দেশে করোনার শততম দিন ও আমাদের সফলতা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩৭ এএম, ১৫ জুন ২০২০ সোমবার
বাংলাদেশে আজ করোনার শততম দিন। এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৫২০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে গতকালও মারা গেছেন ৩২ জন। ফলে মোট মৃত্যু এক হাজার ১৭১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ১৮ হাজার ৩৩১ জন। এটি সরকারি হিসাব।
কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যারা, করোনা সংকটে সংখ্যা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। হিসেব কষে দেখাতে চাচ্ছি বাংলাদেশে কতজন আক্রান্ত হওয়া যুক্তিযুক্ত, কতজনের মৃত্যু। অনেকেরই অভিযোগ, বাংলাদেশ সরকার করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না। বিপুল জনগোষ্ঠীর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যের প্রতি তীব্র অনাস্থা থাকায় এমন মনোভাব যেকোনো দেশেই তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
অভিযোগ রয়েছে, লক্ষণ থাকলেও অনেককেই পরীক্ষা করা হচ্ছে না, ফলে বাংলাদেশে প্রকৃত শনাক্তের সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। এইসব অভিযোগ সত্যিও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে। কিন্তু অনেকে এর পেছনে যুক্তি দাঁড় করাতে গিয়ে ইটালিসহ বিভিন্ন দেশের দিনপ্রতি আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ার সঙ্গে বাংলাদেশে আক্রান্তের ধীরগতির তুলনা করছেন। আসলে এই সংখ্যাগত তুলনাটাই ভুল।
পৃথিবীর একেক দেশে টেস্টের জন্য একেকরকম নীতি নেয়া হয়েছে। কোনো দেশ মৃদু লক্ষণ দেখা দিলেও অনেককেই টেস্ট করছে, যাকে অ্যাগ্রেসিভ টেস্ট বলা হচ্ছে। এর উদাহরণ জার্মানি। অন্য অনেক দেশের চেয়ে এজন্যই জার্মানিতে শনাক্তের সংখ্যাও বেশি, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা কম।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য তীব্র লক্ষণ দেখা না দিলে বেশিরভাগ মানুষকেই টেস্ট করছে না, বরং বাসায় সেল্ফ কোয়ারান্টিনে থাকতে উৎসাহিত করছে। ফলে দেশটিতে শনাক্তের সংখ্যা কম হলেও সে তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
কোনো দেশই লক্ষণ না থাকলেও তার সব নাগরিকের টেস্ট করাচ্ছে, এমনটা হচ্ছে না। সেটা যৌক্তিক না, বাস্তবও না।
স্বাস্থ্যসেবায় উন্নত দেশগুলোতেও টেস্টের সংখ্যা সমান নয়। ফলে যে যত বেশি টেস্ট করবে, সে তত ভালোভাবে করোনা ঠেকাতে পারবে, এটা সবসময় সত্যি নয়। ইটালিতে বয়স্ক লোকের সংখ্যা অনেক বেশি।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশটির ২২.৬ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মানুষের বয়স ছিল ৬৫ বছর বা তার ওপরে। আর করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি তো এই বয়সে বেশি, এটা এরই মধ্যে প্রমাণিত।
অন্যদিকে স্টাটিস্টা বলছে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৬৫ বা তার চেয়ে বয়স্ক মানুষের হার কেবল ৫.১৬ শতাংশ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগের এক ভাগ।
১৪শ শতকে ইউরোপে মহামারি আকার নিয়েছিল প্লেগ, যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত। প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল মহামারিতে।
ভেনিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে, বন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়লে যাত্রীদের নামানোর আগে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে। ৪০ সংখ্যাকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় কোয়ারানতা, আর অপেক্ষার সময়টিকে কোয়ারানতিনো। তখন থেকে সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় কাউকে আলাদা করে রাখাকে কোয়ারান্টিন বলা হয়।
ফলে পৃথিবীর কোন দেশে আসলে কতো সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত, এর সঠিক সংখ্যা কেউ জানে না। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সব আক্রান্তকে শনাক্ত করা গেলে মৃত্যু হার অনেক কমই হবে।
নিশ্চয়ই আমরা এতোদিনে জেনে গেছি, যারা বয়স্ক এবং তাদের মধ্যে যাদের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়বেটিস, হৃদরোগের মতো নানা জটিলতা রয়েছে, তারাই এই ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এখন পর্যন্ত দেশে মৃত্যুর গতি অন্যান্য দেশের তুলোনায় কমই বলা চলে। সে ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি সফলই বলা চলে। কিন্তু এতে আপ্লুত হওয়ার কোন করণ নেই। আমাদের সংখ্যায় ভয় পাওয়া চলবে না। সংখ্যার কারণে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। আমরা বরং নিয়মিত হাত ধুই, নাক-চোখ-মুখে হাত না দেই, কয়েকটা দিন মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলি। আর বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের তাদের কাজটা করতে দেই। এতে আমাদের সবার মঙ্গল।
এসএ/