বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মঙ্গল কামনা আমার পরমব্রত
আব্দুর রহিম, নোবিপ্রবি
প্রকাশিত : ০৯:০৩ পিএম, ১৮ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:০৮ পিএম, ১৮ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবনের এক বছর পূর্তিতে নোবিপ্রবি পরিবারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মোঃ দিদার-উল-আলম। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।
বিবৃতিতে উপাচার্য বলেন, প্রশাসনিক কার্যক্রমের আমার অন্যতম সহযোগী সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ, অনুষদসমূহের ডিন, ইনস্টিটিউটসমূহের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর, দপ্তরসমূহের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষক সমিতি ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের শুভাকাঙ্খিবৃন্দ আমার স্বশ্রদ্ধ সালাম, শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও নিরন্তর ভালোবাসা জানবেন। বৈশ্বিক এ মহামারীর সময় সারাবিশ্বের মতো আমাদের প্রিয় স্বদেশ ‘বাংলাদেশ’ আজ গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি সৃষ্টির কর্তার অশেষ মেহের বাণিতে অচিরেই মানবজাতি এ অতিমারি থেকে মুক্তি পাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশবাসিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা প্রদানে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বর্ষপূর্তিতে (১২ জুন ২০২০) আপনারা আমার প্রতি যে সম্মান, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বহি:প্রকাশ করেছেন তাতে আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমার মেয়াদের একবছরপূর্তিতে আপনারা যে শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানিয়েছেন, হৃদয় নিংড়ানো প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন তাতে করে আমার কর্মস্পৃহা তথা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। এছাড়াও আপনাদের অভিভাবক হিসেবে শুরু থেকেই আপনারা আমাকে যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন তাতে আমি অনেক বেশি সম্মানিত ও অভিভূত। আমার সুপ্তসত্তা বলে, আপনাদের সহযোগীতা পেলে বিগত বছরের ন্যায় আগামীদিনগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামোগত সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নকে আরো উত্তরোত্তর ত্বরান্বিত করতে পারবো ইনশাল্লাহ্।
সবার ভালোবাসায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে কর্মব্যস্ত সময় পার করেছি। বুঝতে পারিনি এভাবে কখন একটি বছর পার করে দিলাম। মাঝখানে করোনা মহামারীতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর গতি কিছুটা শ্লথ হয়। এসময় স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে, কিন্তু বাকি নয় মাস সক্রিয়ভাবে আপনাদের সঙ্গে আন্তরিকারসহিত অতিবাহিত করলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে সবার সাথে সহযোগীতামূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটল রেখে একটি কর্মমুখর কার্যকরী অধ্যায় শেষ করলাম। চেষ্টা করেছি সবটুকু করার কতটুকু সবার মতো করতে পেরেছি তা জানিনা। তবে এ পথ পাড়ি দিতে আপনার আমাকে সম্মান ও মর্যাদার ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন তা কোনোদিন ভুলবার নয়।
প্রতিষ্ঠান প্রধান ও তার সহযোগী সহযোদ্ধাদের মাঝে পারস্পরিক এ সম্পর্ক একতরফাভাবে গড়ে উঠেনি একে অপরের প্রতি সম্মান, আস্থা ও বিশ্বাসকে সঙ্গী করে এটি সম্ভব হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি তৌফিক দেন এ সম্পর্ক আরো জোরদার ও ফলপ্রসু হবে। আমার বিশ্বাস আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, কারণ আমি সারাজীবনে জাগতিক হিংসা-প্রতিহিংসা, অর্থ-ক্ষমতা, লোভ- লালসার বশবর্তী হইনি। আমার জীবনে এ ক্ষতিকারক বৈশিষ্ট্যগুলো যেন ঠাঁই না পায় তার জন্য প্রতিনিয়ত আমি নিজের সঙ্গে নিজেই নিরন্তর যুদ্ধ করে চলেছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমি নিজেই, আমার পরমব্রত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মঙ্গলকামনা। নোবিপ্রবি পরিবারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দসহ সকলের এমনই পথ-পাথেয় ও কর্মব্রত হওয়া চাই। দর্শনশ্বাস্ত্রমতে, মানুষের কষ্ট তখনই বাড়ে যখন তারা নিজের স্বার্থটাই সর্বদা বড় করে দেখে।
