা এতটাই লাগাম ছাড়া আকার ধারণ করে যে, খোদ উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অঅয়াকাউন্ট থেকে টুইট করেন। জানিয়ে দেন— মহারাষ্ট্র সরকার ফের কোনও লকডাউন ঘোষণার চিন্তাভাবনা করেনি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজ্যে ফের লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে এবং প্রচার করা হচ্ছে যে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি।”

মহারাষ্ট্রের মতোই এই জল্পনার শিকার তেলঙ্গনাও। সেখানেও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় লকডাউনের আশঙ্কা দানা বাধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানকার মুখ্যসচিব সোমেশ কুমার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রাজ্যের মানুষকে জানিয়েছেন যে গোটাটাই গুজব। এ রকম কোনও সিদ্ধান্ত তেলঙ্গনা সরকার নেয়নি। একই ভাবে তামিলনাড়ু সরকার এবং দিল্লি সরকারও ফের লকডাউনের সম্ভবনা খারিজ করে দিয়েছে।

একাধিক রাজ্য সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও সে রকম কোনও জোরাল প্রতিক্রিয়া মেলেনি এই জল্পনার বিরুদ্ধে। তবে ১০ জুন প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি)-র ফ্যাক্টচেক টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি টুইট করা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে বা ফেসবুকে ছড়ানো একটি বার্তা যেখানে বলা হচ্ছে যে ‘১৫ জুন থেকে ট্রেন এবং অন্তর্দেশিীয় বিমান পরিষেবা বন্ধ করা হবে’, সে রকম একটি বার্তাকে ফেক নিউজ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেই টুইটে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, শনিবার প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবার জন্য যে বৈঠক করেছিলেন, সেই বৈঠকেও ফের লকডাউন ঘোষণা করার প্রস্তাব নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।

নবান্নেরও এক কর্তা, যিনি করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নয়া দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, রবিবার ইঙ্গিত দেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ফের লকডাউনের ঘোষণা হওয়াটা প্রায় অসম্ভব। চার দফা লকডাউনের পরে দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি এমনিতেই থমকে গিয়েছে। সর্বোপরি, এক বার আনলক ঘোষণা করে ফের লকডাউন করার কোনও অর্থ নেই।”

তবে তাঁর মতো আরও কয়েক জন সরকারি কর্তার ধারণা, দিল্লি-মহারাষ্ট্র-সহ এ রাজ্যেও সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে আনলকের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারে সরকার। এক সরকারি কর্তা বলেন, ‘‘কনটেনমেন্ট জোনে পুরোপুরি লকডাউন এখনও কার্যকর। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বদল আসতে পারে কনটেনমেন্টের সংজ্ঞায়।”  অর্থাৎ প্রয়োজনে, যে এলাকায় বা রাজ্যের যে অংশে সংক্রমণ বেশি, সেখানে আনলকের নিয়মকানুনের শিথিলতা হ্রাস পেতে পারে; নতুন কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে— সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এসি