ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

শ্যামপুরে মজুদ করা বালু লুটের অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৫৯ পিএম, ১৬ জুন ২০২০ মঙ্গলবার

রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুরে মজুদ করা বালু লুটের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাত থেকে নতুন ইজারাদার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্যানেল মেয়র-২ ও নগরের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রজব আলী জোরপূর্বক এই বালু বিক্রি করছেন। এর আগে গত ৮ জুন তার লোকজন আগের ইজারাদারকে বালু বিক্রি করতে বাধা দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগও দেয়া রয়েছে।

সাবেক ইজারাদারের বালুমহালের কেয়ারটেকার জনি ইসলাম বলেন, চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুরের ১২০ একরের বালুমহাল ১৪২৬ সালের জন্য লিজ পায় মেসার্স আমিন ট্রেডার্স। বালুমহাল ইজারা নেয়ার পর বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করে শ্যামপুর এলাকায় পদ্মার পাড়ে প্রায় ২০ একর ব্যক্তি মালিকানার জমি লিজ নিয়ে সেখানে মজুদ করা হয়। সেখান থেকে বালু বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বালু বিক্রি না হওয়ায় প্রচুর পরিমান বালু মজুদ থেকে যায়।

জনি ইসলাম বলেন, গত ৮ জুন এই বালুমহালটি জেলা প্রশাসন থেকে নতুন বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকায় ইজারা পান রাসিকের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ রজব আলীর প্রতিষ্ঠান মেসার্স রজব আলী ট্রেডার্স। যেদিন তারা ইজারা পায় সেদিন বিকেলে তাদের লোকজন আমাদের বালু বিক্রি করতে বাধা দেয়। এ নিয়ে কাটাখালি থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। এর পর সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর পর থেকে সেখানে বালু বিক্রি বন্ধ ছিল। কিন্তু সোমবার রাত ৮টার পর থেকে পুলিশের সহযোগিতায় নতুন ইজারাদারের লোকজন জোর পূর্বক ট্রাক নিয়ে গিয়ে বালু বিক্রি শুরু করে। মঙ্গলবার দিনেও তারা আমাদের মজুদ করা বালু বিক্রি করে। 

জনি আরও বলেন, মজুদ করা বালু সরকারি জমিতে আছে কিনা তা দেখতে গত ১০ জুন পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কর্মকর্তারা বালু ঘাট পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা মজুদ করা বালু মাপেন। তাদের মাপ অনুযায়ী সেখানে মজুদ রয়েছে এক কোটি ২ লাখ সেফটি বালু। যা মূল্য ৫ কোটি টাকার উপরে। বালুমহাল থেকে বালুগুলো উত্তোলন করে মজুদ করতে খবর হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বলে জানান তিনি।

বালুমহালের সাবেক ইজারাদার মেসার্স আমিন ট্রেডার্সের মালিক আজিজুল আলম বেন্টু বলেন, গত ১৩ এপ্রিল আমার ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই দিন থেকে বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে মজুদ করা বালু বিক্রি চলছিল। হটাৎ করে নতুন ইজারাদারের লোকজন আমার মজুদ করা বালু বিক্রিতে বাধা দেয়। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে পুলিশের সহযোগিতায় আমার বালু জোরপূর্বক বিক্রি করছে নতুন ইজারাদার। এ যেন মগেরমুল্লুক। এ নিয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

জোরপূর্বক বালু বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে নতুন ইজারাদার ও মেসার্স রজব আলী ট্রেডার্সের মালিক রজব আলী বলেন, সেখানে আগের ইাজারাদারের কোন বালু নেয়। যেগুলো আছে তা বালু ব্যবসায়ীদের। তারাই বালু বিক্রি করছে। আর ইজারাদার হিসেবে আমি টল নিচ্ছি বলে জানান তিনি।

জোরপুর্বক বালু বিক্রিতে সহযোগিতা করার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি কাটাখালি থানার ওসি জিল্লুর রহমান বলেন, গত ৮ জুন সেখানে শ্যামপুর বালুঘাটে দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। সেখানে যেন কোন অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে বালু বিক্রিতে বাধা বা জোরপুর্বক বালু বিক্রি করার বিষয়ে থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জনি ইসলাম বলেন, গত ৯ জুন তিনি নিজে থানায় উপস্থিত হয়েছে এসআই শফিউল্লাহ এর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়াও মতিহার জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ও সহকারি কমিশনারকে বিষয়টি মৌখিকভাবেও জানিয়েছেন ইজারাদার আজিজুল আলম বেন্টু।

আরকে//