করোনার জাল সার্টিফিকেটের জমজমাট ব্যবসা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩১ পিএম, ১৭ জুন ২০২০ বুধবার
বাংলাদেশে করোনার জাল সার্টিফিকেটের জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে জাল সার্টিফিকেটের সঙ্গে জড়িত এরকম কয়েকটি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এদের কাছ থেকে জাল সার্টিফিকেট ও ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
চাহিদা অনুযায়ী এই চক্রগুলো করোনা নেগেটিভ এবং পজেটিভ দুই ধরনের জাল সার্টিফিকেটই তৈরি করছে। তবে এর মধ্যে নেগেটিভ সার্টিফিকেটেরই চাহিদা বেশি।
জানা যায়, সাধারণ চিকিৎসার জন্য এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতে গেলেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়। এই সার্টিফিকেট ছাড়া রোগী ভর্তি তো দূরের কথা অনেক সময় চিকিৎসাই দিতে চায়না তারা। এছাড়া বাইরে কর্মস্থল, পোশাক কারখানা এবং ভ্রমণের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট অনেকটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আমাদের দেশে উপসর্গ ছাড়া করোনা টেস্ট করানো কঠিন। আবার তা সময় সাপেক্ষও বটে। আর এই সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল, করোনা টেস্টিং সেন্টারের সিল, চিকিৎসকের নাম, সাক্ষর এবং করোনা সার্টিফিকেটের স্টাইল জাল করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিচ্ছে।
এই প্রতারকচক্র শুধু নেগেটিভ নয়, পজেটিভ সার্টিফিকেটও দিচ্ছে। জানা যায়, এই পজেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ কেউ আবার অফিসে না গিয়ে বাসায় ছুটি কাটানোসহ নানা সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন। ঢাকা শহরে এইসব সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকায়।
ঢাকাসহ জেলা শহরের হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করেই এই চক্র সবচেয়ে বেশি তৎপর। তারা হাসপাতাল এলাকা থেকেই প্রধানত জাল সার্টিফিকেট ক্রেতাদের টার্গেট করে। এছাড়া পোশাক কারখানা এলাকায়ও তাদের তৎপরতা আছে।
ঢাকার র্যাব-৩ এর সদস্যরা সোমবার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে এইরকম একটি চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে করোনার বেশ কিছু জাল সার্টিফিকেট, দুটি কম্পিউটার, দুটি প্রিন্টার ও দুটি স্ক্যানার উদ্ধার করেছে র্যাব। ওই চক্রটি এরই মধ্যে করোনার দুই শতাধিক জাল সার্টিফিকেট বিক্রির কথা স্বীকার করেছে।
এর আগে ৬ জুন সাভার এলাকা থেকে আটক করা হয় দুইজনকে। তারা পোশাক শ্রমিকদের কাছে করোনা নেগেটিভ ও পজেটিভ সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলো।
পোশাক কারখানার শ্রমিকরা করোনা পজেটিভ হলে তাদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। কোয়ারেন্টিনের সময় তারা বেতন নাও পেতে পারেন এই ভয়ে কোনো কোনো পোশাক শ্রমিক প্রতারকদের কাছ থেকে জাল সার্টিফিকেট কেনেন। আবার করোনা হলে চাকরি হারানোর ভয়ও আছে, সেক্ষেত্রে নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে থাকেন এরা।
সাভারের একটি পোশাক কারখানায় করোনা নেগেটিভের কয়েকটি সার্টিফিকেট নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে তারা সাভার পুলিশকে জানায়। এরপর যারা সার্টিফিকেট নিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জাল সার্টিফিকেটের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পুলিশ আবু সাঈদ ও রাজু নামে দুইজনকে সাভারের গেন্ডা এলাকা থেকে আটক করে।
এদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, করোনা আক্রান্ত হলে কোনো কোনো পোশাক কারখানা ছুটির সাথে প্রণোদনাও দেয়। তাই কিছু পোশাক শ্রমিক সেই সুবিধা নিতে করোনা পজেটিভ জাল সার্টিফিকেট কেনেন। চক্রটি দুই ধরনের জাল সার্টিফিকেট বিক্রির কথাই স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে। তবে পোশাক কারখানা এলাকায় জাল সার্টিফিকেটের দাম কম, এখানে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে মার্চ মাসের দিকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাছে বিমানবন্দরে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ ছিলো। তখন জাল নয়, টাকার বিনিময়ে আসল সার্টিফিকেট বিক্রিরই অভিযোগ ওঠে। যাত্রীরা বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন এড়াতে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত অসাধু কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে সেই সার্টিাফিকেট নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এএইচ/