ঢাকা, রবিবার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২১ ১৪৩১

লাদাখ সীমান্তে শক্তি বাড়াচ্ছে চীন-ভারত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৫৮ পিএম, ২০ জুন ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৬:১৮ পিএম, ২০ জুন ২০২০ শনিবার

লাদাখের সীমান্তে চীনা ও ভারতীয় সেনাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকায় সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে চীন ও ভারত। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস স্যাটেলাইট ছবির বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে চীনা সৈন্যদের সাথে সংঘাতের জেরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০ জন সদস্য মারা যাওয়ার পর প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেও নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছে ভারত। খবর বিবিসি, দ্যা গার্ডিয়ান ও দ্যা এক্সপ্রেস’র। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন ভারতের সীমান্তের ভেতরে কোনো বিদেশি সৈন্য নেই এবং ভারতের সীমানার ভেতরের কোন অংশের দখলও তারা হারায়নি। তবে হিমালয়ে বিরোধপূর্ণ সীমান্তে সংঘর্ষের পর কতজন সৈন্য হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি চীন। দুই দেশের মধ্যে সীমান্তের এই এলাকা ভালভাবে চিহ্ণিত নয়। এই গালওয়ান উপত্যকার আবহাওয়া অত্যন্ত বৈরি, সেই সাথে এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে। এলাকাটি যে কোনরকম ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকে, যা স্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ আরও কঠিন করে তোলে। পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দুই দেশ একে অপরের সেনাদের বিরুদ্ধে সীমান্তরেখা অতিক্রম করে সংঘর্ষে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ তুলেছে।

১৫ জুন অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত ও ৭৬ জন আহত হয়েছে। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় হিমালয়ের ১৪ হাজার মিটার উঁচুতে চীনা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, চীনেরও ৪৩ সেনা নিহত হয়েছে। তবে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত না করায় চীনা হতাহতের বিষয়টি অস্পষ্ট রয়ে গেছে। পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ৩৫ চীনা সেনা নিহতের কথা বলা হয়েছে। চীন আরও দশ ভারতীয় সেনাকে আটকের ১৮ জুন মুক্তি দিয়েছে।

গত সোমবার রাতের ওই সংঘর্ষে উভয় দেশের প্রায় ৬০০ জন জড়ায়। হাতাহাতির এই লড়াই চলে প্রায় ছয় ঘণ্টা। কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। উভয় পক্ষই লোহার রড, পাথর ও কাঁটাতার জড়ানো লাঠিকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, চীনা সেনারা তাদের ব্যাটনে কাঁটাতার জড়িয়ে নেয় অথবা সেগুলোতে পেরেক সাঁটে, যাতে কার্যকারিতা বাড়ে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস’র গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ওই সংঘাতের পরই সীমান্তে উভয় দেশই নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে। প্লানেট ল্যাবস প্রদত্ত স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভারতীয় ভূখণ্ডে ৩০-৪০ টি সামরিক যান অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে অবস্থান নিয়েছে। আর চীনা অংশে প্রায় ১০০টি অতিরিক্ত ট্রাক অবস্থান নিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির অনুমান অনুসারে, সীমান্তের ওই অংশে উপস্থিত চীনা সেনাদের সংখ্যা এক থেকে দেড় হাজার হতে পারে। সাধারণত ৫০০-৬০০ সেনা মোতায়েন থাকে। এছাড়া অন্যান্য সামরিক ইউনিট বিশেষ করে মেকানাইজড ডিভিশনকেও ডাকা হয়েছে। অবশ্য সীমান্তের কাছে যেসব চীনা তাঁবু সংঘাতে উসকানি হিসেবে কাজ করেছিল সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচার হওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন ভারতের সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পূর্ণ ইঙ্গিত' দেয়া হয়েছে, যেন তারা ভারতের সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, ‘পুরো দেশ চীনের পদক্ষেপের ফলে আহত ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে। ভারত শান্তি ও বন্ধুত্ব চায়, কিন্তু সার্বভৌমত্ব ধরে রাখা সর্বাগ্রে।’ মোদী দাবি করেন যে, সোমবারের সংঘর্ষের পর ভারতের সীমানার ভেতরে কেউ অবস্থান করছে না, আর ভারতের কোনো অংশ দখলও করা হয়নি।

ভারতীয় সেনাবাহিনী বিবিসির কাছে একটি ছবি পাঠিয়ে দাবি করেছে গালওয়ান ভ্যালির সংঘর্ষে চীন এই হাতে তৈরি লোহার রড অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে
ওদিকে চীনও জানিয়েছে যে তাদের হেফাজতে কোনো ভারতীয় সৈন্য নেই।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, চীনের হেফাজতে এই মুহূর্তে কোনো ভারতীয় সেনা নেই।’ তবে ভারতীয় সৈন্যদের আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করনেনি তিনি। ঝাও রিজিয়ান বলেন, ‘সোমবার দুই দেশের মধ্যে হওয়া সংঘাতের দায় ভারতের। চীন ভারতের সাথে সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং আশা করে যে ভারত দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেবে।’

ঐ অঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার না করার শর্তে দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৬ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির শর্ত মেনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

এদিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল রাকেশ কুমার সিং ভাদোরিয়া বলেছেন, ‘আমরা যেকোনও মূল্যে আমাদের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করব। আমরা যেকোনও পরিস্থিতির জবাব দিতে প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্রবাহিনী সবসময় প্রস্তুত এবং সতর্ক রয়েছে।’ শনিবার গণমাধ্যমে বিমানবাহিনীর প্রধানের ওই মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে।

উল্লেখ্য, উভয় দেশের ডি ফ্যাক্টো সীমান্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) অতিক্রমে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে চীন ও ভারত। সীমান্ত এলাকায় নিয়ে উভয় দেশের সীমান্ত বিরোধ দীর্ঘ দিনের। আকসাই চীন এলাকাকে জিনজিয়াং প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে আসছে বেইজিং। ১৯৬২ সালে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকা নিয়ে উভয় দেশ ভয়াবহ যুদ্ধে জড়ায়। এতে মৃত্যু হয়েছিল ২ হাজার জনের। 

এমএস/এসি