এক সৃষ্টিকর্তার ওপর প্রগাঢ় বিশ্বাস রেখে জীবনের প্রত্যাশাগুলোকে সীমিত রেখে অসীম ধৈর্য্য নিয়ে প্রতিক্ষার ফল সবসময় মিষ্টি হয়। বলে রাখি, ইহজীবনের প্রতিটি মানবের এ নিদারুণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটাই মানবজীবনের চরম স্বার্থকতা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার মতো রাষ্ট্রীয় গুরুদায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত। বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য অনেক প্রশাসনিক পলিসি ও সিদ্ধান্ত তৎক্ষণাৎ নিতে হয়। জেনেশুনে কারো মন:কষ্ট হয় এমন কিছু করতে চাই না। কখনো কোনো সিদ্বান্তে ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি কষ্ট পান নিশ্চয় মনে করবেন এটি আমার স্বজ্ঞানে ও দূরদৃষ্টির ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণেই ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য’।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে প্রকৃতি ও জনপদের মাঝে যে বিপুল ও অমিত সম্ভাবনা লুকায়িত রয়েছে কেবলমাত্র আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল সৃষ্টির মাধ্যমেই তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন সম্ভব। বস্তুত এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আন্তরিক ইচ্ছায় ২০০১ সালে নোয়াখালীতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং যার আলোকে ঐ বছরের ৫ জুলাই সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা “নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১” জারি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২২ জুন, ২০০৬।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান প্রাগ্রসর বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন, এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞানচর্চা, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে, পঠন-পাঠন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণে বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। দক্ষিণ বাংলার অবহেলিত এই উপকূলীয় অঞ্চলের জীবনধারায় নতুন গতিবেগ সঞ্চার করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। একশ একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত নোবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পাঁচটি ফ্যাকাল্টি, দুইটি ইনস্টিটিউট ও ৩০ টি বিভাগ রয়েছে। প্রায় সাত হাজার দেশ সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত আছেন অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ৩৫০ জন শিক্ষক। আয়তন ও বয়সে ছোট হলেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন বদলে যাওয়া এক অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি জ্ঞান, গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানের নোবিপ্রবি এখানকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ গোটা দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ও এক আস্থার নাম। শুধু তাই নয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান ও গবেষণার সুনাম দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও ছড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা অবকাঠামোগতভাবে উন্নত, একাডেমিকভাবে আধুনিক ও গবেষণাবান্ধব করে গড়ে তুলতে দক্ষ হাতে পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আমি নিজেকে অনেক সম্মানিত মনে করি। দেশের এ ক্রান্তিকালেও বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনা ভাইরাসের’ পরীক্ষাগার স্থাপন করে এ বিশ্ববিদ্যালয় সারাদেশে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। কোবিড-১৯ পরীক্ষার অভিজ্ঞতা বিনিময় করে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে নোবিপ্রবি। আমাদের স্বার্থহীন কার্যদিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির পরিধি আরো বেগবান ও শাণিত করতে আমরা আরো সচেষ্ট থাকবো, এ আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়।
আসুন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে এ পরিবারের সদস্যরা একে অপরের প্রতি সোহার্দ্য ও হৃদ্যতার বন্ধন গড়ি। হিংসা-দ্বেষ প্রতিষ্ঠিত না করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রেখে ভবিষ্যত বিনির্মাণের সদয় প্রত্যাশা ব্যক্ত করি’। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরই নির্ভর করে আমাদের রুটিরুজি ও সাংসারিক ব্যয়নির্বাহ, সর্বোপরি আত্মমর্যাদা ও বেঁচে থাকার মাহাত্ম্য। এখানকার উপার্জন আমাদের প্রত্যেকের রক্তের সঙ্গে মিশছে। নোবিপ্রবি পরিবার একটি বড় প্রতিষ্ঠান যার সাথে আমাদের রক্তের বন্ধন, এ বন্ধন অটুট কিভাবে রাখতে হবে আমরা যেন সকলে তা জানি এবং মানি। একজন সহকর্মীকে টেনে নিচে নামাতে গিয়ে নিজেই যে আমরা নিচে নেমে যাই, এ ধ্রুব সত্যটুকু আমরা যেন মনে রাখি। পরিশেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি থেকে চরণ দুটি চরণ উদ্ধৃত করতে চাই, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান! মানুষের অধিকারে, বঞ্চিত করেছ যারে,সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান। যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে’।
আরকে//